বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

মাদকসেবীদের ‘সেফ জোন’ রাবি ক্যাম্পাস, বাড়ছে দৌরাত্ম

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

মাদকসেবীদের ‘সেফ জোন’ রাবি ক্যাম্পাস, বাড়ছে দৌরাত্ম
ছবি: ঢাকা মেইল

সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুর ২টা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল স্কুল মাঠ থেকে নেশা করার সময় বহিরাগত চারজনকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি। তাদের কাছ থেকে নেশাজাতদ্রব্যসহ নেশাগ্রহণের উপকরণাদি জব্দ করা হয়। এমন ঘটনা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত তিনমাসে ক্যাম্পাসে মাদক ও বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড সংঘটনের দায়ে প্রক্টরিয়াল বডির হাতে আটক হয়েছে ৮৪ জন। যারমধ্যে মাদক সেবনের অভিযোগ ছিল ৩০টিরও বেশি। এছাড়া ক্যাম্পাসে এসব অপকর্মের অপরাধে প্রক্টর দফতরে নিয়ে কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার শর্তে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৫৪ জনকে। যার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ২১ জন এবং রুয়েট, বরেন্দ্র, মেডিকেল ও অন্যান্য স্কুল কলেজসহ বহিরাগত ৩৩ জন।


বিজ্ঞাপন


এদিকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে থেমে নেই মাদকের ছড়াছড়ি। ক্যাম্পাসে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল মাদক জাতীয় নানান দ্রব্য। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসের নির্জন জায়গাগুলোতে জমে উঠে মাদকের আসর। শুধু নির্জন জায়গা নয়, একাডেমিক ভবন থেকে শুরু করে আবাসিক হলের ছাদগুলোতেও বসে মাদকের আড্ডা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, একাডেমিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিকসহ নানা কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে মাদকের দিকে ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা। তার ওপর মাদক সহজলভ্য হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে মাদকের ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। কিন্তু তারপরও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। দিন দিন মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বহিরাগতসহ মাদকে লিপ্ত রয়েছেন নারী শিক্ষার্থীরাও। প্রশাসন বারবার প্রদক্ষেপ নিয়েও মাদকসেবীদের ভয়াবহতা থামাতে পারছেন না। দিনে দিনে বেড়েই চলেছে মাদকসেবীদের সংখ্যা। আর এসব মাদক সরবরাহের কাজগুলোতে জড়িত স্থানীয় যুবক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মচারী, শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদক সেবনের পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদকসেবীদের মধ্যে আলাদা আলাদা গ্রুপ করা থাকে। নির্ধারণ করা থাকে স্থানও। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতে মাদক সেবনের জন্য সবাই হাজির হন তাদের নির্দিষ্ট জায়গায়। জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ মাঠ, কৃষি প্রকল্পের গোডাউনের বারান্দা, বিনোদপুর গেট সংলগ্ন আইবিএস ভবন যাওয়ার রাস্তায়, সৈয়দ আমীর হলের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায়, নবাব আব্দুল লতিফ হলের পূর্ব পার্শ্বের মাঠ, শাহ মখদুম হলের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায়, শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পূর্ব দিকে রাস্তার পাশে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলসংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনের দুই পাশে, মাদার বখশ ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায়, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনের মাঠে, চারুকলা ও কৃষি অনুষদ সংলগ্ন মাঠগুলোর অন্তত তিনটি পয়েন্টে। 


বিজ্ঞাপন


এছাড়া তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের পেছনে তুঁতবাগান এলাকায়, দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের পেছনের ব্রিজে, চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনের পেছনে চায়ের দোকানে, প্রথম বিজ্ঞান ভবনের পশ্চিম পাশে, শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মাঠে পানির ফোয়ারার নিচে, সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ও রবীন্দ্র কলা ভবনের ছাদে, রোকেয়া হলের পশ্চিম দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাজার গেটে রাস্তার পাশের মাঠ, জুবেরি মাঠের দক্ষিণ কোণাসহ ক্যাম্পাসে এমন প্রায় ৪০টির মতো চিহ্নিত জায়গা রয়েছে। যেসব জায়গাগুলোকে মাদক সেবনের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছে মাদকসেবীরা। 

কীভাবে আসে এসব মাদকদ্রব্য সেই তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন ধরনের মাদক। ক্যাম্পাসসংলগ্ন স্টেশন বাজার, মির্জাপর, কাজলা, কাটাখালিসহ বিভিন্ন স্থানের নির্দিষ্ট একাধিক ব্যক্তির কাছে এবং দোকানে মিলে এসব মাদকদ্রব্য। তাছাড়া নগরীর সাহেব বাজারের একাধিক স্থানে মদসহ অন্যান্য উত্তেজক দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। কোনো না কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাত ধরেই আসে ক্যাম্পাসে। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুর ওপর নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করলেই হাতে পৌঁছে যায় মাদক।

মাদক সেবন করে বিশ্বদ্যিালয়ের এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। তারা বলছেন, ক্যাম্পাসের ভেতরেই আমাদের অনেক লিংক আছে। তারা মাদক সেবনের পর যা বাকি থাকে তা বিক্রি করে। আর যদি না পায় তাহলে চলে যাই বাইরে। বাইরের অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযান চালানোর ফলে ক্যাম্পাসে এখন গোপনে এসব চলে। তবে বাইরে একটা লিংক ধরতে পারলেই মাদক পাওয়া সহজ হয়ে যায়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে এবং অনেক সময় হলের রুমে বসেই খাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. আসাবুল হক বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। কিন্তু যদি কেউ ক্যাম্পাসের বাইরে মাদক সেবন করে সেটা আমাদের জানা খুব কষ্টকর। এজন্য সকলের সহযোগিতা দরকার। যাদের পরিচিতরা মাদক সেবন করছেন তারা যদি এসে আমাদের খবর দেন তাহলে তাদের ফিরিয়ে আনতে আমরা ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারি। এছাড়া ক্যাম্পাসে মাদক বিক্রয় ও সেবনের বিরুদ্ধে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ সবসময় সক্রিয় রয়েছে।

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর