শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রাকসুতে আবাসিক হলে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ, শিবিরপ্রীতির অভিযোগ

মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)
প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

raksu
১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে রাকসু নির্বাচন। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলে করায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা এই তফসিলের সমালোচনা করেছেন।

ছাত্রনেতাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের দাবিগুলো ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব ও দাবির প্রতি গুরুত্ব দেয়নি প্রশাসন। সবার দাবি ছিল, ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলে নয়, একাডেমিক ভবনে করতে হবে। সবাই এই দাবি জানালেও এটির প্রতি গুরুত্ব দেয়নি প্রশাসন।


বিজ্ঞাপন


নির্বাচন কমিশনারের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩১ জুলাই আচরণবিধি প্রকাশ, ৬ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ৭ ও ১০-১২ আগস্ট ভোটার তালিকায় আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, ১৪ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১৭-১৯ আগস্ট মনোয়নপত্র বিতরণ, ২১ ও ২৪-২৫ আগস্ট মনোনয়নপত্র দাখিল, ২৭-২৮ আগস্ট মনোনয়নপত্র বাছাই, ৩১ আগস্ট প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ২ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ৪ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ, ১৫ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ (প্রত্যেক আবাসিক হলে ভোট গ্রহণ) শেষে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

আরও পড়ুন

স্থায়ী সনদ নেই ৯৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের, কী ব্যবস্থা নেবে ইউজিসি

স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফাহির আমিন বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলের পরিবর্তে একডেমিক ভবনে হলে ভালো হবে। কারণ যেকোনো নির্বাচনী ঝামেলা হলের তুলনায় একাডেমিক ভবনে নিয়ন্ত্রণ করা প্রশাসনের পক্ষে সহজ হবে। আমরাও চাই রাকসুর ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলে হোক।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘রাকসু চলমান শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম। এখানে বর্তমান শিক্ষার্থীরাই ভোটার ও প্রার্থী হবে এটাই স্বাভাবিক। এতে কোনো দলের নেতার ব্যক্তিস্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতে পারে। এক্ষেত্রে উচিত হবে দলের চলমান কর্মীদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়া। 'আমি অছাত্র হলেও আমাকে অংশগ্রহণ করতে দিতেই হবে' বলে 'গো-ধরা' কাম্য নয়।’


বিজ্ঞাপন


Tafsil
গত সোমবার তফসিল ঘোষণা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র অধিকার পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আল শাহরিয়া শুভ বলেন, ‘রাকসুর ভোটকেন্দ্র হল থেকে একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর করতে হবে এবং পুরো ভোটগ্রহণ সিসিটিভির আওতায় আনতে হবে! একদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ আবাসিক নয় আবার কয়েকটি হলের প্রভোস্টদের আচরণ কখনো নিরপেক্ষ ছিল না, বরং এরা দলীয় দাসত্বে ব্যস্ত!’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ফুয়াদুল ইসলাম ভূইয়া ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আবাসিক হলে ভোটকেন্দ্র হলে একদলীয় আধিপত্য বাড়বে। যার প্রমাণ বিগত ডাকসু নির্বাচন। ফলস লাইন তৈরি করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অর্থ ছড়ানোর মাধ্যমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডকে ম্যানুপুলেট করাসহ হলকেন্দ্রিক বহু অভিযোগ এসেছিল তখন। তাছাড়া সব হল প্রভোস্ট নিরপেক্ষ নন। গোটা হলের মেয়েদের চরিত্র নিয়ে অশ্রাব্য মন্তব্য করা বিবেকহীন দলান্ধ শিক্ষক পর্যন্ত এখন দায়িত্বে আছেন।’

আরও পড়ুন

উপাচার্য ছাড়াই চলছে সরকারি-বেসরকারি ৪১ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম

তিনি আরও লিখেন, ‘আবার ৫ তারিখের পর অবৈধ সিট বণ্টন পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে একটি দলের গুপ্ত সদস্যদের আধিপত্য কায়েম। প্রভোস্টদের কাছে সংরক্ষিত ১০ শতাংশ সিট প্রদানে অসততাসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দফায় দফায় একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনসহ একাধিক দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি 'ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রশিবির' ব্যতীত আর কারোর দাবি দাওয়াই প্রশাসন কর্ণপাত করছে না। প্রশাসনের এই প্রবণতা একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ রাকসু আয়োজনের অন্তরায়। অবিলম্বে রাকসুর ভোট কেন্দ্র একাডেমিক ভবনে করতে হবে।’

ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি আব্দুল্লাহ মাসুদ বলেন, ‘আমরা এই প্রশাসনকে এক বিন্দুও বিশ্বাস করি না। তারা রাকসুর তফসিল অনেক দেরিতে ঘোষণা করেছে। এটির মধ্যে অবশ্যই ষড়যন্ত্র রয়েছে। আমরা মনে করি এই প্রশাসন নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হবে। কারণ তারা প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদেরই ঠিকমতো নিরাপত্তা দিতে পারে না। তারা কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে?’

Raksu2
আবাসিক হলে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী ফেসবুকে রাকসুর তফসিলের সমালোচনা করে লিখেন, ‘সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রের নতুন অধ্যায় রাকসু! রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক মুহূর্ত রচিত হচ্ছে। এনসিপি-শিবির ছাড়া অন্য কোনো ছাত্রসংগঠনের দাবি-প্রস্তাবনা প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান না করে, বরং স্পষ্টভাবে অবজ্ঞা করে তফসিল ঘোষণা। সালেহ হাসান নকিব প্রশাসন ও তার নিযুক্ত একচোখা নির্বাচন কমিশন-এরা যেন এনসিপি-শিবিরের গোপন কাগজপত্র ছাড়া কোনো কিছু দেখতেই রাজি নয়! আলোচনা নয়! সংলাপ নয়, ফরমায়েশি তফসিল।’

আরও পড়ুন

চার বিসিএসের চাপে বিপর্যস্ত পিএসসি

সার্বিক বিষয়ে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনের কেন্দ্র আগেও আবাসিক হলে ছিল। আর আমরা কতটা নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ ও নির্বাচনের ব্যাপারে কাজ করছি, সেটা বিষয়। কেন্দ্র একাডেমিক ভবনে বা আবাসিক হলে হোক সেটার চেয়ে আমাদের নিরপেক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। একাডেমিক ভবনে বহিরাগতদের একটা প্রভাব কাজ করতে পারে, আরও কিছু বিবেচনায় আমরা সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলে করেছি।’ এ সময় শিবিরপ্রীতির অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। 

এএসএল/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর