দেশের কারিগরি শিক্ষাকে নতুন উচ্চতায় নিতে চায় সরকার। এজন্য এই শিক্ষার মান উন্নয়ন ও যুগোপযোগী করতে নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। এর মধ্যে ডিপ্লোমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের গড়ে তুলতে একটি মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের কাজ করছে মন্ত্রণালয়। কারিগরির শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের প্রকল্পও অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১০টির বেশি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব কিছু বাস্তবায়ন হলে কারিগরি শিক্ষার্থীরা যেমন তৈরি হবে বিশ্বমানের হয়ে তেমনি দেশ গঠনেরও তারা নেতৃত্ব দিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১০টির বেশি প্রকল্পের কাজ চলমান। যার মধ্যে একটি মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণ, দেশের উপজেলা পর্যায়ে তিন শতাধিক টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন, ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন, চারটি বিভাগীয় শহরে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বমানের মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
অ্যাসেট প্রকল্পের আওতায় সিঙ্গাপুরের নানিয়াং পলিটেকনিকের আদলে গাজীপুর সদরে একটি আন্তর্জাতিক মানের মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনে ১৪ দশমিক ৪৯ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চলছে। এখানে শুধু পাঠদান নয়, বরং দেশের সব পলিটেকনিকের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এক সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া যায়। এছাড়া এখানে সবকিছুতে ব্যবহারিক বিষয়ে প্রধান্য দেওয়া হবে। বিশ্বমানের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে।
ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মধ্যে তিনটি হবে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের। নড়াইলের কলেজ হবে শুধু কারিগরি থেকে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরির শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সর্বোচ্চ সুযোগ পাবে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, দেশের এইচএসসি জেনারেলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল মাত্র একটা প্রতিষ্ঠান। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে চারটা নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। যার মধ্যে তিনটা কলেজ পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের জন্য করার কারণ হলো তাদের সংখ্যা অনেক বেশি।
উপজেলা পর্যায়ে স্কুল স্থাপন
দেশে কারিগরি শিক্ষার বিস্তারে উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনে ১৫৪টি উপজেলায় ভূমি নির্বাচন করা হয়েছে। এছাড়া ৪৫টি টিএসসি স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ও কারিগরি ইনস্টিটিউটের উন্নয়ন
আটটি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প ইতোমধ্যে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া পাঁচটি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পও অনুমোদিত হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়েছে।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজসমূহে শিক্ষক/কর্মকর্তার ১১ হাজার ৩১৫টি শূন্যপদের বিপরীতে ৩ হাজার ৫০০ জন শিক্ষক/কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া, টিএসসি'র জন্য ইনস্ট্রাক্টরের ১১৯টি শূন্যপদে সরাসরি জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অধিযাচন পাঠানো হয়েছে। সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন পর্যায়ের ৮৪৫ জন শিক্ষক/কর্মকর্তাকে উচ্চতর গ্রেড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষসহ অনেক প্রশাসনিক কর্তকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
‘কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক একটি জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শিল্প সংযুক্তি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কর্মক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ. ম কবিরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, কারিগরি শিক্ষাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হতে নিয়েছি। এ ধারার শিক্ষায় ব্যবহারিকের প্রাধান্য দেওয়ার কথা থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতায় সেটি সম্ভব হয় না। এটির জন্য আমরা কারিগরির সিলেবাস নিয়েও কাজ করছি। এটির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আইএলওসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বৈঠকও করেছি। আশা করি দেশের দক্ষ জনবল তৈরিতে কারিগরি শিক্ষা সর্বোচ্চ কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
এএসএল/জেবি

