শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত ২০০ পরিবারে খাদ্যসামগ্রী পাঠালো শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, জবি
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত ২০০ পরিবারে খাদ্যসামগ্রী পাঠালো শিক্ষার্থীরা

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে ‘প্রজেক্ট লাইফলাইন গাজা’-এর আওতায় ২০০টি পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (৫ জুলাই) বিতরণকৃত খাদ্যের প্যাকেটগুলো গাজার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থানকারী অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত পরিবারের কাছে পৌঁছানো হয়েছে, যারা উত্তর গাজার বাইত হানুন থেকে যুদ্ধের কারণে পালিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


এই উদ্যোগ নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রাইটস সোসাইটি এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়। এই মানবিক উদ্যোগ পরিচালনা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা হলেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের নওশীন নাওয়ার জয়া ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের আম্মার বিন আসাদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের জুনায়েদ মাসুদ, ইংরেজি বিভাগের তানজিলা সুলতানা তানি, সিফাত হাসান সাকিব ও উম্মে হাবিবা ও আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের ওমর ফারুক শ্রাবণ।

প্রজেক্ট পরিচালনায় থাকা জবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আম্মার বিন আসাদ বলেন, আমরা এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র কয়েকজন আন্তরিক মানুষদের সঙ্গে নিয়ে খুবই স্বল্প পরিসর  ঘিরে নিয়েছিলাম। আমরা মনে করি, এই উদ্যোগের সফলতা মূলত আমাদের যাত্রার শুরু। আমরা ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সামনে আরও বড় পরিসরে এমন উদ্যোগকে চলমান রাখব। আমাদের ইচ্ছা আছে আমাদের কার্যক্রমকে আমরা শুধুমাত্র সাহায্য পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখব না; বরং দখলদারী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখী মানবতাবাদী অবস্থান ও গণহত্যার সম্মতি উৎপাদনকারী ভূমিকার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রো-প্যালেস্টাইন মুভমেন্টের কাতারে বাংলাদেশকে শক্তিশালীভাবে দাঁড় করানোর বৃহৎ লক্ষ্যে কাজ করে যাব।

নওশীন নাওয়ার জয়া নামে আরেক প্রজেক্ট পরিচালনাকারী  শিক্ষার্থী বলেন, গাজা মানবতার দায়। চোখের সামনে প্রতিনিয়ত গাজাবাসীর ওপর যে নির্মমতা আমরা দেখছি, তার বিপরীতে মানুষ হিসেবে আমাদের সামান্যতম করণীয়টুকুই আমরা করার চেষ্টা করেছি। তারই প্রয়াসে ‘প্রজেক্ট লাইফলাইন গাজা’ নামক প্রকল্পটি আমরা গ্রহণ করি। আমরা এই প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ২২৬০ ডলার পাঠাতে সক্ষম হই; যার মাধ্যমে ২০০টি পরিবারের জন্য খাবার প্রদান করা হয়। গাজার ছোট্ট শিশুদের হাতে সামান্য খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাতে পারা পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। ওদের মুখে অকৃত্রিম এই হাসিটুকু ফোটানোর স্বপ্ন পূরণ করতে অংশগ্রহণকারী প্রতিটা মানুষ, যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষাভাবে আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আগামীতেও আমাদের এই মানবিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ মাসুদ বলেন, এই মানবিক প্রচেষ্টার অংশ হতে পারা আমাদের জন্য এক গভীর দায়িত্ববোধের প্রতিফলন। মানবিকতা, ন্যায়বোধ এবং বৈশ্বিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই আমাদের এই প্রয়াস।


বিজ্ঞাপন


আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক শ্রাবণ বলেন, গাজা এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সংকটপূর্ণ ও মানবিক বিপর্যয়ের স্থান। এই অবস্থায় গাজার মানুষের জন্য কিছু করা আমাদের কাছে শুধু স্বেচ্ছাসেবা নয়, বরং একটি দায়িত্ব। সেই অনুভব থেকেই ‘প্রজেক্ট লাইফলাইন গাজা’ শুরু করি। শুরুতে ১০ লাখ টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও সীমিত জনবল ও বিভিন্ন জটিলতার কারণে আমরা ৩ লাখ টাকা তুলতে সক্ষম হই। তবুও সদস্যদের নিষ্ঠা ও পরিশ্রমে আমরা প্রথম ধাপে গাজার ২০০ পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে পেরেছি। সামনে আমাদের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হচ্ছে, যেখানে আমরা আশা করছি আরও বেশি মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ। বিশেষভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, সংগঠনসমূহ ও নেতৃত্বে থাকা সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানাই।

উল্লেখ্য, ‘Project Lifeline Gaza’ একটি স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগ যা গাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক ছাত্র-যুবদের সক্রিয়তায় গঠিত হয়েছে। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে ভবিষ্যতেও গাজার অসহায় মানুষদের জন্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর