বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বুয়েটে চান্স পেলেও ভর্তি ফি নিয়ে দুশ্চিন্তায় মেহেদীর পরিবার

মো. জাহিদ হাসান মিলু
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২২, ০৯:১৪ এএম

শেয়ার করুন:

বুয়েটে চান্স পেলেও ভর্তি ফি নিয়ে দুশ্চিন্তায় মেহেদীর পরিবার

অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দিনমজুরের ছেলে মেহেদী হাসান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের (এমএমই) বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। পরিবারের শত প্রতিকূলতার পরও তিনি থমকে না গিয়ে সহপাঠী ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় লেখাপড়া চালিয়ে এলাকাবাসীর অনুকরণীয় যুবকে পরিণত হয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কুজিশহর ঘুরনগাছ গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন একজন দরিদ্র মানুষ। সংসারের চাহিদা মিটাতে তিনি স্থানীয় হাসকিং মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছেন। দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে মেহেদী হাসান সবার বড়। মা নাছিমা বেগম গ্রাম্য গেরস্থদের ক্ষেতখামারে কাজ করে স্বামীকে সহায়তা করেন। দিনমজুরির কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের দুই বেলা খাইয়ে কোনোমতে দিন চলে দরিদ্র ওই পরিবারটির।


বিজ্ঞাপন


মেহেদী হাসান জেলার রুহিয়া ব্রাইট স্টার কেজি অ্যান্ড মডেল স্কুলে নার্সারি থেকে পড়াশোনা শুরু করেন। পিএসসি এবং জেএসসিতে পান জিপিএ-৫। এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস এবং দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকেও জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন। ভালো ফলাফল করতে তিনি প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করেন।

বই কেনার মতো টাকা পয়সা না থাকায় বাড়ির গাছপালা বিক্রি করে তার বই কিনে দেন দরিদ্র বাবা। মোবাইল কেনার সামর্থ্য না থাকায় অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি মেহেদী। অর্থাভাবে কোচিং করারও সামর্থ্য ছিল না। অবশেষে প্রথম আলো পরিচালিত গুড্ডি ফাউন্ডেশনের শরণাপন্ন হন। মোবাইলের অভাবে গুড্ডি ফাউন্ডেশনের অনলাইন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। পরে কর্তৃপক্ষ অফলাইনে মেধা যাচাই পরীক্ষার ব্যবস্থা নিলে মেহেদী হাসান উত্তীর্ণ হন এবং ঢাকায় গিয়ে ফ্রি কোচিংয়ের সুযোগ পান।

মেহেদী হাসান বুয়েটে চান্স পাওয়ায় বাবা-মাসহ গ্রামের লোকজন আনন্দিত। কিন্তু দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে তার লেখাপড়ার খরচ বহন করা সম্ভব নয় ভেবে তারা আছেন চাপা কষ্টে।


বিজ্ঞাপন


mehedi2

মেহেদী হাসান ঢাকা মেইলকে জানান, লেখাপড়ায় ভালো বলে স্কুলের শিক্ষকরা তার খোঁজখবর নিতেন এবং বিনা বেতনে প্রাইভেট পড়াতেন। এসএসসি পাস করার পর কলেজ পর্যায়েও শিক্ষকদের কাছে বিনা টাকায় প্রাইভেট পড়েন। সহপাঠী ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় পেছনের দিকে না তাকিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

মেহেদী বলেন, 'বুয়েটে ভর্তি হতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। এত টাকা কোথায় পাবো। এ নিয়ে বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার দুশ্চিন্তায় আছি। ভর্তি হতে পারলে পরে হোস্টেল খরচ টিউশনি করিয়ে হয়তো ব্যবস্থা করতে পারব। কেউ আমাকে সহযোগিতা করতে চাইলে আমি তা গ্রহণ করবো।’

মেহেদীর বাবা আবুল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, 'বিশ বছর ধরে কুলির কাজ করছি। বাড়িতে বসে থাকলে পরিবার অচল হয়ে যায়। আমার স্ত্রীও অন্যের বাড়িতে কাজ করে। ছেলে-মেয়েগুলোকেও অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছি। এখন ছেলে বুয়েটে চান্স পেয়েছে। সবাই আমার সুনাম করছে। এতেই আমি অনেক খুশি। কিন্তু ছেলের বুয়েটে ভর্তির ও লেখাপড়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। সে যেন ভালো ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে।’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, 'ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় সহযোগিতা করা হয়। বুয়েটে চান্স পাওয়া মেহেদী হাসানের লেখাপড়ার ব্যাপারেও সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আল আজাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, 'মেহেদী বুয়েটে চান্স পেয়েছে, এটি অত্যন্ত খুশি ও আনন্দের বিষয়। আমি তাকে অভিনন্দন ও স্বাগত জানাই। ব্যক্তিগতভাবে মেহেদী যথাসাধ্য সহযোগিতা করবো।’

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর