মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিয়ে দ্বিধায় শিক্ষক-অভিভাবকরা

সাকিব আবদুল্লাহ
প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২২, ০৫:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিয়ে দ্বিধায় শিক্ষক-অভিভাবকরা
ফাইল ছবি

'দীর্ঘদিন অনলাইনে ক্লাস করেছি। আসলে অনলাইন ক্লাস তো পুরোপুরি আসল ক্লাসের মতো হয় না। পড়া ভালোভাবে বোঝার জন্য বাসায় প্রাইভেট পড়েছি। এখন আবার স্কুলে গিয়ে ক্লাস হচ্ছে, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া লাগছে। পরীক্ষাও প্রায় চলে এসেছে। প্রিপারেশন ভালো না খারাপ এইটা নিয়ে কনফিউশনে আছি।’

এভাবেই ঢাকা মেইলকে নিজের ভাবনা জানালো ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমীন। তার মা সাহেলা শারমীন জানালেন, অনলাইন ক্লাস খুব ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। তবে একেবারে পড়ালেখা বন্ধ থাকার চেয়ে অনলাইনে পড়াশোনার টাচে ছিল- এটা মন্দের ভালো।


বিজ্ঞাপন


আগামী ১৫ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পুরোদমে ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এখন সপ্তাহে ভাগ ভাগ হয়ে ক্লাস চলছে। এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস হচ্ছে সপ্তাহে চার দিন করে। এর মধ্যে তত্ত্বীয় ক্লাসের পাশাপাশি ব্যবহারিক ক্লাসও চলছে। বেশিরভাগ স্কুলেই ব্যবহারিক ক্লাস ও খাতা এখনও সম্পন্ন হয়নি, দু'একটিতে ব্যবহারিক ক্লাস এখনও শুরুই হয়নি। এবার হচ্ছে না টেস্ট পরীক্ষাও। তাই শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি কেমন তা স্পষ্টভাবে বলতে পারছেন না শিক্ষকরা।

মানবণ্টনের ক্ষেত্রে অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের ওপর রাখা হয়েছে ৪৫ নম্বর। সুতরাং, শিক্ষার্থীদের সাধারণ পড়াশোনার পাশাপাশি অ্যাসাইনমেন্টও করে স্কুলগুলোতে জমা দিতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি কোচিং ও প্রাইভেটের চাপেও আছে তারা। অভিভাবকরা অ্যাসাইনমেন্টের মূল্যায়ন নিয়েও চিন্তিত। তারা ভাবছেন, বোর্ড পরীক্ষায় এত নম্বর স্কুলের হাতে রাখা হয়েছে। এই মূল্যায়ন ঠিকমতো না হলে শিক্ষার্থীদের পুরো শিক্ষাজীবনেই একটা বড় খামতি থেকে যাবে। 

সাজিয়া আফরিক কনক নামে এক অভিভাবক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তায় আছি। একে তো দীর্ঘদিন অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। এখন সিলেবাসে একটা বড় নম্বর রাখা হয়েছে স্কুলের হাতে। সেটা নিয়ে কী হয় না হয়, তাই ভাবছি। অনলাইনে অত ভালো পড়া তো হয়নি, কোচিং করাতে হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিভাবক আশঙ্কা প্রকাশ করে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ব্যবহারিক পরীক্ষা নিয়ে এমনি নানা কাহিনি হয় আমাদের দেশে। এগুলা সবাই জানে। এখন অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন নিয়েও ওইরকম হয় কি না তা চিন্তার বিষয়। এদিকে কর্তৃপক্ষের সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া উচিত।’


বিজ্ঞাপন


চলতি বছরের এসএসসিতে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় অথবা বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে না। যেসব বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে সেগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা, ভূগোল ও পরিবেশ, পৌরনীতি ও নাগরিকতা, অর্থনীতি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান এবং কৃষি শিক্ষা। আগামী জুনে পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে। এর আগে মে মাসে হবে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা।

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ ভুঁইয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর স্কুলে ক্লাস নিচ্ছি। নির্দেশনা মোতাবেক কোনো টেস্ট পরীক্ষা হচ্ছে না। জুনে এসএসসি, তার আগে মে মাসে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা হবে। এখন টেস্ট পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি কেমন তা নিখুঁতভাবে বলা কঠিন। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

এই শিক্ষক ঢাকা মেইলকে আরও বলেন, ‘ব্যবহারিকের ক্লাস ও খাতা এখনও সম্পন্ন হয়নি। তত্ত্বীয় ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে সেগুলোর কাজ চলছে। আশা করি প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষার আগেই ব্যবহারিকসংক্রান্ত বিষয়গুলোর কাজ আমরা শেষ করতে পারব।’

আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আবু বকর সিদ্দিক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে চার দিন করে ক্লাস হচ্ছে। তাদের প্রস্তুতির চেষ্টায় আমরা কোনো কমতি রাখছি না। প্রতিনিয়ত তাদের উৎসাহ দিচ্ছি।’

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ব্যবহারিক ক্লাস আমরা এখনও শুরু করিনি সেভাবে। তবে মে মাসে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষার আগেই এগুলো শেষ হয়ে যাবে।’

মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাফিজুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা ব্যবহারিক ক্লাস শুরু করেছি, কাজ বেশ এগিয়ে গেছে। ছাত্রছাত্রীরা অনেক অনলাইনে ক্লাস করেছে। সেখানে তারা পড়াশোনার সঙ্গেই ছিল, পড়া তো একেবারে বন্ধ ছিল না। আর যে কদিন বাকি আছে এসএসসির, এর মধ্যে চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ভালো হবে।’

এসএ/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর