বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

শীতের আগমনেও অতিথি পাখি শূন্য রাবি ক্যাম্পাস

কামরুল হাসান অভি
প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

শীতের আগমনেও অতিথি পাখি শূন্য রাবি ক্যাম্পাস
ছবি: ঢাকা মেইল

পাখিদের অঘোষিত অভয়ারণ্য খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস। বছর জুড়ে নানা ধরনের রঙ বেরঙের পাখিদের কুজনে মুখরিত থাকে এই ক্যাম্পাস। শীত আসলেই পরিযায়ী পাখির আগমন ক্যাম্পাসে যোগ করে নতুনমাত্রা। প্রতিবছর শীত আসতে না আসতে নভেম্বরের শুরুতেই ক্যাম্পাসে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করে পরিযায়ী পাখি। কিন্তু এ বছর নভেম্বর শেষ হয়ে ডিসেম্বর গড়ালেও ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা খুবই কম বলে জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখিপ্রেমি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত উন্নয়নকেই দুষছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া, তাপসী রাবেয়া, রহমতুন্নেছা হলের পেছনের চামপঁচা পুকুর ভরাট করে শেখ হাসিনা হল নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিবছর পরিযায়ী পাখি এই পুকুরেই জলকেলি আর খুনসুটিতে মেতে উঠতো পুরো শীত জুড়ে। কিন্তু পুকুরটি ভরাট করায় পরিযায়ী পাখির আনাগোনা খুব একটা চোখে পড়ে না। ক্যাম্পাস থেকে পাখির সংখ্যাও দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এছাড়া শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পাশের পুকুরগুলোতেও পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। কিন্তু প্রতিবছর এসব পুকুরগুলোতে সুদূর সাইবেরিয়া বা হিমালয়ের উত্তরাঞ্চল থেকে ঝাঁকবেধে উড়ে আসত পরিযায়ী পাখি।


বিজ্ঞাপন


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব পরিযায়ী পাখি আসতো তাদের মধ্য অধিকাংশ পাখিই হাঁস জাতীয়। ছোট সরালিই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আসত। বাকিদের মধ্যে থাকত বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, ভূতি হাঁস ও ঝুঁটি হাঁস ইত্যাদি। এছাড়া আছে মানিক জোড়, ধলা মানিক জোড়। এ বছর পরিযায়ী পাখি কম আসায় দুঃখ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তারা বলছেন, পাখিদের অঘোষিত অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত এই ক্যাম্পাস দিন দিন তার চিরচেনা রুপ হারিয়ে ফেলছে। এর পেছনে তারা ক্যাম্পাসে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল সুউচ্চ বৃক্ষ নিধন, জলাশয় ভরাটসহ প্রশাসনের ভুল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে দায়ী করছেন। ক্যাম্পাসে পাখিদের কলোনি হিসেবে খ্যাত এমন কয়েকটি আবাসস্থল সম্প্রতি ভরাট করে চলছে বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। এছাড়া ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত হবিবুর রহমান হলের সামনের জলাশয় ও বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়ামের পেছনের বড় জলাশয়টি ভরাট করার ফলে গত বছর থেকে ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখিদেরও চোখে পরছে না।

তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী পপি রাজবংশী শ্রাবন্তী বলেন, সচরাচর যেই পরিমাণে অতিথি পাখি ক্যাম্পাসে আসে, সেই হিসেবে এবছরে খুবই কম এসেছে। প্রতিটি শীতের সকালে পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকতো পুকুরগুলো। পুকুরে দেখতাম শত শত পরিযায়ী পাখি। তাদের স্বচ্ছ পানিতে ডানা ঝাপটানি, পালকের ভেতরে মুখ গুঁজে মিষ্টি রোদ পোহানো আমাকে মুগ্ধ করত। কিন্তু নতুন করে হল নির্মাণ করতে পুকুর ভরাট করায় পরিযায়ী পাখিদের ভীষণ মিস করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশন নামের সংগঠনের রাবি ক্যাম্পাস এম্বাসাডর মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, এবছর অতিথি পাখিদের আনাগোনা খুবই কম। এই পাখিগুলো না আসার কারণ হলো এদেরকে বিরক্ত করতো কিছু বহিরাগতরা। প্রতিনিয়ত পুকুরের ঝোপের আশেপাশে বহিরাগতরা বসে বসে মাছ ধরে। পাখিদের এতো কাছে মানুষের উপস্থিতি থাকলে পাখিরা ভয়ে চলে যায়। এদের যথাযথ নিরাপদ বাসস্থান দেওয়া আমাদেরই দায়িত্ব।


বিজ্ঞাপন


বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, নিরাপদ আশ্রয় ও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখিরা আসত। কিন্তু এবার একটু ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করছি। ভবন নির্মাণের জন্য প্রতি মুহূর্তে এখানে শব্দ তৈরি হচ্ছে। লোকজনের অবাধ যাতায়াত চলছে। এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে তারা এখানে না এসে  বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস খ্যাত নারিকেলবাড়িয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে বহু অতিথি পাখি এসেছে।

পুকুর ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য আমরা নতুন দুইটি হল ও একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করছি। পুকুর ভরাট করা ছাড়া তো আমাদের কোনো উপায় নাই। অবকাঠামো উন্নয়ন আর পরিবেশের উন্নয়ন দু'টি বিপরীতমূখী। ফলে পুকুরটি ভরাট করতে হয়েছে।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর