মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) নানা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও বাস্তবে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল নগণ্য। ঘোষিত অনুষ্ঠানগুলো মূলত প্রশাসন ও শিক্ষকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে দিবসটি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক না হয়ে অনেকটা অনাড়ম্বরভাবে পালিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর প্রকাশিত নোটিশে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, শিক্ষক বনাম শিক্ষার্থীদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ ছিল। তবে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার মতো কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। বিশেষ করে, ওসমানী হলে নির্ধারিত প্রীতি ফুটবল ম্যাচটি শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হয় এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটিও আর অনুষ্ঠিত হয়নি।
বিজ্ঞাপন
এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা গেছে। ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আসিফ বলেন, ‘বিজয় দিবসের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা ছিল না বললেই চলে। এমনকি আয়োজনে জাঁকজমকপূর্ণতারও ব্যাপক ঘাটতি ছিল। হলভিত্তিক শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের আয়োজনে রাখা হয়নি। এছাড়া বিভাগীয় প্রধানদের মনোনীত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো দৃশ্যমান প্রচার-প্রচারণা বা সরাসরি আহ্বান ছিল না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী কর্মসূচির সময়সূচি সম্পর্কে জানতেই পারেননি। তার ভাষ্যমতে, ‘প্রশাসন নিজেদের সুবিধামতো আয়োজন করেছে, তাই তারাই উদযাপন করেছে।’
এদিকে বুটেক্স স্পোর্টস ক্লাবের এক সদস্য জানান, প্রতিবছর বিজয় দিবসে আন্তঃহল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকলেও এবার তাদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ‘খেললে মারামারি হতে পারে’ এমন অজুহাতে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব অর্থায়নে ও উদ্যোগে খেলার আয়োজন করতে বাধ্য হন।
তবে আবাসিক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কর্মসূচির বাইরে হলভিত্তিকভাবে বিজয় দিবস পালন করেছেন। বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রীতি ম্যাচ ও রাতে উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। তবে এসব আয়োজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির কোনো যোগসূত্র ছিল না।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিচালক ও বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রকাশিত নোটিশ অনুযায়ী সব অনুষ্ঠান হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেনি।’ প্রীতি ম্যাচ না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। প্রচারণার অভাব প্রসঙ্গে তিনি জানান, জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজিস্ট্রার দপ্তরের অধীন এবং তিনি সেখানেই দায়বদ্ধ।
অন্যদিকে উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষক বনাম শিক্ষার্থীদের খেলা হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা না আসায় তা সম্ভব হয়নি।’ তিনি আরও জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে অনেক শিক্ষক বঙ্গভবনে আমন্ত্রিত থাকায় ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন না। এছাড়া একজন শিক্ষক আহত হওয়া এবং বিকেলের দিকে উপাচার্য মহোদয় ক্যাম্পাসে না থাকায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষকরা হুট করে খেলার স্থান পরিবর্তন করেছিলেন। ওই সময় শিক্ষার্থীরা নিজ হলের অভ্যন্তরীণ ম্যাচে ব্যস্ত থাকায় কেন্দ্রীয় খেলায় অংশ নিতে পারেননি। তবে ওই দিন শিক্ষক বনাম কর্মকর্তা এবং শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যে কয়েকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে শিক্ষার্থীদের কোনো উপস্থিতি ছিল না।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ছুটিতে থাকায় অনুষ্ঠানগুলোর বিস্তারিত সম্পর্কে তিনি অবগত নন।
জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুটেক্স প্রশাসনের ঘোষিত কর্মসূচি ও বাস্তবায়নের মধ্যে এই বিস্তর ফারাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদযাপন প্রক্রিয়ার আন্তরিকতা ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
প্রতিনিধি/একেবি

