সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: ২০ বছরেও হয়নি কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই

লাবিব বসুনিয়া, ঢাকা মেইল
প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৭ এএম

শেয়ার করুন:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: ২০ বছরেও হয়নি কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে গত বছর একটি কমিটি গঠন করা হলেও কাজের অগ্রগতি দেখা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩৮টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটের মধ্যে মাত্র ১১টি বিভাগে অ্যালামনাই কমিটি আছে। এর মধ্যে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, সমাজকর্ম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ভূগোল ও পরিবেশ, ইতিহাস এবং সংগীত বিভাগ তুলনামূলকভাবে সক্রিয়।


বিজ্ঞাপন


ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুরশিদা বিনতে রহমান বলেন, আমাদের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আছে তবে তা সক্রিয় নয়। দুই থেকে তিন বছর আগে এটি গঠন করা হয় এবং একটি প্রোগ্রামও বাস্তবায়ন করা হয়। এরপর থেকে আর কোনো কার্যক্রম হয়নি। কারণ, ড. নাসির আহমেদ স্যারকে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি বাইরে থাকায় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

অল্প কিছু বিভাগে অ্যালামনাই সচল থাকলেও কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো ঐক্যবদ্ধ কাঠামো নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২০ বছরেও গঠন হয়নি কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই। ফলে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক দৃঢ় হয়নি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অ্যালামনাইদের যোগাযোগ ও সম্প্রীতির অভাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল বাসার সুমন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই গঠন সময়ের অনিবার্য দাবি। একটি অ্যালামনাই কেবল স্মৃতির সংগঠন নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় শক্তি সঞ্চারী সেতুবন্ধন। শিক্ষার্থী-শিক্ষক-প্রাক্তনের এই ত্রয়ী সম্পর্কেই জন্ম নেয় উৎকর্ষের আলো, যা দেশ ও সমাজকে আলোকিত করতে পারে। সুতরাং, কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই হবে অতীতের গৌরব, বর্তমানের শক্তি আর ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকা।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রাব্বি বলেন, অ্যালামনাইয়ের মাধ্যমে সাবেক শিক্ষার্থীরা এক প্ল্যাটফর্মে একত্র হতে পারে, অভিজ্ঞতা ও সুযোগ ভাগাভাগি করতে পারে। একটি শক্তিশালী অ্যালামনাই থাকলে সাবেক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে সহযোগিতা করতে পারত, বর্তমান শিক্ষার্থীদের মেন্টরশিপ দিত, ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রামে অংশ নিত এবং বিদেশি সুযোগ-সুবিধা আনতে ভূমিকা রাখত। এছাড়া তহবিল সংগ্রহ ও নেটওয়ার্ক গড়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও এগিয়ে নিতে পারত।


বিজ্ঞাপন


অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের সাবেক শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম মনির বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ধরে রেখেছে। নেই আবাসন, নেই বড় ক্যাম্পাস, তবুও প্রতিষ্ঠানটির প্রতি শিক্ষার্থীদের গভীর অনুরাগ রয়েছে। ছোট্ট শান্ত চত্ত্বর, কাঁঠালতলা কিংবা টিএসসিতে সিনিয়র-জুনিয়রের যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, পড়াশোনা শেষের পর তা প্রায় হারিয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং প্রজন্মের মধ্যে বন্ধন রক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই গঠন অপরিহার্য।

কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই গঠনের জন্য শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটি গঠনের এক বছর পেরোলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, সেন্ট্রাল অ্যালামনাই গঠনের কাজ চলমান। আমরা ইতিমধ্যেই খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছি। সাবেক শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে দায়িত্ব বণ্টনের পর কিছু সেক্টরের গড়িমসির কারণে কাজের অগ্রগতি ধীর হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জবি ২০০৫ সালে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। এখন কলেজ সময়কার শিক্ষার্থীদের অ্যালামনাইয়ে যুক্ত করা হবে কি না, এ বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। মতপার্থক্যের কারণে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছে। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হলো, তাদের যুক্ত করা হলে তা আরও ভালো হবে। আমি আশা করছি, সমস্ত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে দ্রুতই সেন্ট্রাল অ্যালামনাই গঠন করতে পারব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, গত ২০ বছরেও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কাজ চলছে, সময় লাগবে। প্রথমে সব বিভাগে অ্যালামনাই গঠন করা হবে, এরপর কেন্দ্রীয়ভাবে করা হবে। বিষয়টি এমন নয় যে আজ উদ্যোগ নিলাম আর কালই সম্পন্ন হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি, তারা কাজ করছে। তবে নির্দিষ্ট সময় বলতে পারছি না, কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে।

এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর