শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ডিগ্রি পাস করা প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই বেকার!

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০২৫, ০৭:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

ডিগ্রি পাস করা প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই বেকার!
‘বাংলাদেশে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার। ছবি: সংগৃহীত

দেশে ডিগ্রি পাস শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট শিক্ষার্থীর ১১ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেকার। শিক্ষার এই বাস্তব চিত্র সামনে এনে জব মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী কারিকুলাম সাজানো ও গুণগত শিক্ষা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (১৬ আগস্ট) এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (ইআরআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এমন তথ্য উঠে আসে। 


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরআই চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।

তিনি বলেন, গুণগত শিক্ষার অভাবই শিক্ষার সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রতিবছর এসএসসিতে ২.৫ লাখ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও বাস্তব শিক্ষার উন্নতি হচ্ছে না। প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়, কিন্তু যারা জিপিএ-৫ পায় না, তারা কোথায় যাচ্ছে—এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে ডিগ্রি পাস শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ শতাংশ। এর মধ্যে ৪.৫ শতাংশ বেকার। তাই জব মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করতে হবে।

আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ১০ লাখের ৪০ ভাগই বেকার!


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে সহায়ক ভূমিকা রাখলেও মূল দায়িত্ব পালন করেছে চীন, রাশিয়া ও জাপানের প্রকৌশলীরা। অথচ স্থানীয় প্রকৌশলীরা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করেছে। মূল সমস্যা হলো চাহিদাভিত্তিক শিক্ষার অভাব।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোন ধরনের পড়াশোনার চাহিদা রয়েছে তা অনুধাবন করে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে কারিকুলাম সাজাতে হবে। গবেষণা ও ল্যাবওয়ার্কের দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, নেপাল ও ভুটানের মতো দেশও উচ্চতর গবেষণায় বাংলাদেশের তুলনায় তিনগুণ বেশি অর্থ বিনিয়োগ করছে।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ধনী-গরিব বৈষম্য, ভৌগোলিক বৈষম্য এবং সামাজিক মূল্যবোধের অবনমন শিক্ষাক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিক্ষকরা জাতীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ বিষয়ে প্রশিক্ষিত নন। স্কিল ছাড়া ডিগ্রি জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে না।

বেকারত্ব দূরীকরণে কারিগরি ও বাস্তব শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো, উদ্যোক্তাদের সুপারিশ গ্রহণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানমাত্রা নির্ধারণ এবং শিক্ষা গ্রহণে লিঙ্গবৈষম্য দূর করার আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়া জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রতিযোগিতা কমিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘সম্পদ’ হিসেবে গড়ে তোলার মতো কারিকুলাম তৈরি করার ওপর জোর দেওয়া হয়।

সেমিনারে মেধার পাচার রোধে ‘ট্যালেন্ট হান্ট পুল’ গঠন করে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উন্নত দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিয়ে পুনরায় দেশে ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. রেজাউল করিম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম আমানুল্লাহ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সাঈদ ফেরদৌস এবং বারডেম হাসপাতালের প্রফেসর ও ডায়াবেটিক সোসাইটির সভাপতি ডা. এ কে আজাদ খান।

আরও পড়ুন: শিক্ষিত বেকার তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির 

ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা বর্তমান সময়ের জন্য অপরিহার্য। কর্মমুখী বিশেষায়িত শিক্ষাই দেশের তরুণ প্রজন্মকে প্রকৃত জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষাকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। চাকরি, গবেষণা, প্রকৌশল, চিকিৎসা—সবক্ষেত্রেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই প্রতিযোগিতার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।

প্রফেসর ফায়েজ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে দূরত্ব কমানোর ওপর গুরুত্ব দেন।

সভাপতির বক্তব্যে আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে বর্তমান শিক্ষা কি শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ করছে? দক্ষতার অভাবে অনেক শিক্ষার্থী বেকার হয়ে ঘুরছে, যা জাতির জন্য উদ্বেগজনক। শিল্পের সঙ্গে শিক্ষার সংযোগ ঘটাতে হবে। উন্নত দেশগুলো চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমেই অগ্রসর হয়েছে।

তিনি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার শিক্ষানীতির উদাহরণ টেনে বলেন, তারা মেধাপাচার প্রতিরোধে সফল হয়েছে। বাংলাদেশকেও ‘ট্যালেন্ট হান্ট পুল’ গঠন করে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠিয়ে, পুনরায় দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হওয়ার পথ দেখাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত দক্ষতা উন্নয়ন সিলেবাস চালু করতে হবে। সার্টিফিকেটনির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, কর্মমুখী শিক্ষা ছাড়া অধিক জনসংখ্যা আশীর্বাদ নয়, অভিশাপে পরিণত হবে।

আরও পড়ুন: বেড়েছে বেকার, চাকরির খোঁজে দেশের ২৭ লাখ ৩০ হাজার মানুষ!

ইআরআই-এর সদস্য সচিব সৈয়দ রেজাউনুল কবির বলেন, উত্তম রাষ্ট্র গঠনে প্রফেশনাল ও সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চাহিদাভিত্তিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ এখনো গর্ব করার মতো শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে আসেনি। শিক্ষকরা যদি রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত থেকে তৃতীয় সারিতে বসে থাকেন, তবে মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষক সমাজ পাওয়া যাবে না।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সাঈদ ফেরদৌস বলেন, এমএ ও এসএসসি সার্টিফিকেটের চেয়ে কর্মমুখী শিক্ষার দিকে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে হবে।

বিইউ /এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর