সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘রাজনীতি নিষিদ্ধ’ বুয়েটে ছাত্রলীগের ব্যানারে কর্মসূচি, উত্তেজনা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২২, ০৯:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

‘রাজনীতি নিষিদ্ধ’ বুয়েটে ছাত্রলীগের ব্যানারে কর্মসূচি, উত্তেজনা

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শনিবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাফেটেরিয়ায় ছাত্রলীগের ব্যানারে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। সেই সূত্র ধরে ছাত্রলীগের এই কর্মসূচির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগ নেতারা রাজনৈতিক সভা নয় বরং বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়ার সভা বলে দাবি করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে চান, ছাত্রলীগের ব্যানারে কেন। এটা নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় এবং কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়। 

শনিবার বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়ে প্রোগ্রাম চলে রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত। এর আগে সন্ধ্যা ৭টা থেকে বিক্ষোভকারীরা ক্যাফেটেরিয়ার সামনে একত্রিত হতে থাকেন। এরপর প্রোগ্রাম শেষে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বের হলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা 'আবরারের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না', 'আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না', 'রাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না!' -বলে শ্লোগান দিতে থাকেন। 


বিজ্ঞাপন


প্রোগ্রাম শেষে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাল মাহমুদ বিক্ষু্ব্ধ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম নয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্য দোয়ার প্রোগ্রাম। এসময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সমস্বরে বলে উঠেন, তাহলে ছাত্রলীগের ব্যানারে কেন? আপনাদের বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবেও করতে পারতেন!

প্রোগ্রামে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতি বলেন, ‘আসলে বুয়েটে ছাত্রলীগকে আমাদের ছাত্রলীগের জুনিয়ররা কলঙ্কিত করছে। আবরারের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা তো কুলাঙ্গার।’

buet2

প্রোগ্রাম শেষে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা বেরিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা খুনি! খুনি! বলে শ্লোগান দিতে থাকেন।


বিজ্ঞাপন


পরে রাতে পৌনে ৯টার দিকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিং করেন।

এসময় তারা বলেন, ১৯৭৫ সালের এই মাসের ১৫ তারিখ বাঙালি হারায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেই আমরা নিরন্তর কাজ করে চলেছি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে গড়ে তুলতে। তারই ধারাবাহিকতায় নিরাপদ এবং সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন নিশ্চিত করা সকল শিক্ষার্থীর মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যেই ছাত্ররাজনীতি একসময় দেশের ক্রান্তিলগ্নে অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছিল, পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করে জন্ম দিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের, সেই ছাত্ররাজনীতি আজ ক্ষমতার অপব্যবহারে কলুষিত।

তারা আরও বলেন, বুয়েট ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে নিরীহ শিক্ষার্থীদের বারবার প্রাণ ঝরেছে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অপকর্মে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নৃশংস অত্যাচারে আবরার ফাহাদ নিহত হন। এর প্রতিবাদে বুয়েটের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও আজ ১৩ আগস্ট, ২০২২ তারিখে সেমিনার হল বুয়েট অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েটের সাবেক নেতাদের আয়োজনে একটি ব্যানার দেখা যায়।

buet3

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ইতঃপূর্বে ২ জুলাই, ২০২২ তারিখ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলে আরিফ রায়হান দিপের স্মৃতিফলকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ৮ জুন ২০২২ তারিখ সাবেকুন নাহার সনি-র স্মৃতিফলকে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের পক্ষ থেকে ব্যানার টানানো হয়। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের বারবার নিজেদের উপস্থিতি জানিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পাওয়ায় বুয়েট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এহেন কার্যক্রমের ব্যাপারে আমরা, বুয়েটের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্তৃপক্ষের অবস্থান এবং সুপষ্ট জবাব আশা করছি।

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর