শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

'দুর্নীতির আখড়া' মাউশিতে বিরাজ করছে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ আগস্ট ২০২২, ০৩:১৮ এএম

শেয়ার করুন:

'দুর্নীতির আখড়া' মাউশিতে বিরাজ করছে আতঙ্ক

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি মূলত ‘শিক্ষাভবন’ নামেই পরিচিত। এই ‘শিক্ষাভবন’ দীর্ঘদিন ধরেই নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষের আখড়া হিসেবে আলোচিত-সমালোচিত।

সম্প্রতি মাউশির অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় ঘটে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে মাউশির শিক্ষা ক্যাডারের এক কর্মকর্তাসহ ৪ জনকে গ্রেফতারের পর আবারও আলোচনার শীর্ষে এ দপ্তর।


বিজ্ঞাপন


পুলিশের দাবি, ওই কর্মকর্তারা ছাড়াও মাউশির আরও বেশ কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত। পুলিশের এই বক্তব্যের পর থেকেই মূলত দপ্তরটির কর্মকর্তাদের মাঝে বেড়েছে অস্বস্তি ও কানাঘুষা। এদিকে আদৌ ওই উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গ্রেফতার হবেন কী না এ নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।

সম্প্রতি মাউশির দ্বিতীয় শীর্ষ এক কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মন্ত্রণালের কাছে তাদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (০৪ আগস্ট) ও গত কয়েকদিন মাউশির বিভিন্ন কর্মকর্তার রুম ঘুরে দেখা যায়, আগের সেই প্রাণচাঞ্চল্য আর নেই। যেন এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে দফরতরটিতে।

প্রায় প্রতিটি রুমেই কর্মকর্তারা নানা কানাঘুষোয় ব্যস্ত। কেউ আসলে তার সঙ্গে কথা বলে দ্রুত বের করে দিচ্ছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলতেও চাচ্ছিলেন না কোনো কর্মকর্তা। 


বিজ্ঞাপন


নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা ভবনের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, প্রশ্নফাঁস সিন্ডিকেটের সঙ্গে শুধু চন্দ্র শেখরই নন, আরো অন্তত চার জন শীর্ষ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন।

এদের মধ্যে দুই শীর্ষ কর্মকর্তার উচ্চমান সহকারী আহসান হাবিব ও অফিস সহকারী নওশাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ঐসব শীর্ষ কর্মকর্তা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।

অন্যদিকে মাউশির কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে পদোন্নতি প্রদান, নিয়োগ, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলিসহ বিভিন্ন কাজ করিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একটি চক্র টাকা দাবি করছে-এমন অভিযোগ এনেছে তারা। এই চক্রের প্রলোভনের ফাঁদে না জড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে জারি করা হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তি।

সোমবার (১ আগষ্ট) জারি করা মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে পদোন্নতি, নিয়োগ, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলিসহ বিভিন্ন কাজ করিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফোন করে, ই-মেইল, এসএমএস বা চিঠি পাঠিয়ে টাকা দাবি করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মাউশির কোনো কাজে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেনের প্রয়োজন নেই। এ ধরনের প্রতারক চক্র বা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও এর অধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে ই-মেইল, এসএমএস, ফোন এবং চিঠিপত্র কিংবা তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের ভিত্তিতে কাউকে কোনো ধরনের প্রলোভনের ফাঁদে না জড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হলো।

চলতি বছরের ১৩ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) ৫১৩টি পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা হয়। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পরীক্ষা চলাকালে ইডেন কলেজ কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্রের উত্তরসহ সুমন জোয়ার্দার নামে এক চাকরিপ্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। তার প্রবেশপত্রের উল্টো পিঠে ৭০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর লেখা ছিল। 

পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সুমন ও সাইফুল পরীক্ষার আগেই প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করেন বলে দাবি করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৪ মে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রভাষক রাশেদুল, মাউশির উচ্চমান সহকারী আহসান হাবীব ও অফিস সহকারী নওশাদকে গ্রেফতার করা হয়। ঐ ঘটনার এক সপ্তাহ পরে সেই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে মাউশি। 

এরপর গত ২৪ জুলাই মাউশির কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদারকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (ডিবি)। তিনি ৩১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (ডিবি) সাহাদত হোসেন সুমা গণমাধ্যমকে বলেন, প্রপ্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেটের সঙ্গে চন্দ্র শেখরের সংশ্লিষ্টতার নিয়ে রিমান্ডে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আমরা সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছি।

এসএএস/এআইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর