শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রঙ তুলির আঁচড়ে সফল উদ্যোক্তা রাবির শারমিন

কামরুল হাসান অভি
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২, ০১:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

রঙ তুলির আঁচড়ে সফল উদ্যোক্তা রাবির শারমিন
ছবি: ঢাকা মেইল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় তার গ্রামের বাড়ি। করোনাকালে সারা বিশ্বে যখন স্থবিরতা বিরাজ করছিলো, লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ যখন অনিশ্চিত এক গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে অবসর সময়টাকে কাজে লাগাতে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন শারমিন। দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করার মনোবাসনা বাস্তবায়ন করার কথা মাথায় নিয়ে ভাবনার যাত্রা। শুরু হলো তার সুপ্ত ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা।

প্রথম দিকে পরিবারের সহযোগিতা পেলেও কটূ কথা শুনতে হয়েছে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে। কিন্তু তার অদম্য আগ্রহের কাছে হেরে যায় সব প্রতিকূলতা। মুনাফার কথা চিন্তা না করে শুধু দেশীয় পণ্যকে কিভাবে আরও বেশি নান্দনিক ও সমৃদ্ধ করা যায় সেই চিন্তা ছিল তার মাথায়।


বিজ্ঞাপন


পাজামা, পাঞ্জাবি, শাড়ি, জামা ইত্যাদি পোশাকের ওপর হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি হ্যান্ড স্টিচ, তাঁতের নিজস্ব ডিজাইনের পোশাক তৈরি, খাদি পাঞ্জাবী ইত্যাদি নিয়েও কাজ করেন তিনি। পাটের ব্যাগ তৈরি ও তার ওপর পেইন্টের কাজও করেন এই শিক্ষার্থী।

ক্ষুদে এই উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি কামরুল হাসান অভির। কথা বলে জানা গেছে, দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করার চিন্তাভাবনা অনেক ছোট থেকেই ছিলো তার। নবম-দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন বাবার সঙ্গে মেলা দেখতে যায় সে। সেখানে বাঁশের শিল্প, তালের পাখা, জামদানি শাড়ি, স্ট্রিচের কাথা সেলাইয়ের কাজ, মাটির পুতুল দেখে অভিভূত হন। তারপর থেকেই শিখতে থাকেন হ্যান্ডপেইন্টিং এর কাজ।

এই কর্ম প্রসারের জন্য ‘লীলাবতী’ নামে ফেসবুকে একটি পেজও আছে তার। সেখানে হ্যান্ডপেইন্টিং করা বিভিন্ন রকম প্রোডাক্টের ভিউ দেখানো হয়। ক্রেতারা অনলাইনে প্রোডাক্ট দেখে পছন্দ অনুযায়ী অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন। এমন অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে তার কাজকে করতে চান আরও গতিশীল। দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করতে বুটিক হাউজও তৈরি করতে চান তিনি। সেখানে কয়েকজন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে আরও বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ক্ষুদে এই উদ্যোক্তা।

এমন উদ্যোগের পিছনের গল্পটা জানতে চাইলে শারমিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করার। আস্তে আস্তে স্বপ্নটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে শুরু করি। দেশীয় পণ্যেকে তুলে ধরা এবং প্রচারই আমার মূল উদ্দেশ্য। আমার তৈরি প্রোডাক্টগুলোর বিনিময় মূল্য থাকে খুবই সীমিত। যেন শিক্ষার্থীদের বাজেটের মধ্যে থাকে। বিভিন্ন ম্যাটারিয়াল ও কাজের মাত্রার ওপর দাম নির্ধারণ করে ৪৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে রাখার চেষ্টা করি।’


বিজ্ঞাপন


ঢাকার সাভার থেকে অনলাইনে শারমিনের কাছ থেকে হ্যান্ডপেইন্টিং করা একটি পাঞ্জাবি অর্ডার করেন রেজওয়ান। পাঞ্জাবি হাতে পেয়ে অনলাইনের এমন সেবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘লীলাবতী পেজটি থেকে আমি প্রথমবারের মতো  হ্যান্ডপেইন্টেড একটি খাদি পাঞ্জাবি অর্ডার করি। প্রথমত অনলাইনের কেনাকাটায় আমি খুব একটা আস্থা রাখতে পারি না। কারণ এখানে প্রতারণার সম্ভবনা থেকেই যায়। কিন্তু লীলাবতী পেইজ থেকে অর্ডার করে আমি সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট। পাঞ্জাবিটির সুন্দর বুনন বেশ মানসম্মত ছিল এবং সুলভ মূল্যেই পেয়েছি।’

পড়াশোনার পাশাপাশি এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর জানান, উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের মেয়েরা এখন সকল ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ভালো ভালো সেক্টরগুলোতে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও কাজ করছে। পড়াশোনার পাশাপাশি শারমিনের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর