মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

মধ্যরাতে মারধরের পর আবাসিক ছাত্রকে বের করে দিল ছাত্রলীগ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২২, ০৫:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

মধ্যরাতে মারধরের পর আবাসিক ছাত্রকে বের করে দিল ছাত্রলীগ
ছবি : ঢাকা মেইল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নবাব আবদুল লতিফ হলের কক্ষ থেকে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে গভীর রাতে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। তাদের পছন্দের একজনকে সেখানে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তাকে গালিগালাজ ও মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।


বিজ্ঞাপন


ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. মুন্না ইসলাম। তিনি ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি ওই হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার আবাসিক কার্ড আছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন—হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হাসান জয় ও ছাত্রলীগ কর্মী তওহীদ। 

শুক্রবার (২৪ জুন)  সকালে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ভুক্তভোগীর স্ট্যাটাস থেকে জানা যায়, গতকাল রাত দুইটার দিকে পারভেজ ও তওহীদসহ বেশ কয়েকজন হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষে গিয়ে মুন্নাকে সিট ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন। কিন্তু মুন্না তার বৈধ সিট ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এক পর্যায়ে তওহীদ মুন্নাকে ঘাড় চেপে ধরে টানতে টানতে দরজার কাছে নিয়ে এসে মারধর শুরু করে। পরে তার বিছানাপত্র নামিয়ে দিয়ে ওই সিটে মাকছুদুল হাসান আসিফ নামে এক শিক্ষার্থীকে তুলে দেন। আসিফ বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ২৩০ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। আসিফকে ২৪৮ নম্বর কক্ষে তুলে দিয়ে সেখানে এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে তুলে দেন ছাত্রলীগ নেতারা। 

ঘটনার সময়ের কিছু অডিও-তে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বলতে শোনা গেছে, ‘এই তুই হল থেকে বের হ। বের হবি না? এই বেড বের করে দে। তোর অ্যালোট কোন রুমে। কে তোকে অ্যালোট দিছে?’ এর জবাবে মুন্নাকে বলতে শোনা গেছে, তার এই কক্ষের কার্ড আছে। তিনি আবাসিক শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম হোসেন বলেন, ওই কক্ষে মূলত আরেকজন আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে থাকার জন্য বলা হয়েছিল মুন্নাকে। কারণ তাদের ওই ছেলেটিকেও মানবিক কারণে হলে সিট দিয়েছেন প্রাধ্যক্ষ। তার বিছানাপত্র ফেলে দেওয়ার কথা নয়। এমনকি মারধর করার অভিযোগও ভিত্তিহীন। রাত দুইটার দিকে ছাত্রলীগ সেখানে গেল কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রাত দুইটা হবে না। আরও আগে। আর তারা তাকে (মুন্না ইসলাম) বের করে দেননি। তিনি নিজে ওখানে যাননি। তাদের নেতা-কর্মীরা গিয়েছিলেন।

মুন্না ইসলাম জানান, তার বাবা প্রতিবন্ধী, মা বেঁচে নেই। হল প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে সব প্রক্রিয়া মেনে তিনি হলে ওঠেন। গতকাল রাতে তাঁকে নিজের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার পর বিষয়টি তিনি হলের প্রাধ্যক্ষকে মুঠোফোনে জানান। প্রাধ্যক্ষ তাকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। পরে আজ সকালে প্রাধ্যক্ষ স্যার এসে তাকে আমার সিটে তুলে দেন। তবে তিনি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সেই সাথে এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন।

এদিকে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও একজন সহকারী প্রক্টর গিয়ে মুন্নাকে তার সিটে তুলে দিলে বিপাকে পড়েন ২৩০ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী মাকছুদুল হাসান আসিফ। ২৪৮ নম্বর থেকেও তাকে বের করে দেওয়া হয়। অপর দিকে ২৩০ এর সিটটিও ছাত্রলীগের দখলে। সে বিষয়টি হল প্রাধ্যক্ষকে জানালে প্রাধ্যক্ষ তাকে ২৩০ নম্বর কক্ষে তার সিটেই থাকতে বলেন।

মাকছুদুল হাসান আসিফ জানান, গতকাল রাতে পারভেজসহ কয়েকজন তার রুমে এসে তাকে বিছানাপত্র নিয়ে ২৪৮ এ যেতে বলে। ২৩০ নম্বরের আবাসিক শিক্ষার্থী হয়েও ছাত্রলীগের ভয়ে সে ওই কক্ষে যেতে বাধ্য হয়। পরে শুক্রবার দুপুরে প্রাধ্যক্ষ তাকে ২৩০ এ তার সিটে থাকতে বলেন।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ কর্মী তওহীদ বলেন, মুন্না নামের ওই শিক্ষার্থীকে মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি। আমাদের ছাত্রলীগের এক কর্মী আসিফের (মাকছুদুল) বাবা স্ট্রোক করায় মানবিক কারণে আমরা তাকে ওই সিটে তুলি এবং ওই সিটে থাকা শিক্ষার্থীকে আসিফের সাথে বেড শেয়ার করে থাকতে বলি। কিন্ত মুন্না নামের ওই শিক্ষার্থী আমাদের সাথে তুই-তুকারি করে। পরে হল প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে এ ঘটনার মীমাংসা হয়ে গেছে।

জানতে চাইলে, হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আজ সকালেই আমি হলে এসে মুন্না ও মাকছুদুল নামের দুই শিক্ষার্থীকেই নিজেদের সিটে তুলে দিয়েছি। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাদেরকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে ১৪ জুন রাতে একই হলের ২০৪ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী সজীব কুমারের বিছানাপত্র বের করে দেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেনের অনুসারীরা। সে ঘটনার ১০ দিনের মাথায় আরেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সিট-বাণিজ্য, দখল, আবাসিক শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া, হলের ফটকে তালা দেওয়ার ঘটনা বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। চলমান পরিস্থিতিতে নিয়ে ১৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা মানববন্ধনও করেছিলেন। এরপর প্রাধ্যক্ষ পরিষদ একবার জরুরি সভা করলেও কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর