শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শূন্যপদ থাকলেও সুপারিশ বঞ্চিত ১৮তম নিবন্ধনের কলেজ প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

DRU
শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ঢাকা মেইল

মাদরাসায় হাজারখানেক শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের আইসিটি বিষয়ক কলেজ প্রার্থীরা সেখানে নিয়োগের সুপারিশ পাননি। অথচ একই বোর্ডের অধীনে, একই প্রশ্নপত্রে উত্তীর্ণ এবং সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এই প্রার্থীদের মাদরাসা পর্যায়ের নিয়োগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন প্রার্থীরা। একই সঙ্গে তারা দাবি আদায় না হলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।


বিজ্ঞাপন


প্রার্থীরা জানান, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৪০টি কলেজ পছন্দ দিতে পারবেন। একইসঙ্গে গণবিজ্ঞপ্তির ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়, দেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইচ্ছা থাকলে ‘Others’ অপশনে ‘Yes’ দিয়ে তিনটি প্রেফারেন্স পূরণ করতে হবে। এনটিআরসিএ অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী তারা প্রথম পছন্দে কলেজ ও দ্বিতীয় পছন্দে মাদরাসা নির্বাচন করেন।

কিন্তু বাস্তবে তারা কেউই মাদরাসা পর্যায়ের কোনো পদের জন্য সুপারিশ পাননি, যদিও সেখানে বিপুলসংখ্যক শূন্যপদ রয়েছে।

প্রার্থীদের দাবি, শুরুতে শূন্যপদের সংখ্যা গোপন রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরে ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, মোট শূন্যপদ ছিল ১ হাজার ৬০৪টি। সেখানে উত্তীর্ণ প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৬৬৭ জন। এর মধ্যে কলেজে শূন্যপদ ছিল মাত্র ১৫১টি, কিন্তু কলেজের জন্য পাশ করানো হয় ১ হাজার ৪৯২ জনকে। বিপরীতে মাদরাসায় শূন্যপদ ছিল ১ হাজার ৪৫৩টি, যেখানে টিকেছেন মাত্র ১৭৭ জন।

অর্থাৎ মোট সুপারিশ পেয়েছেন মাত্র ৩২৮ জন, বাকিরা সুপারিশ থেকে বাদ পড়েছেন। আর মাদরাসার প্রায় ১ হাজার ২০০টি পদ ফাঁকা রয়ে গেছে।


বিজ্ঞাপন


প্রার্থীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৭তম নিবন্ধন পর্যন্ত কলেজ ও মাদরাসার ক্ষেত্রে ‘Others’ অপশনে আলাদা কোনো শর্ত ছিল না। কিন্তু ১৮তম নিবন্ধনে সফটওয়্যারে পরিবর্তন এনে কলেজ প্রার্থীদের মাদরাসার প্রেফারেন্স দিতে সুযোগ দেওয়া হলেও তা বাস্তবে কার্যকর করা হয়নি।

আবেদনের আগে বিষয়টি নিশ্চিত করতে তারা এনটিআরসিএ অফিসে গিয়েছিলেন। সেখানকার কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করলেও শেষপর্যন্ত কোনো ফল হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।

সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীরা জানান, মাদরাসা অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা শূন্যপদে কলেজ প্রার্থীদের নিতে আপত্তি করেননি। তাদের বক্তব্য ছিল—‘এনটিআরসিএ সুপারিশ দিলে নিয়োগে সমস্যা নেই’। কিন্তু এনটিআরসিএ কোনো সুপারিশ দেয়নি।

এই বিষয়ে শিক্ষা সচিব, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা সচিব, এমনকি শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টার কাছেও স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। সচিবালয়ের কিছু কর্মকর্তা বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিলেও এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।

বক্তারা আরও বলেন, মাদরাসায় এখনো আইসিটি বিষয়ের যথেষ্ট শিক্ষক নেই। ফলে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে। এটি শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির নয়, বরং জাতির জন্যও বড় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেন তারা।

তারা প্রশ্ন রাখেন—একই বোর্ড, একই পরীক্ষা, একই যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও শুধু কলেজ সনদ থাকার কারণে কেন তারা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হবেন? এটিকে তারা ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ’ এবং ‘নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈষম্য’ বলে আখ্যা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে কলেজ প্রার্থীরা পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন, মাদরাসায় আইসিটি বিষয়ে শূন্যপদে অবিলম্বে কলেজ প্রার্থীদের সুপারিশ, আগামী ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যোগদানের ব্যবস্থা, শূন্যপদ গোপনের দায়ে এনটিআরসিএ’র জবাবদিহি, ভবিষ্যতে অপূর্ণাঙ্গ বা অস্পষ্ট শর্তাবলী বন্ধ, এবং এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন।

তারা জানান, এই যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হলে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবেন, তবে তা আইনি ও শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে হবে।

তবে এনটিআরসিএ বা সংশ্লিষ্ট দফতরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষক নিয়োগের মতো স্পর্শকাতর প্রক্রিয়ায় এই ধরনের ভিন্নমত ও অসন্তোষ সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এএইচ/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর