শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘বৈষম্যমূলক ব্যাকডেট পদ্ধতি’ বাতিল চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধন মঙ্গলবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:০৭ এএম

শেয়ার করুন:

‘বৈষম্যমূলক ব্যাকডেট পদ্ধতি’ বাতিল চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধন মঙ্গলবার

নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী অনতিবিলম্বে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ বছরের উন্নীতকরণ, বৈষম্যমূলক ব্যাকডেট পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আজ মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকাসহ সারাদেশে একযোগে মানববন্ধন করবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ৩৫ প্রত্যাশী যুব প্রজন্ম, বাংলাদেশ।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে সংগঠনের অন্যতম আহ্বায়ক সাজিদ সেতু বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন চাই, ব্যাকডেট নয় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা অবিলম্বে ৩৫ চাই’দাবির অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিকেল ৩টায় প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে, যা ঢাকাসহ সারা দেশব্যাপী একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। এখানে ঢাবি, রাবি, জবি, জাবি, চবি, ইবিসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, যেন তিনি দ্রুত আমাদের প্রতিনিধি দলকে দেখা করার সুযোগ দেন এবং বাংলাদেশের দশ লক্ষ চাকরিপ্রত্যাশী উচ্চ শিক্ষিত প্রজন্মের গণদাবি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেন।  


বিজ্ঞাপন


সাজিদ সেতু বলেন, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত যুব সমাজ বিগত এক যুগ ধরে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের গঠনমূলক ও যৌক্তিক দাবি জানিয়ে আসছে। কোভিড-১৯ এর আঘাতে সকল বয়সী শিক্ষার্থীরা দুই বছরের অধিক সময় হারানোর পর; বিদ্যমান সেশনজট এবং বিগত এক বছর ধরে একই দিনে একই সময়ে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার প্রহসন সব মিলিয়ে সাংবিধানিক অধিকার ‘সুযোগের সমতা’ বঞ্চিত হয়ে বিক্ষুব্ধ চাকরিপ্রত্যাশী যুব সমাজ এ বছরের জুন মাস থেকে আবারও চাকরিতে আবেদনের বয়সসসীমা নির্বাচনী ইশতেহারের ওয়াদা অনুযায়ী ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের গঠনমূলক অহিংস আন্দোলন করে আসছে।

সেতু বলেন, ২০১৮ সালের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির অঙ্গীকার উল্লেখ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় চার বছর পেরিয়ে আর একটি নির্বাচন আসন্ন এমন সময়েও উক্ত ওয়াদা বাস্তবায়ন করেনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করা এই দলটি। গত ২৬ আগস্ট আবারও আমাদের প্রতিনিধিদল ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে উনার সাথে দেখা করলে তিনি বিবেচনার আশ্বাস দেন।  এই তিন মাসে আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারের অসংখ্য মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার অনুমতি চেয়ে ছয়বার খোলা চিঠি ও স্মারকলিপি দিয়েছি মাধ্যমগুলোতে। বিগত তিন মাস ধরে আমরা বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন, জনসমাবেশ ও প্রেস কনফারেন্স কর্মসূচি করে আসছি, যেই প্রক্রিয়ায় গত ৯ সেপ্টেম্বর শাহবাগে জনসমাবেশ আয়োজিত হয়। যেখানে প্রায় ৫০০ সাধারণ শিক্ষার্থী তথা চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়। জনসমাবেশের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা শাহবাগ চৌরাস্তায় অহিংসভাবে অবস্থান নেয়। পুলিশের সাথে নিয়মিত বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার পরেও অতর্কিত শুরু হয় এডিসি হারুনের নেতৃত্বে নৃশংস হামলা ও নির্যাতন। রাজপথে প্রকাশ্যে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা৷ পুরুষ পুলিশ সদস্যরা নারীদের ওপর নির্যাতনও বাদ দেননি।

ggg

এরপর গত ২০ সেপ্টেম্বর সারাদেশব্যাপী ৩৫ বাস্তবায়নের দাবিতে ও সাধারণ চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রতি পুলিশের হামলার প্রতিবাদে সারাদেশব্যাপী মানববন্ধন আয়োজিত হলে ২২ সেপ্টেম্বর তাড়াহুড়ো করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যাকডেট পদ্ধতির অবতারণা করে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০২১ সালের ন্যায়। বস্তুত ব্যাকডেট একটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতি এবং এবারের বিজ্ঞপ্তিতে পূর্বের চেয়েও ধোঁয়াশা উপস্থাপিত হয়েছে। কোভিডকালীন সময়ে জেসব প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তি দিতে পারেনি তাদেরকে বলা হয়েছে  ২৫-০৩-২০২০ তারিখে যাদের বয়স ৩০ পার হয়নি এমন বয়সীদের ৩০-০৬-২০২৩ পর্যন্ত বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তিতে সুযোগ দেওয়ার কথা। আমাদের জানার প্রক্রিয়া কী যে, কোন কোন প্রতিষ্ঠান কোভিডকালীন বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে নাই এখন দিবে? আবার এমন অনেক সার্কুলার কি আসবে না যারা বলবে আমাদের এই বিজ্ঞপ্তি এই বছরের বিধায় এখানে ব্যাকডেট প্রযোজ্য নয়। এই প্রক্রিয়ায় কেউ কেউ সুযোগ পাবে ৩৩ বছর তিন মাস আর অনেকে পাবে ৩০ বছর, যা সুযোগের সমতাকে লঙ্ঘন করে। কোভিড ১৯ তো সকল বয়সীদের শিক্ষারথীদের জীবন থেকেই দুই বছর কেড়ে নিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বর্তমানে যে সকল চাকরিপ্রত্যাশীদের বয়স ২৭,২৮,২৯ তারা চরম বৈষম্যের শিকার। এগুলো না করে বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করলেই সামগ্রিক সমাধান আসবে বলে এদেশের বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ বলছেন।


বিজ্ঞাপন


এই আন্দোলনকারী বলেন, জাতীয় সংসদে এখন অবধি ৭১ বার (মহামান্য রাষ্ট্রপতি, তৎকালীন স্পিকার আব্দুল হামিদসহ) বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিটি উত্থাপিত হয়েছে, যার সাম্প্রতিক উদাহরণ জাতীয় পার্টির সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারীর বক্তব্য। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়য়সীমা ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত হয় এখন থেকে ৩১ বছর আগে ১৯৯১ সালে, সেটাও অন্য সরকারের আমলে। তখন গড় আয়ু ছিলো ৫৭ বছর আর এখন ৭৩। বিশ্বের ১৬২টি দেশে আমাদের চেয়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা অধিক। বাংলাদেশের জাতীয় যুবনীতিতে যুবকের সংজ্ঞায় ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়স বলা হচ্ছে আবার এখানে ৩০ বছরে আটকে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ। শুধুমাত্র বিসিএস কোয়ালিফাই করার বয়সের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বয়সসীমার ৩১ বছরের অচলায়তন চলমান। আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে নূন্যতম তিনটি বিসিএস পরীক্ষায় কম আবেদন করতে পারেন। 

এসএএস/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর