১৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অনন্য নির্মাণ কৌশলের মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বহুল প্রতীক্ষিত মূল ফটকটি। নান্দনিক স্থাপত্য কৌশল, আলোকসজ্জা ও পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ ফটকটিকে দিয়েছে অনন্য উচ্চতা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দেড় দশকেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলো না দেখার মতো প্রধান ফটক। দীর্ঘ ১৬ বছর পর এমন নান্দনিক ফটক পেয়ে উচ্ছ্বসিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞাপন
কুমিল্লার বিজয়পুরের ঐতিহ্য পোড়ামাটির ফলকে সচিত্র বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও বাংলাদেশ সৃষ্টি প্রেক্ষাপটের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে কুবি’র প্রধান ফটকে।
২ কোটি ২৫ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশাল এই ফটকটির ডানপাশের পোড়মাটির ফলকে ভাষা আন্দোলন, জাতীয় শহীদ মিনার, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র লড়াই, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ, ৭ বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি, স্বাধীন বাংলাদেশে পতাকা হাতে বিজয় উল্লাস বা পাশের ফলকে জাতীয় সংসদ ভবন, শালবন বৌদ্ধবিহার, বাঘা মসজিদ, হাডুডু, ফুটবল, ক্রিকেটসহ গান-নৃত্য ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের জীবন সংগ্রাম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গেল বছরের ১৬ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পের আওতায় শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কাজ। কাজ শেষে স্বউচ্চ মহিমায় দাঁড়িয়ে থাকা ফটকটির দুইপাশে বিশেষভাবে পানি ধারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পোড়ামাটির ফলকের নান্দনিক চরিত্রের সংমিশ্রণের পাশাপাশি ফটকটির মধ্যাংশে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়াও রয়েছে বিশেষভাবে বাঁকানো ছয়টি স্তম্ভ, গাড়ি চলাচলের রাস্তা, পথচারী চলাচলের রাস্তা। ওয়াচ টাওয়ারের সামনেই রয়েছে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য জায়গা। সম্মুখভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর পাশাপাশি সিরামিক খচিত বঙ্গবন্ধুর নাম ও ছবি শোভা পেয়েছে। টাওয়ারটির দুইপাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালায় খোঁদাই করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বাকানো স্তম্ভে আনসার সদস্যদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশ্রামাগার ও শৌচাগার।
রাতের আলোয় ফটকটির এক আলাদা সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সবসময়ই শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের ভিড় জমে গেইটটিকে কেন্দ্র করে। আড্ডা দেওয়া, গল্পের আসর জমানোসহ ছবি তোলা হয় এখন ক্যাম্পাসের প্রধান ফটককে কেন্দ্র করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান মিয়া বলেন, ‘নতুন ফটকে একটা অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে। ফটকের নান্দনিক স্থাপত্য ও কারুকার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে। ফলে এখানে শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের জমে। যেখানেই থাকি না কেন একবার এসে ফটকে উঁকি দিতে মন উতলা থাকে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আগে এমন হতো যে, ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে নবীন শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা জিজ্ঞেস করত বিশ্ববিদ্যালয় কোন দিকে। তখন আমাদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ কাজ করত এই ফটক নিয়ে। এখন নতুন ফটক হওয়াতে ভালো হয়েছে।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি ও আবেগের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে প্রধান ফটক। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অসংখ্য আশার বাণীর বাস্তব রুপ এই প্রধান ফটক। সমাবর্তনে ফটকটি পেলে আমাদের জন্য স্বরণীয় হয়ে থাকত।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এই ফটকটির মাধ্যমে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে। যারা এইরকম নান্দনিক একটি ফটকের পরিকল্পনা করেছেন ও বাস্তবায়ন করেছেন, বিশেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের চমৎকার কাজের ফসল হিসেবে আমরা এই দৃষ্টিনন্দন ফটকটি পেয়েছি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকেও তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’
টিবি