শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সাত দশকে মাত্র ১১ সমাবর্তন, প্রশাসনের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন

কামরুল হাসান অভি
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:২৯ এএম

শেয়ার করুন:

সাত দশকে মাত্র ১১ সমাবর্তন, প্রশাসনের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন

স্কুল-কলেজের গন্ডী পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত পরিবেশে দীর্ঘ সময় বিচরণ শেষে একজন শিক্ষার্থীর জীবনে মেলে সমাবর্তন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্জিত ডিগ্রির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয় বিশেষ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।

কালো গাউন এবং মাথায় কালো টুপি পরে এক ফালি হাসি দিয়ে ছবি তোলা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। তবে প্রতিষ্ঠার ৭ দশক পেরোলেও প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত দেশের অন্যতম বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাবর্তন হয়েছে মাত্র ১১টি। আশ্বাস আর আশাবাদের বেড়াজালে আটকে আছে দ্বাদশ সমাবর্তন। অথচ নিয়ম হলো প্রতি বছরই সমাবর্তনের আয়োজন করা।


বিজ্ঞাপন


এদিকে নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। মূল সনদপত্রের পরিবর্তে সাময়িক সনদপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হচ্ছে ডিগ্রিধারীদের। নিয়মিত সমাবর্তন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। সর্বশেষ অর্থাৎ একাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর। প্রথম সমাবর্তনের পর ১৯৫৯, ১৯৬১, ১৯৬২, ১৯৬৫, ১৯৭০, ১৯৯৮, ২০১২, ২০১৫, ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম সমাবর্তন। তবে মুক্তিযুদ্ধের আগের সমাবর্তনগুলোর বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের ২২ এপ্রিল অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ ভিসি থাকাকালীন সময়ে একটি বিশেষ সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ছিলেন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। সমাবর্তনে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ফরাসি মনীষা আঁন্দ্রে মালরোকে ডি-লিট প্রদান করা হয়। এরপর দীর্ঘ ২৮ বছর বিরতির পর ১৯৯৮ সালের ২৯ নভেম্বর অধ্যাপক আব্দুল খালেক ভিসি থাকাকালীন সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ভিসি অধ্যাপক আব্দুস সোবহান অষ্টম সমাবর্তনের আয়োজন করেন। ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ভিসি থাকাকালীন নবম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। 

এরপর ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় দশম সমাবর্তন। সর্বশেষ একাদশ সমাবর্তন ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এই সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য তিন হাজার ৪৩১ জন স্নাতক নিবন্ধন করে। সর্বশেষ দুই সমাবর্তনের ভিসি ছিলেন অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান।


বিজ্ঞাপন


রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ক্যাটাগরির সিনেট সদস্য প্রফেসর এ এইচ এম আবুয়াল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষার্থী চায় শিক্ষাজীবন শেষে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সনদ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে। তবে দুঃখের বিষয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনিয়মিত হওয়ায় অনেকে সেই সুযোগ পাচ্ছেন না।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতা ও অদক্ষতাকে দায়ী করে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আবদুল মজিদ অন্তর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য এক পরম আক্ষেপের নাম সমাবর্তন। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরে মাত্র ১১টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়া প্রমাণ করে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার পাশাপাশি দক্ষতারও অভাব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকভাবে অর্থের অপচয় হয়, অথচ সমাবর্তনের তারা আয়োজন করতে পারে না। এটা কর্তৃপক্ষের বড় ব্যর্থতা। 

অনিয়মিত সমাবর্তন হওয়ার জন্য বাজেট সংকট ও রাষ্ট্রপতির শিডিউল পাওয়ার চ্যালেঞ্জকে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর আবদুস সালাম। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বের মতো এখন একসাথে পরীক্ষা ও রেজাল্ট না হওয়ায় প্রতিবছর আয়োজন করাটা এখন সম্ভব হচ্ছে না। এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবছর সমাবর্তন করতে গেলে প্রচুর পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু আমাদের আর্থিক বাজেট এত জোগান দেয় না। করোনা আমাদের আরও সংকটে ফেলেছে। আর এখন যেহেতু ২০-২৫ শতাংশ আর্থিক সাশ্রয় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাই এখন সমাবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া রাজধানী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব বেশি হওয়ায় আচার্যের শিডিউল পাওয়াটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আচার্যের অনুমোদন এবং তার উপস্থিতি ছাড়া কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার ফলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সময় সুযোগ হয়ে উঠে না। এদিকে রাজশাহী শহর কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে হওয়ায় সমাবর্তনের অনুমোদন পেতে অনেক বেগ পেতে হয়।

এ বছর সমাবর্তন করার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, আমাদের সমাবর্তন করার পরিকল্পনা আছে তবে কবে নাগাদ হবে তা বলতে পারব না। আচার্য যখন অনুমোদন দিবে তখনি আমরা সমাবর্তনের আয়োজন করব।

প্রতিনিধি/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর