এখনও বিয়েই করেননি স্কুল শিক্ষিকা, তবু দীর্ঘদিন ধরে সন্তানের শিক্ষা ভাতা নিচ্ছিলেন তিনি। চাকরিতে যোগদানেও দেখিয়েছেন ভুয়া জন্ম সাল। পাঁচ বছর পর ইলেকট্রনিক ফাউন্ডস ট্রান্সফারে (ইএফটি) তথ্য সংরক্ষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে তার প্রতারণার বিষয়টি। ওই শিক্ষিকাকে শিক্ষা অফিসে সশরীরে হাজির হয়ে এর জবাব দিতে বলা হলে তিনি সব ‘স্বীকার’ করে জবাব দিয়েছেন। জানিয়েছেন, পরিবারের প্ররোচনায় এমনটি করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার।
ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের আরাজি পিপুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুনা খাতুন এমন প্রতারণার আশ্রয় নেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চাকলি গ্রামে। ওই গ্রামের বখত জামান ও রেনু বেগমের মেয়ে তিনি।
বিজ্ঞাপন
তথ্য বলছে, ২০১০ সালে বেসরকারি (রেজিস্ট্রার্ড) প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে কার্যক্রম চালু করে আরাজি পিপুলবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শুরু থেকে মোট চারজন শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে পাঠদান করাচ্ছেন। তাদের একজন রুনা খাতুন। তিনি এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জের চাকলি থেকে এসে এখানে চাকরি নেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালে সারাদেশের প্রায় ৩০ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে এই বিদ্যালয়টিও জাতীয়করণের আওতায় আসে। সেখানকার শিক্ষকরাও সরকারি হয়ে যান।

সদর উপজেলা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন দীপচর পোড়ারচরে আরাজি পিপুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২২৪ জন। শিক্ষকের পাঁচটি পদের বিপরীতে চার শিক্ষক কর্মরত আছেন। এদের একজন রুনা খাতুন।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের আরিয়া মহন স্কুলের মানবিক বিভাগ থেকে ২০১০ সালে জিপিএ-৩.৬৯ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাস করেন রুনা। এসএসসি সনদে তার জন্ম তারিখ ১৩ আগস্ট ১৯৯৫। কিন্তু তার চাকরিতে প্রবেশের সময় কাগজপত্রে জন্ম তারিখ উল্লেখ করেন ১৩ আগস্ট ১৯৯০। জন্ম সাল তারতম্যের কারণ জানা না গেলেও অবিবাহিত হয়ে নিজেকে ২০১৭ সাল থেকে সন্তানের নাম ব্যবহার করে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে শিক্ষা ভাতা তুলে আসছিলেন।
সরকারের সিদ্ধান্তে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ইলেকট্রনিক ফাউন্ডস ট্রান্সফার (ইএফটি) সিস্টেমের মাধ্যমে প্রদানের লক্ষ্যে সব শিক্ষকের তথ্য ইএফটি সিস্টেমে সংরক্ষণ করতে গিয়ে শিক্ষিকা রুনা খাতুনের সন্তান না থেকে ভাতা ভোগ ও জন্ম সাল প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে। পরে চলতি বছরের ৪ জুলাই কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ভুয়া জন্ম সাল ব্যবহার ও মিথ্যা তথ্যে শিক্ষা ভাতা নেওয়ার কারণ জানতে চেয়ে ওই শিক্ষিকাকে চিঠি দিলে তিনি অভিযোগ স্বীকার করে ‘পরিবারের প্ররোচনায় এমনটি করেছেন’ বলে জবাব দেন।
এ বিষয়ে কথা হলে শিক্ষিকা রুনা খাতুন ভুয়া জন্ম সাল ব্যবহার ও অবিবাহিত থেকেও সন্তানের নামে শিক্ষাভাতা উত্তেলনের কথা স্বীকার করেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, অফিস থেকে জবাব চেয়েছে। বয়স ঠিকঠাক করে শোকজের জবাব দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের পাশের বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, স্কুলটি আগে অন্যখানে ছিল। নদী ভাঙনের পর এখানে আনা হয়েছে। যখন স্কুলটি করা হয় তখন এলাকায় শিক্ষক হওয়ার মতো লোকজন না থাকায় রুনা আপা তার আত্মীয়ের মাধ্যমে এখানে চাকরি নেন। আমরা সাধারণ মানুষ, এসব তথ্য তাদের জানার সুযোগ নেই।
স্থানীয় বালা বেগম জানান, ১১-১২ বছর থেকে রুনা এই স্কুলে চাকরি করছেন। তারা জানেন তিনি বিয়ে করেননি। সে কারণে তার বাচ্চা থাকার কথা নয়।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, রুনা খাতুনসহ চার শিক্ষক আছেন ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে। ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হলে সবার কাগজসহ নেওয়া হয়। কিন্তু তার বিষয়গুলো বোঝা যায়নি। ইএফটি ফরম পূরণের সময় নজরে এলে উপজেলা শিক্ষা অফিস বিষয়টি তদন্ত শুরু করেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান এ বিষয়ে ঢাকা মেইলকে বলেন, ওই শিক্ষিকার বিষয়ে তদন্ত শেষ করে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। বিভাগীয় আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।
প্রতিনিধি/জেবি

