বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ঢাবি প্রশাসনিক ভবনে হয়রানি, ফের অবস্থান কর্মসূচিতে হাসনাত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

ঢাবি প্রশাসনিক ভবনে হয়রানি, ফের অবস্থান কর্মসূচিতে হাসনাত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ভবন তথা রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে শিক্ষার্থী হয়রানি বন্ধসহ আট দফা দাবি জানিয়ে আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ।

রোববার (১8 সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের গেটে তিনি অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।


বিজ্ঞাপন


আবুল হাসনাত বলেন, ভিসি স্যার উনার কথা রাখেননি এবং রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে আজ আমাকে বাধা দেওয়া হয়েছে। আজ সকালে আমি রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে যাই। সকাল নয়টায় অফিস টাইম থাকলেও নয়টা চল্লিশে (৯.৪০) রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন। সেই ছবি তুলতে গেলে আমি বাধার সম্মুখীন হই। রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের ছবি তোলার আগে নাকি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ছবি তুলতে হবে।

এই শিক্ষার্থী বলেন, গত ৩০ আগস্ট আমরা যখন দাবিগুলো নিয়ে ভিসি স্যারের কাছে গিয়েছি স্যার বলেছেন, আমাদের প্রত্যেকটি দাবি যৌক্তিক। যৌক্তিক হওয়ার পরেও কেন ১৮ দিন পরে এসেও আমাকে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে বাধার সম্মুখীন হতে হলো? রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সমস্যা সমাধানে যেখানে ভিসি স্যারও একমত, তাহলে কোন অদৃশ্য ক্ষমতাবলে একটি দাবি পূরণেরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, সেজন্য আমরা সাধারণ ছাত্র হিসেবে প্রচণ্ড হতাশ হয়েছি।

রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কর্মচারীদের কাজে সময়মতো উপস্থিত না হওয়া, লাঞ্চের আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়া, অযথাই ছাত্র হয়রানি করা, অহেতুক দায়িত্ব অবহেলা, রুম নম্বর বিড়ম্বনা, সনাতন পদ্ধতিতে ছাত্র হয়রানি এখনও রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের নিয়মিত ঘটনা।

হাসানাত বলেন, আমরা গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ৭০০ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশাসনিক ভবনের সেবা নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিলাম। জরিপের ফল ভয়াবহ ও লজ্জাজনক। জরিপটি নিম্নরূপ:


বিজ্ঞাপন


১. ৮৯.২% শিক্ষার্থীর প্রশাসনিক ভবনের সেবার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ ও অপ্রত্যাশিত।

২. সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো ৬৮.৩% শিক্ষার্থীর মতামত হলো প্রশাসনিক ভবনে ঘুষ লেনদেন ও স্বজনপ্রীতির চর্চা হয়।

৩. সর্বোচ্চসংখ্যক হয়রানি হয় ভর্তি শাখায়, বৃত্তি শাখায়, মার্কশিট শাখায় ও ট্রান্সক্রিপ্ট শাখায় (ক্রমানুযায়ী)

৪. ৪০০ এর অধিক শিক্ষার্থীর শুনতে হয়েছে, ‘লাঞ্চের পরে আসুন’, ‘এটা এই রুমের কাজ না’, ‘কাগজ এখনও হল থেকে আসেনি’।

৫. মোট ৮৬.১% শিক্ষার্থী মনে করে প্রশাসনিক ভবনের বর্তমান কাজ ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত, বিপরীত বা শূন্য।

৬. ৪০০ এর বেশি শিক্ষার্থীর অভিযোগ-সেবা দাতাদের কাছে সেবা গ্রহীতারা নিরূপায় এবং সেবা গ্রহীতাদের সময়ের কোনো মূল্য নেই।

৭. প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীর মতে প্রশাসনিক ভবনের সেবার মান অপরিবর্তিত থাকার কারণ কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, স্বচ্ছতার অভাব।

৮. ৭২.৮% শিক্ষার্থী মনে করে সেবার মান উন্নয়নের জন্য প্রত্যক্ষ আন্দোলনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা উচিত।

পর্যাপ্ত সময়, গঠনমূলক পরামর্শ, সময়পোযোগী দিকনির্দেশনা দেওয়ার পরও আট দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের অসহযোগিতামূলক আচরণে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি ক্ষুব্ধ। এজন্য, এবার আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমার অবস্থান কর্মসূচি চলবে।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ আগস্ট তিনি প্রশাসনিক ভবনের হয়রানি বন্ধের জন্য আট দফা দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন। এই অবস্থান কর্মসূচির দশ কর্মদিবসের মধ্যে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যকরী কোনো সমাধান না দেন তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। তার আট দফা দাবিগুলো হলো:

১. শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসনের জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন করা। যেখানে সেবাগ্রহীতারা সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে অভিযোগ জানাতে পারেন।

২. প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটাইজড করা।

৩. নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিসসমূহের অভ্যন্তরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা।

৪. প্রশাসনিক ভবনে অফিসসমূহের প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করা। ডিসপ্লেতে অফিসসমূহের নাম, কক্ষ নম্বর ও সেখানে প্রদত্ত সেবার বিবরণী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম ও ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি প্রদর্শন করা।

৫. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনেরও সংস্কার করা।

৬. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক-বিদ্যা, পেশাদারিত্ব, মানুষিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারসমূহের শরণাপন্ন হওয়া।

৭. অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত থাকতে না পারা। সে নিরিখে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবসমূহে স্থানান্তর নিশ্চিত করা।

৮. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশবান্ধব করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশ বজায় রাখতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য হানিকর ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপ্রয়োজনীয় পোস্টার লিফলেট ও ব্যানার ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করা।

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর