ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ও রাজনৈতিক দর্শনের পুনর্মূল্যায়ন জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক চিন্তাবিদরা। তারা বলেন, ঢাবি প্রতিষ্ঠার কারিগররা আজ উপেক্ষিত। মূলধারার আলোচনায় নবাব সলিমুল্লাহরা আজ অনুপস্থিত।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের একটি অডিটোরিয়ামে সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও লেখক ডা. ফাহমিদুর রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদি আমিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মীর সালমান শামিল।
ডা. ফাহমিদুর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় পূর্ব বাংলার দরিদ্র মুসলমানদের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। নবাব সলিমুল্লাহ, নওয়াব আলী চৌধুরী এবং শেরে বাংলা ফজলুল হকের মতো ব্যক্তিত্বরা এই প্রতিষ্ঠার পেছনে ছিলেন। অথচ আজ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলধারার আলোচনায় প্রায় অনুপস্থিত।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরে চালু থাকা ফ্যাসিবাদের ভিত্তি বাঙ্গালি জাতিবাদের উৎপত্তিও হয়েছিল এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঙ্গালি জাতিবাদ থেকে বিউপনিবেশায়ন করে বাংলাদেশ পন্থার দর্শন নির্মাণ করতে হবে। নবাব সলিমুল্লাহর স্মৃতি রক্ষায় তার নামে ইশারাত মঞ্জিলকে জাদুঘরে রূপান্তরের দাবি জানাই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদি আমিন বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি; যেখানে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে এবং রাজনীতিতে থাকবে নৈতিকতা ও সততার চর্চা।
বিজ্ঞাপন
তিনি জিয়াউর রহমানের সন্তানদের সাক্ষাৎকার উল্লেখ করে বলেন, আমরা এমন রাজনীতি চাই, যেখানে স্মৃতি ও সম্মান থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এই রাজনীতির সাহিত্য ও পটভূমি নির্মাণ করতে হবে।
অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের বারবার রক্ত দিতে হচ্ছে কেন? ১৭ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সমাজ কীভাবে ফ্যাসিবাদকে সহ্য করেছে; তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। নবাব সলিমুল্লাহ কেনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন, সেই ঐতিহাসিক বাস্তবতাও অনুধাবন করা জরুরি।
ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার পিএইচডি গবেষক মীর সালমান শামিল আলোচনায় ‘জুলাই বিপ্লব’ চলাকালে জনপ্রিয় কিছু স্লোগানের ভাষ্য তুলে ধরেন। ‘যেমন: দিল্লি না ঢাকা: ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারত যাদের মামুবাড়ি, দেশ ছাড়ো তারাতাড়ি’, ‘পেতে চাইলে মুক্তি, ছাড়ো ভারত ভক্তি’, ‘চশমাওয়ালা বুবুজান, নৌকা নিয়ে ভারত যান’ প্রভৃতি।
তিনি স্লোগানগুলো ব্যাখ্যা করে বলেন, এখানে ‘ভারত’ বলতে বোঝানো হয়েছে ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্ট বা রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রকে, ভারতের সাধারণ জনগণকে নয়। এই স্লোগানগুলো বাংলাদেশের জনগণের ভারতীয় আধিপত্য নিয়ে জমে থাকা ক্ষোভের রাজনৈতিক প্রকাশ।
তিনি আরও বলেন, গত ৩০০ বছর ধরে ভারতীয় ক্ষমতাকেন্দ্র পূর্ব বাংলার মানুষের সঙ্গে বৈষম্যমূলক ও সুবিধাবাদী আচরণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসও সেই উপেক্ষার একটি প্রতীক।
৩৬ জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন রাষ্ট্রচিন্তা গঠনে এই ইতিহাস ও ঐতিহ্য নতুনভাবে মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের কো-ফাউন্ডার মুহাম্মদ তালহা। স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজনের সহযোগী শিল্প-সাহিত্যের পত্রিকা ডাকটিকিটের সম্পাদক কবি মুন্সি বোরহান মাহমুদ।
এমআর/এফএ

