ক্লাস শেষে কিংবা ছুটির দিনে সাজ্জাদের লেবুচুর খায়নি এমন শিক্ষার্থী কমই পাওয়া যাবে। এই লেবুচুর ঘিরে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহিরাগত দর্শনার্থীদেরও আগ্রহ কম নেই। ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে কেবল রাজশাহী নয়, দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে সাজ্জাদের এই লেবুচুর। রাজশাহীর আলোচিত অন্যান্য খাবারের তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছে মুখরোচক এই খাবার।
বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রিয়মুখ সাজ্জাদ হোসেনের কথা। ক্যাম্পাসে ‘সাজ্জাদ ভাই’ হিসেবে তিনি বেশি পরিচিত।
সাজ্জাদ হোসেনের জন্ম রাজশাহীতে। ছোটবেলা থেকেই রোজগারে নামেন তিনি। শুরুতে চকলেট বিক্রি করতেন। লোকাল বাস, ট্রেন কিংবা শহরের অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে, কখনও স্কুল বা কলেজের গেইটে, আবার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে চকলেট বিক্রি করতেন। পরবর্তীতে ভ্রাম্যমাণ দোকান হিসেবে ছোট একটি ভ্যানে শুরু করেন লেবুচুর ও হরেক রকমের ভাজা বিক্রি। ধীরে ধীরে নতুন নতুন রেসিপিতে হাতের জাদু দেখিয়ে আজ তিনি জনপ্রিয়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশব্যাপীও সমাদৃত।
বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দীন আহমদ কলা ভবনের সামনে অন্যসব ভাজাওয়ালার মতো তিনিও একটি ভ্যান সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে দূর থেকে দেখেই মনে হচ্ছে তার দোকানে অনেক ভিড়। ভাজার নতুনত্ব দিয়ে অন্য সবার চেয়ে নিজেকে আলাদা করে তুলেছেন তিনি। সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার ব্যতীত বাকি দিনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত লেবুচুর ও ভাজা বিক্রি করেন। সকালে ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা এসে ভিড় জমান সবার প্রিয় সাজ্জাদ ভাইয়ের ছোট ভ্যান ঘিরে। ফলে কেউ কোনো অর্ডার করলে তাকে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়। অনেকটা প্রায় প্রতিযোগিতার মতো। খুব কম সময়ই তার দোকান ফাঁকা থাকে।
সাজ্জাদ ভাইয়ের দোকানে মোট নয় ধরনের ভাজা রয়েছে। নানারকম আইটেম দিয়ে উদ্ভাবন করেছেন ভিন্ন স্বাদের মজার মজার ভাজা। যেই আইটেমগুলো অন্য সবার থেকে তাকে আলাদা করেছে সেগুলার মধ্যে রয়েছে বারো ভাজা, ভাঙচুর, লেবুচুর, লেবু পিনিক, ঝালমুড়ি, বাদাম মাখা, বোম্ববাজা, লাড্ডুচুর অন্যতম। প্রত্যেকটা আইটেমের দাম ১০ টাকা নির্ধারণ করা। এরমধ্যে শিক্ষার্থী, দর্শনার্থীদের লেবুচুর, লেবু পিনিক ও বারো ভাজা পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। সেগুলোর ভিন্নধর্মী স্বাদের মাধ্যমেই মুখরোচক খাবার প্রিয় মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ ফাহির আমিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার আগে এই লেবু পিনিকের কথা অনেক শুনেছি। ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে অনেক খুঁজেছিলাম। কিন্তু খুঁজে পাইনি। পরবর্তীতে এখানে ভর্তি হওয়ার পর এসে সাজ্জাদ ভাইয়ের দোকান খুঁজে বের করেছি। আজ খেয়ে বুঝলাম, কেন সাজ্জাদ ভাইয়ের লেবুচুর ও ভাজাগুলো সবার কাছে প্রিয়। খেতে খেতে কয়েকটি আইটেম আমার খাওয়া হয়েছে। বেশ ভালো লেগেছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান ইসলাম বলেন, সাজ্জাদ ভাইয়ের বারোভাজা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। ক্লাস শেষে বন্ধুরা মিলে প্রায় নিয়মিত খেতে আসি। খাওয়ার সাথে সাথে আড্ডাও বেশ উপভোগ করি।
ভিন্নধর্মী এই ব্যবসায়িক জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘প্রথমে আমি ফেরি করে চকলেট বিক্রি করতাম। ওখান থেকে লাভের টাকা জমিয়ে রাখতাম নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করার জন্য। চকলেট বিক্রি করতে ভালো লাগতো না। এতে কোনো নতুনত্ব নাই। এরপরে ‘বারোভাজা’ বানানো শিখলাম। প্রথমে একটা বড় গামলায় ভাজার দোকান সাজিয়ে ফেরি করে ভাজা বিক্রি করতাম। পরে জমানো টাকা দিয়ে একটা ভাজার গাড়ি বানিয়েছিলাম। সেই গাড়িই রূপ বদল করে এখন এরকম।’
প্রতিনিধি/এইচই

