ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন পর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে তৈরি হয়েছে প্রাণবন্ত, উৎসবমুখর পরিবেশ। অনেক বাধা-বিপত্তি ও রাজনৈতিক উত্তাপ পেরিয়ে এবারের নির্বাচন হচ্ছে নতুন বাস্তবতায়। আশা করা হচ্ছে, নির্বাচনটি হবে ভয়হীন, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক। যদিও প্রথম দিনের প্রচারণায় ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, ইনস্টিটিউট ও আবাসিক হলে প্রার্থীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে প্রচারে নেমেছেন। সারা দিনজুড়েই শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতিতে মুখর ছিল ক্যাম্পাস।
বিজ্ঞাপন
তথ্য বলছে, ডাকসু নির্বাচনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ছাত্রী রয়েছেন ৬২ জন। মোট ২৮টি পদের জন্য এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ভিপি পদে লড়ছেন ৪৫ জন, জিএস পদে ১৯ জন এবং এজিএস পদে ২৫ জন প্রার্থী। সম্পাদকীয় ১৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৩৮ জন এবং সদস্য পদে আছেন ২১৭ জন প্রার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই, আপিল ও প্রত্যাহার শেষে এই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নিরাপদ ও নিরপেক্ষ ভোটের জন্য নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রথম স্তরে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রক্টরিয়াল টিম ও বিএনসিসি, দ্বিতীয় স্তরে পুলিশ এবং তৃতীয় স্তরে থাকবে সেনাবাহিনী, যারা প্রয়োজনে ক্যাম্পাসে অবস্থান করবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।

নির্বাচনের আগের দিন (৮ সেপ্টেম্বর) ও ভোটের দিন (৯ সেপ্টেম্বর) বহিরাগতদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশনও। ভোটগ্রহণ ও ফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রগুলো থাকবে সুরক্ষিত।
বিজ্ঞাপন
এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম সংগঠন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ বিভিন্ন জোট ও সংগঠন। কেউ শহীদ মিনারে, কেউ স্মৃতি চিরন্তনে, আবার কেউ কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে প্রচার শুরু করেছেন।
তবে প্রথম দিনেই ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ দাবি করেছে, চারুকলা অনুষদের সামনে তাদের ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং এক নারী প্রার্থীর ছবিও বিকৃত করা হয়েছে। বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনী পরিবেশকে নষ্ট করার অপচেষ্টা। তারা এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত শনাক্ত ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।
অতীতে ডাকসু নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষ ও সহিংসতার নজির থাকলেও এবারের পরিবেশ অনেকটাই ভিন্ন। এখন আর ‘গেস্টরুম সংস্কৃতি’ নেই, নেই জোরপূর্বক রাজনৈতিক মিছিলে নেওয়ার চর্চাও। শিক্ষার্থীরা গণরুমের গাদাগাদির অভিজ্ঞতা ছাড়িয়ে পেয়েছেন তুলনামূলক স্বাধীন পরিবেশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এবারের ডাকসু নির্বাচন যেন রাজনীতির একচ্ছত্র আধিপত্য না এনে বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, গবেষণা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। তারা এমন নেতৃত্ব চান যারা ছাত্রকল্যাণে কাজ করবেন, শুধু সংগঠনের স্বার্থে নয়।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, এসেই ডাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা পাচ্ছি। আগের ভয়ভীতির পরিবেশ নেই। এটা আমাদের জন্য বড় সুযোগ। আরেকজন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বদলাতে এই নির্বাচনের বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে পরিবেশ ভালো হলেও, যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এ চিত্র বদলে দিতে পারে। তাই শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, প্রশাসন নিরপেক্ষ থেকে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিছিলে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় ছাত্রশিবিরের ২২ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। সেই ঘটনায় অনেকেই হাত-পা হারান। এর প্রতিবাদে শিবিরের কর্মীরা ঢাবি ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেছিল।
এছাড়া ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনের আগে ছাত্রশিবিরের ভিপি পদপ্রার্থী আমিনুল ইসলামসহ ৫ জন ঢাবি শিবিরের নেতাকর্মী প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
এইউ

