শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বেরোবি শিক্ষককে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, বেরোবি
প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২৫, ০৯:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

বেরোবি শিক্ষককে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হককে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় গ্রেফতার ও এর পিছনে পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করতে তিন দিনের সময়সীমা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।

শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরে জুমার নামাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেনাবাহিনীর এক বিশাল টিমকে প্রধান ফটক ঘিরে রাখতে দেখা যায়।


বিজ্ঞাপন


এসময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তিসহ ৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। বাকি দুই দফা হলো— ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মিথ্যা মামলার পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা এবং তদন্ত রিপোর্ট পেশ না করার আগ পর্যন্ত গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সকল শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করা। দাবি আদায় না হলে পরবর্তী দিনে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় বিক্ষোভ সমাবেশে।

সমাবেশে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক মাহমুদুল হকের সহধর্মিনী। শিক্ষক মাহমুদুল হকের মুক্তি চেয়ে তারা জানান, এই গ্রেফতার শুধু একজন শিক্ষককে নয়, মুক্তবুদ্ধির চর্চাকেও বন্দি করার অপচেষ্টা।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, আমার শিক্ষক মাহমুদুল হক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্য, দৈনিক ডেইলি স্টারের একজন প্রবীণ সাংবাদিক, ইউএনবি’র সাবেক সাব-এডিটর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অন্যতম মেধাবী শিক্ষার্থী। এমন সম্মানিত একজন শিক্ষককে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে জেলে ভরে রাখা ন্যক্কারজনক ঘটনা।

তিনি এমন মামলা বাণিজ্যের নিষ্পত্তি চেয়ে বলেন, এক প্রহসনমূলক ও হয়রানিমূলক মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আজ বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অতঃপর, কাল বিলম্ব না করে তাকে সরাসরি আদালতে নেওয়া হয় এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে ৫ আগস্টের পর ৩য় বারের মতো জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন মামলায় তাকে এজাহারভুক্ত করা হলো; যেগুলোর সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আবু সাঈদ ভাই শহীদ হওয়ার পর প্রথম শিক্ষক হিসেবে তিনি এই পুলিশী হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছেন। এছাড়াও পুলিশের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব পুলিশকে না দেওয়ার দাবি তোলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো পুলিশই চক্রান্ত করে তাকে গ্রেফতার করেছে। তাকে দ্রুত মুক্তি না দিলে আমরা হাজিরহাট থানা ঘেরাও করতে বাধ্য হবো।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মো. ইউসুফ বলেন, মাহমুদুল হক একজন বিবেকবান ও ন্যায়পরায়ণ শিক্ষক। তিনি শিক্ষক সমাজ ও সমাজের নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় তাকে টার্গেট করে হয়রানি করা হচ্ছে। এই গ্রেফতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ২ আগস্ট রংপুর নগরীর নজিরের হাট এলাকায় জামায়াত নেতা নাছিরকে পুলিশ গ্রেফতার করতে গেলে ওই এলাকায় মুদি দোকানদার সমেছ উদ্দিন পুলিশ দেখে ভয়ে দোকান থেকে নেমে পালিয়ে যান। কিছুদূর দৌড়ে যাবার পর তিনি জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে বলে জানান।

এই ঘটনার ১০ মাস পর পুলিশ সমেছ উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ করে তার স্ত্রী আমেনা বেগমের স্বাক্ষর নিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলায় স্থানীয় বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও স্থানীয় ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ৫৪ নম্বর আসামি করা হয় শিক্ষক মাহমুদুল হককে।

বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, হাজিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আল মামুন শাহ মুদি দোকানদারের স্ত্রীকে থানায় ডেকে এনে এই মিথ্যা মামলা রেকর্ড করান। তিনি নিজেই তদন্তকারী কর্মকর্তাও হন।

বক্তারা হার্ট অ্যাটাকে মৃত ব্যক্তিকে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা বানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে গ্রেফতার করার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

মাহমুদুল হকের সহধর্মিনী মাসুবা হাসান মুন বলেন, কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমার স্বামীকে পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এমনকি কথা বললে তাকে জঘন্যভাবে অপমান করার হুমকি দিয়েছে। পুলিশের এমন আচরণই প্রমাণ করে মিথ্যা মামলায় আটক করার এই ঘটনাটি পুরোটাই সুপরিকল্পিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেই একটা কুচক্রী মহল এটা করিয়েছেন। এই কুচক্রী মহলকে শনাক্ত করতে প্রশাসনের কাছে আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত ১৯ জুন বিকেলে রংপুর মহানগরীর ধাপ এলাকার নিজ বাসা থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহমুদুল হককে গ্রেফতার করে হাজিরহাট থানা পুলিশ। তাকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, যা তার পরিবার ও সহকর্মীরা ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন।

প্রতিনিধি/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর