অনেক শিক্ষার্থী আছে পড়াশোনায় ভালো, কিন্তু পরীক্ষা কাছে এলে কেন যেন ঘাবড়ে যায়। আবার কিছু শিক্ষার্থী ঘুম, খাওয়া বা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া পড়ার টেবিল থেকেই ওঠে না। এরপরও পরীক্ষায় খারাপ করে বসে। কেমন হয়— যদি কম পরিশ্রম করে ভালো রেজাল্টের আনন্দ উপভোগ করা যায়? হ্যাঁ, এটা সম্ভব। তবে তার জন্যে অনুসরণ করতে হবে কিছু কৌশল।
১. পরিকল্পনা তৈরি করুন। পরিকল্পনা ছাড়া আসলে কোনো কাজই সুন্দরভাবে শেষ হয় না। তাই যে নিয়মে পড়ালেখা করবেন তার একটি সাপ্তাহিক পরিকল্পনা করে নিন। ওই পরিকল্পনায় স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়, ধর্মীয় কাজ, খেলাধুলা ও পরিবারকে সময় দেয়ার বিষয়গুলো পড়ালেখার সময় থেকে বাদ দিন।
বিজ্ঞাপন
শেষ দিনটি হবে সাপ্তাহিক ছুটি। ওই দিনটি ছুটির মতো করেই কাটাবেন। ষষ্ঠ দিনে নতুন পড়া নয়, বরং আগের পড়াগুলোই রিভাইস করবেন।
২. পড়ার পরিবেশ নিশ্চিত করুন। পড়ার ঘরে পর্যাপ্ত আলো আছে কিনা বা খাতা, কলম, পানি নাগালের মধ্যে আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সিলেবাস বুঝে নিন। অনেকেই পড়াশোনা শুরু করে দেন সিলেবাস না দেখে। ফলে সময় নষ্ট হয়। তাই চেষ্টা করবেন সিলেবাস ভালো মতো বোঝার এবং পড়ার টেবিল থেকে চোখে পড়ে এমন জায়গায় পোস্টার আকারে টাঙিয়ে রাখার।
৪. বিষয়ভিত্তিক সময় নির্ধারণ। কোন বিষয় কতক্ষণ পড়বেন তার সময় নির্ধারণ করে নিন। মনোযোগের সঙ্গে যদি পড়েন, তাহলে দেখবেন কিছু বিষয় ৩০ মিনিটে আর কিছুতে ২০ মিনিটের বেশি সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রতিটি বিষয় শেষ করার পর ৫ মিনিটের বিরতি দিন। ওই সময়টুকুতে হাঁটাহাঁটি ও পানি পান করে নিতে পারেন। পড়ার সময়টাতে মোবাইল ব্যবহার, টিভি দেখা বা অযথা কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। এটাই মূল কাজ। পড়াশোনার বাইরে নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
৫. আত্মবিশ্বাসী হওয়া। এতো সমস্যা নিয়ে কি পড়ালেখা করা যায় বা পড়ালেখা দিয়ে কী হবে অথবা আমাকে দিয়ে কিছু হবে না— এই জাতীয় ভাবনা বাদ দিন। যদি অতীতে কোনো পরীক্ষায় খারাপ করে থাকেন, সেটি বেশি ভালো। কারণ, ব্যর্থতা-সাফল্যের চাবিকাঠি।
বিখ্যাত ব্যক্তিদের অনেকের জীবনীতে দেখবেন, শুরুতে বারবার ব্যর্থ হয়ে তারপরই সফল হয়েছেন। আবার প্রাথমিকের সেরা শিক্ষার্থীদের অনেককেই দেখবেন, জ্ঞানার্জানের মূলস্রোত থেকেই হারিয়ে গেছে। তাই পণ করুণ আপনি ভালো করবেন। সে অনুযায়ী পড়াশোনা করুন।
৬. নিজেকে অনুপ্রেরণা দিন। আল্লাহ মানুষকে রক্ত মাংস দিয়ে তৈরি করেছেন, কেউ কম্পিউটার নয়। তাই পড়ালেখায় আলসেমি আসবেই। এক্ষেত্রে
নিজেকে নিয়মিত এই বলে অনুপ্রেরণা দিন— সেরাটা করতে পারি বা না পারি, আমাকে শিখতেই হবে, ভবিষ্যতের জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করতেই হবে। দেখবেন এই মন্ত্রটা আপনাকে এনে দিয়েছে সেরাটাই।
৭. ক্লাস চলাকালীন সংক্ষিপ্ত নোট করুন। শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ কথা এবং আপনার কাছে যা কঠিন মনে হয়, শুধু সেটিই নোট করবেন। অনেকে নোট করার পেছনে এতই ব্যস্ত হয়ে পরে যে, শিক্ষকের মূল কথাটিই বুঝতে পারে না। বাসায় যখন পড়তে বসবেন, নোটটি সামনে রাখুন। এটি আপনাকে পড়া মুখস্ত করতে সহায়তা করবে।
