বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রাবি ক্যাম্পাসে উঁকি দিয়েছে বিরল কালিপ্যাঁচা

কামরুল হাসান অভি
প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১০:৩০ এএম

শেয়ার করুন:

রাবি ক্যাম্পাসে উঁকি দিয়েছে বিরল কালিপ্যাঁচা
ছোট কালিপ্যাঁচা

২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর দেশের পাখি তালিকায় নতুন সংযোজন ঘটে বিরল এক বন্য প্যাঁচা প্রজাতি। নাম জঙ্গল আউলেট বা ছোট কালি প্যাঁচা। পাখিদের অঘোষিত অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্যারিস রোডে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম দেখা মেলে পাখিটির। কেবল রাবি ক্যাম্পাসে ছাড়া এখনো পর্যন্ত দেশের কোথাও দেখা যায়নি ক্ষুদ্রাকৃতির এই পাখিটি। পাখিটি ভারত ও শ্রীলঙ্কার সমভূমি, আর্দ্র অঞ্চল এবং জি রেডিয়াটাম শুষ্ক বনাঞ্চলে পাওয়া যায় বলে জানা যায়।

গবেষকরা বলছেন, পাখিটির দৈর্ঘ্য সাধারণত ২০ সে.মি. হয়ে থাকে। কালি প্যাঁচাটির গোলাকার মাথাটি সর্বত্র সূক্ষ্মভাবে বাধাযুক্ত। যার সমস্ত শরীরে ঘন বাদামি ডোরাকাটা রেখা আছে, পাখায় বাদামি রেখাগুলো সুনিপুণ চিত্রকলার মতো মনে হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলো অন্যান্য অনেক প্রজাতির প্যাঁচা থেকে একে আলাদা করেছে। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম (Glaucidium radiatum)। এরা ফড়িং, পঙ্গপাল এবং অন্যান্য বড় পোকামাকড়, মোলাস্কস, টিকটিকি, ইঁদুর ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে। পাখি গবেষকগরা ১৯৫১ সাল থেকে দেশে এর ডাক শোনার কথা বলে আসলেও পাখি ডাটাবেসে নথিভুক্ত হয় ২০২১ সালে।


বিজ্ঞাপন


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখি গবেষক অধ্যাপক ড. আমিনুজ্জামান মো. সালেহ রেজার প্রথমে নজরে পড়ে পাখিটি। এরপর খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট কালিপ্যাঁচার ছবি তুলতে রাবিতে আসতে থাকেন পাখিপ্রেমীরা। অধ্যাপক সালেহ রেজার প্রচেষ্টায় ছোট কালিপ্যাঁচা এরই মধ্যে বাংলাদেশের পাখিদের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক রেজা বলেন, ‘২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর সকালে রাবিতে হাঁটতে গিয়ে পাখিটির দেখা পাই। পাখিটি ছোট কালিপ্যাঁচা বলে মনে হয়েছিল। পরে পাখিটির ছবি তুলে ও ডাক সংগ্রহ করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং ইন্টারন্যাশনাল বার্ড ক্লাবের ওয়েবসাইটে পোস্ট করি। তারপর এই দুটি ক্লাব ও ভারতীয় বার্ড ক্লাব নিশ্চিত করে যে পাখিটি ছোট কালিপ্যাঁচাই। বাংলাদেশের পাখির তালিকায় প্রথম নাম উঠল পাখিটির, যা গর্বের বিষয়। পাখিটির ডাক পর্যালোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান এবং বার্ডস বাংলাদেশের পল থম্পসন ও সায়াম ইউ চৌধুরী।’

ru

অধ্যাপক সালেহ রেজা বলেন, ‘সারা বিশ্বে মোট ২৫০ প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ১৮ প্রজাতির প্যাঁচা রয়েছে। শুধু রাবি ক্যাম্পাসেই ৬ জাতের প্যাঁচা তাদের আবাসস্থল তৈরি করেছে, যা নতুন প্রজাতির সংযোজনের ফলে ৭টিতে পৌঁছাল। রাবির প্যারিস রোডের আম ও গগনশিরিশ গাছগুলোতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় এই প্যাঁচা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। নতুন এই পাখির প্রজাতির আবিষ্কার বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের পরিচয় বহন করে এবং দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় গভীর মনোযোগের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।’


বিজ্ঞাপন


বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পাখিপ্রেমী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ক্যামেরায় মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) আবারও ফ্রেমবন্দি হলো পাখিটি। তিনি বলেন, ‘গতবছর যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখিটি দেখতে ক্যাম্পাস পাখি প্রেমিদের আনাগোনা চলছিল তখন আমি পরীক্ষার জন্য ঘরবন্দি ছিলাম। পরীক্ষা শেষে জানুয়ারি থেকে পাখিটিকে ক্যামেরাবন্দি করতে টুকটাক খোঁজ করতে থাকি। দীর্ঘ একবছর প্রতীক্ষার পর গতকাল দেখতে পেয়েছি। দেরি না করেই চট করে কয়েকটি ছবি ক্যাপচার করলাম। ছবি তোলার থেকে প্রথম চোখে দেখাতেই বেশি আনন্দ পেয়েছি।’

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর