একই প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্নভাবে ৫০ বছর শিক্ষকতা করে বিরল সম্মানে ভূষিত হয়েছেন সিলেটের শীর্ষ দীনি প্রতিষ্ঠান জামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুরের প্রবীণ দুই শিক্ষক।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) এই দুই শিক্ষকের সম্মানে আয়োজন করা হয় ‘পথিকৃৎ শিক্ষক সম্মাননা’ অনুষ্ঠানের। সেখানে তাদের নগদ আর্থিক সহযোগিতাসহ নানা সম্মানে ভূষিত করা হয়।
বিজ্ঞাপন
জামিয়া গহরপু প্রবীণ এই দুই শিক্ষক হলেন- মাওলানা মনির উদ্দিন দত্তপুরী ও হাফেজ শামসুল ইসলাম রতনপুরী।
অনুষ্ঠানে জামিয়ার প্রবীণ ফাজেল, শিক্ষকবৃন্দ ও এলাকার গুণীজন বক্তব্য দেন। বিশেষ মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওলাদে রাসুল আল্লামা আজহার মাদানি ও খলিফায়ে গহরপুরী আল্লামা শফিকুল হক সুরইঘাটি।
অতিথিরা বলেন, অনুষ্ঠানের মধ্যমণি এই দুজনেই বিরল ইতিহাসের কিংবদন্তি। এভাবে একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রত্ব শেষ করে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষকতা জীবনের পাঁচ দশক কাটিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আছে বলে আমাদের জানা নেই। সে অর্থে এটা এক বিরল সম্মাননা অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে এই দুই কীর্তিমানের জীবনের ওপর নির্মিত ভিজ্যুয়াল স্মারক প্রদর্শন করা হয়। যেখানে তারা নিজেরাই বলছিলেন তাঁদের শৈশব, বাল্যকাল থেকে নিয়ে বার্ধক্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা। ‘পথিকৃৎ শিক্ষক সম্মাননা; পাঁচ দশকের স্মারক’ এই ভিজ্যুয়াল চিত্র প্রদর্শনীর পর দর্শক শ্রোতাদের মাঝে ভাবগম্ভীর পরিবেশ বিরাজ করে। চোখ মুছতে মুছতে ভিডিওর শেষ ধারা বর্ণনা দেখছিলেন কেউ কেউ।
জামিয়ার মুহতামিম মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন আহমদ গহরপুরী তাঁর বক্তব্যে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি হুজুরদ্বয়ের ছাত্র। কিন্তু জামিয়ার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার উস্তাদগণ কখনো আমাকে ছোট বা অনুপযুক্ত শব্দে সম্বোধন করেননি। যদিও আমার প্রতি তাঁদের সম্পূর্ণ অধিকার সুনিশ্চিত। তাঁরা ছুটি নেওয়ার জন্য আমার কাছে আসতেন। বিষয়টা আমার জন্য বিব্রতকর মনে হতো। আমি কীভাবে আমার শিক্ষকের ছুটি দেবো! তাই বলে রেখেছিলাম, আপনাদের যেকোনো ছুটির বিষয়ে আপনাদের পূর্ণ এখতিয়ার আছে। যখন প্রয়োজন হবে, চলে যাবেন।’

জামিয়ার মুহতামিম বলেন, ‘জামিয়ার বয়স প্রায় ৬৯ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে এখানে অনেকেই ছিলেন। সম্মান ও সুনামের সাথেই ছিলেন। কিন্তু সবার ভাগ্যে আল্লাহ এই বিশেষ নেয়ামত রাখেননি। আমাদের এ দুজন শিক্ষক তাঁদের উস্তাদের স্মৃতির বাগান ছেড়ে যেতে পারেননি। তারা আজ পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করছেন। এবং তাঁরা চান, এভাবে ইলমের খেদমতে থেকে থেকেই যেনো জীবনের শেষ দিন আসে।’
জামিয়ার পক্ষ থেকে তাদের জন্য অমূল্য হাদিয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কুরআনুল কারীম, পরিধেয় পোশাক, ব্যবহার্য আসবাবপত্র, সুন্নাহ গিফট, জামিয়া ও ফুজালাদের অর্থায়নে বিশেষ হাদিয়া ও ওমরাহ সমপরিমাণ খরচ প্রদান করা হয়।
উস্তাদদ্বয়ের মহান হাতে এসব হাদিয়া তোলে দেন আরেক মহাত্মা দরবেশ খলিফায়ে গহরপুর রহ. আল্লামা শফিকুল হক সুরইঘাটি। জামিয়ার প্রিন্সিপাল বলেন, বড়দের হাতে হাদিয়া তুলে দেওয়ার জন্য খলীফায়ে গহরপুরীর হাতই উপযুক্ত।
পরে আল্লামা আজহার মাদানির দোয়ার মাধ্যমে সমাপ্ত হয় পথিকৃৎ শিক্ষক সম্মাননার এই অনন্য আয়োজন।
জেবি