৮. হোমওয়ার্ক ও গ্রুপ স্টাডি বাদ দেয়া যাবে না। যেদিনের হোমওয়ার্ক সেদিন শেষ, একইসঙ্গে গ্রুপ স্টাডি চালু রাখলে পড়ার ধারাবাহিকতা থাকবে, পরীক্ষার সিলেবাসও দ্রুত শেষ হবে।
৯. প্রয়োজন ঘুম ও ব্যায়াম। পড়ালেখায় এনার্জি পেতে পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত ব্যায়াম দুটিই গুরুত্বপূর্ণ।
১০. শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। কোনো বিষয়ে অজ্ঞতা বা দূর্বলতা থাকলে শিক্ষকের শরণাপন্ন হোন। শিক্ষক আপনাকে দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবেন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। ভালো রেজাল্ট প্রত্যাশীদের জন্যে যা গুরুত্বপূর্ণ।
তবে ভুলে গেলে চলবে না— সবকিছুর মূল লক্ষ্যই হলো পরীক্ষার খাতায় চমৎকারভাবে উপস্থাপন করে আসা। আর এটি যদি করতে ব্যর্থ হন, তবে সব পরিশ্রম বৃথা যাবে। কারণ, পরীক্ষক আপনার জানার চেয়ে খাতায় কীভাবে উপস্থাপন করেছেন তা দেখে নম্বর দেবেন। এ ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন:
ক. খাতাটি পেয়ে রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ তথ্যাদি পূরণ করে মার্জিন করে ফেলবেন।
খ. লুজ শিটে সময় না থাকলে মার্জিন করার প্রয়োজন নেই। শুধু ওপরে ও বাঁয়ে ভাঁজ করে নিন। তবে লুজ শিটের নম্বরটি মূল খাতার যথাস্থানে আগেভাগেই পূরণ করে নিন। পরে মনে থাকবে না।
গ. যতটুকু সম্ভব দ্রুত গতিতে লিখবেন। লেখা খারাপ হলে চিন্তার কিছু নেই। তবে বানান ভুল হচ্ছে কিনা মাথায় রাখবেন। কারণ, স্যাররা এতে খুব বিরক্ত হন। আর পরীক্ষক বিরক্ত মানে নম্বর কম।
ঘ. সব প্রশ্নের উত্তর করে আসবেন। সময় না থাকলে কম লিখবেন। না পারলে আন্দাজে কিছু একটা লিখবেন।
ঙ. টু দ্য পয়েন্টের উত্তরগুলো আগে দেবেন। যেমন ব্যাকরণের উত্তর, চিঠিপত্র, ছোট প্রশ্ন, টীকা। তারপর বর্ণনামূলক লেখা ভালো। তবে, সব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে উত্তর দেওয়া ভালো। এতে খাতা দেখা সহজ হয়। তাই পরীক্ষক খুশি। আর তিনি খুশি হলে নম্বর ভালো আসবে।
চ. চিঠি/দরখাস্ত লেখার সময় বাঁ পাশের পৃষ্ঠা থেকে শুরু করা উত্তম এবং দুই পৃষ্ঠায় শেষ করে দেবেন।
ছ. মার্জিনের বাইরে কোনো লেখা হবে না। প্রশ্নের নম্বর ও কত নম্বর প্রশ্নের উত্তর লিখছেন তাও না।
জ. সময়ের সঙ্গে মিল রেখে লিখুন। অনাবশ্যকভাবে পৃষ্ঠা ভরবেন না। কারণ, পৃষ্ঠা গুনে নম্বর হয় না।
ঝ. যথাসম্ভব কাটাকাটি করবেন না। এতে খাতার সৌন্দর্য নষ্ট হয়।
ঞ. টীকা লেখার সময় প্রথমে হালকা ভূমিকার মতো থাকবে এবং শেষে একটা সমাপনী থাকবে। মাঝখানে যা জানতে চেয়েছে তা অল্প করে লিখে দেবেন।
ট. এক কথায় যেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, তা সংক্ষেপেই লিখুন।
ঠ. ইংরেজি ও বাংলা রচনা শেষে লেখাই উত্তম। কারণ, তা সর্বাধিক নম্বর বহন করে।
ড. যেকোনো চিত্র পেনসিল দিয়ে আঁকবেন। ফ্রি-হ্যান্ডে আঁকাই উত্তম।
ঢ. বর্ণনামূলক প্রশ্নে পারলে ছক দিয়ে তথ্য উপস্থাপন করবেন।
ণ. ভুলক্রমে যদি কোনো পৃষ্ঠা রেখে পরবর্তী পৃষ্ঠায় লিখে ফেলেন, তবে ফাঁকা পৃষ্ঠায় একটা দাগ টেনে দেবেন।
ত. প্রতিটি নম্বরের জন্যে কত সময় পান, তা আগেই হিসাব করে রাখবেন এবং সেই পরিমাণ সময় তাতে ব্যয় করবেন। যদি বরাদ্দকৃত সময় কিছু বেঁচে যায়, তবে তা পরবর্তী কোনো প্রশ্নে ব্যবহার করতে পারেন।
থ. সাধারণ গণিতে উত্তর শেষ হলে রিভিশন দেবেন।
এম/এ