তেভাগা আন্দোলনের নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এই বিপ্লবী নেতা ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন রাজধানী ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত দিনাজপুরের কৃষি কলেজ ১৯৯৯ সালে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এ উন্নীত হয়।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তেভাগা আন্দলোনের ‘জনক’ হিসেবে তাকে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান অসামান্য।
বিজ্ঞাপন
১৯০০ সালে দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ। এ অঞ্চলের একজন ছোট জোতদার মৌলভী সালামত উদ্দীনের জ্যেষ্ঠ পুত্র তিনি। গ্রামে শৈশবে লেখাপড়ার হাতেখড়ি হলে সেতাবগঞ্জ থেকে প্রবেশিকা, রাজশাহী কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করেন। পরবর্তীতে ভারতের উত্তর প্রদেশে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ এবং আইনে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।
ঠাকুরগাঁও আদালতে উকিল হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দিনাজপুর এসএন কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতাও করেন। এক পর্যায়ে দিনাজপুর জেলা আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন।
হাজী দানেশ ছাত্র জীবনেই কৃষকের ওপর অত্যাচারের প্রতিকার কল্পে কৃষক আন্দোলনে আকৃষ্ট হন। তিনি ১৯৩৮ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির অঙ্গসংগঠন কৃষক সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেন। তার নেতৃত্বে দিনাজপুর জেলায় টোল আদায় বন্ধ ও জমিদারি উচ্ছেদের দাবিতে কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়। আন্দোলনকালে তিনি কারাভোগও করেন। নীলফামারী জেলার ডোমারে ১৯৪২ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় কৃষক সম্মেলনে অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন হাজী দানেশ।
সময়ে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হজ পালন করেছিলেন মোহাম্মদ দানেশ। সে কারণে তিনি অল্প বয়স থেকে ‘হাজী’ পরিচিতি পেয়েছিলেন।
বিজ্ঞাপন
হাজী দানেশ তেভাগা আন্দোলনের নেতা হিসেবেই সমধিক পরিচিত। উত্তরবঙ্গই ছিল তেভাগা আন্দোলনের সুতিকাগার। উত্তরবঙ্গে এই আন্দোলনের উদ্ভব হওয়ার কারণ ছিল উত্তরবঙ্গ বরাবর জোতদার প্রধান তথা জোতদার শাসিত এলাকা। যারা এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং শত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আন্দোলনকে সার্থকতার উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়ার মরণপণ সংগ্রাম করেন সেই নেতারা অধিকাংশই ছিলেন উত্তরবঙ্গবাসী। তাদের মধ্যে দিনাজপুরের হাজী মো. দানেশ, রিপন রায় (পার্বতীপুর থেকে), গুরুদাস তালুকদার, বরদা চক্রবর্তী, রূপনারায়ন রায়, হেলেকেতু সিং প্রমুখ বিপ্লবী নেতারা ছিলেন আন্দোলনের স্বাপ্নিক রূপকার।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকাল ১১টায় দিনাজপুরের গোড়-এ-শহীদ বড় ময়দান সংলগ্ন জামে মসজিদের পাশে অবস্থিত হাজী মোহাম্মদ দানেশের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
হাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামানের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র হালদার এর নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হাবিপ্রবি প্রশাসন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. শ্রীপতি সিকদার, প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মামুনুর রশীদ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. ইমরান পারভেজ প্রমুখ।
পরে জোহর নামাজ শেষে হাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় মসজিদে হাজী দানেশের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
প্রতিনিধি/এইচই

