সরকারের ঘোষিত পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের দাবিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের আন্দোলন ১৫তম দিনে গড়িয়েছে। টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকরা রাজধানীর রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তারা বলছেন, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও এখনো জাতীয়করণের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেনি, তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শুরু হয় তাদের অবস্থান ধর্মঘট। বেলা ১২টার দিকে শিক্ষকরা প্রেসক্লাব থেকে লং মার্চে অংশ নিয়ে শিক্ষা অধিদফতরের দিকে রওনা হন। পরে তারা আবার প্রেসক্লাবের সামনে ফিরে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
বিজ্ঞাপন
অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. সামছুল আলম, আর সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব মোহাম্মদ আল-আমিন। কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন খেলাফত মজলিস, এনসিপি, ইসলামী ঐক্যফ্রন্ট, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট ও জমিয়তুল মোদাচ্ছির–এর প্রতিনিধিরা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে ১০৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার ফাইল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরের পর এই প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু গত তিন মাস ধরে ফাইল অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় শিক্ষকরা চরম হতাশায় ভুগছেন। তারা অনুদানবিহীন স্বীকৃত মাদরাসাগুলোর এমপিওভুক্তির জন্য দ্রুত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানান।
শিক্ষকরা বলেন, সরকারের ঘোষিত পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে হাজারো শিক্ষক পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবেন। তারা দাবি করেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ যে ১০৮৯টি প্রতিষ্ঠানের ফাইল যাচাই-বাছাই করে প্রেরণ করেছে, তা দ্রুত অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করতে হবে।
অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা আরও বলেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অনুদানবিহীন সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার এমপিও আবেদন গ্রহণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো প্রাক-প্রাথমিক পদ সৃষ্টি এবং ইবতেদায়ী মাদরাসার জন্য আলাদা একটি অধিদফতর স্থাপন করারও দাবি জানান তারা।
বিজ্ঞাপন
আন্দোলনে থাকা এক শিক্ষক বলেন, আমরা সরকারের প্রতিশ্রুতির অপেক্ষায় আছি। বছরের পর বছর ধরে শুনছি জাতীয়করণ হবে, কিন্তু সেই কথাগুলো কেবল কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। আজ আমাদের কোনো পথ খোলা নেই, তাই আন্দোলনই শেষ ভরসা।
বক্তারা জানান, সরকারের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ছাড়া তারা ঘরে ফিরবেন না। আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, অবস্থান ধর্মঘট, লং মার্চ এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে তারা দাবি আদায়ে চাপ বজায় রাখবেন।
তাদের মতে, জাতীয়করণের এ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় দেশের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ছে। শিক্ষকরা বিনা বেতনে বছরের পর বছর শিক্ষাদান করছেন, অথচ জীবিকা নির্বাহের নিশ্চয়তা নেই। আন্দোলনের ১৫তম দিনেও তারা প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
শিক্ষকদের ভাষায়, এটি কেবল এমপিওভুক্তির দাবি নয়, এটি তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। আমাদের সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর একমাত্র উপায় হলো জাতীয়করণ বাস্তবায়ন। সরকার যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে এই আন্দোলন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে, বলেন আন্দোলনে থাকা শিক্ষকরা।
এএইচ/এইউ

