মামলাজটের কারণে শিক্ষা প্রশাসনের নানা কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বর্তমানে শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর ও সংস্থার বিরুদ্ধে সাড়ে আট হাজারেরও বেশি মামলা রয়েছে। এসব মামলার কারণে আটকে আছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও।
সশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা দফতরগুলোতে যথাযথ সমাধান না পেয়ে মামলা করেন। আবার কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত কোনো একটি সিদ্ধান্তকে আটকে দেওয়ার জন্যও মামলার আশ্রয় নেন। আর মামলার দীর্ঘসূত্রিতা থেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেন।
বিজ্ঞাপন
দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা দেখভাল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভাগ রয়েছে দুটি। একটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, অন্যটি কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন দফতর ১০টি আর শিক্ষা বোর্ড নয়টি। কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অধীন দফতর রয়েছে ছয়টি। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দফতর পাঁচটি।
মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার সর্বশেষ প্রতিবেদন (আগস্ট মাসের) থেকে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন দফতরের অনিষ্পন্ন মামলা চার হাজার ২৬১টি, কারিগারি ও মাদরাসা বিভাগের এক হাজার ৩৭৮টি। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আওতাধীন দফতরগুলোর অনিষ্পন্ন মামলা তিন হাজার ৩৯টি। এই হিসেবে শিক্ষা প্রশাসনে চলমান মামলার সংখ্যা আট হাজার ৬৭৮টি।
শিক্ষা প্রশাসনে বিপুল সংখ্যায় মামলার বিষয়টি ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, প্রতি মাসে দফতর-সংস্থার মামলা নিয়ে আলাদা সভা করবে আইন অনুবিভাগ। এছাড়াও নির্দেশ দেওয়া হয় নিষ্পত্তিকৃত মামলাগুলোর মধ্যে সরকারের পক্ষে কয়টি এবং বিপক্ষে কয়টি রায় হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য প্রতিবেদন আকারে পাঠাতে।
মামলাসংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মামলার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ দফতরের অনিষ্পন্ন মামলা দুই হাজার ৯০১টি।
দ্বিতীয় অবস্থানে বেসরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশকারী সংস্থা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এই দফতরের চলমান মামলা ২৮৭টি।
এর পরের অবস্থানে রয়েছে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এই দফতরে চলমান মামলা ২৪১টি।
এছাড়া শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে ১৯টি, ব্যানবেইসে ২১টি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে সাতটি, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডে ১২টি মামলা চলমান রয়েছে।
আর অন্য দুটি দফতর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের মামলার তথ্য সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে কুমিল্লা বোর্ডে ১৬৮টি। এছাড়া ঢাকা বোর্ডে ১৪৭টি, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১১৬টি, যশোর বোর্ডে ৬৭টি, বরিশাল বোর্ডে ৭৯টি, দিনাজপুর বোর্ডে ৬৫টি, রাজশাহী বোর্ডে ৯০টি, সিলেট বোর্ডে ৪০টি মামলা চলমান রয়েছে। আর ময়ময়সিংহ বোর্ডের কোনো তথ্য প্রতিবেদনে নেই।
বিপুলসংখ্যক মামলার বিষয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করলে মাউশি পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, চলমান মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এছাড়া প্যানেল ল ইয়ার নিয়োগের কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরে মামলা রয়েছে ৪৩৮টি, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরে ৩৩৩টি, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৪৮টি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ৫৫৮টি, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে একটি। তবে এ দফতরের অধীন জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমির কোনো মামলা নেই।
আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দফতরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিষ্পন্ন মামলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের।
এই দফতরের অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা দুই হাজার ৮৯৭টি। এছাড়াও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে ৭৮টি, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটে ৬৪টি মামলা চলমান রয়েছে। আর বাকি দুটি দফতর জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিরুদ্ধে কোনো মামলা চলমান নেই।
এসএএস/জেবি/এএস