বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া ১৯ তরুণের চিন্তার জায়গা গবেষণা। লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রত্যেকেই নিজেকে একজন গবেষক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টায় ব্যস্ত। যে কারণে প্রতিনিয়ত চিন্তার জগত প্রসারিত করার ভাবনা তাদের মধ্যে। এরই অংশ হিসেবে দেশের ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়, ২টি কলেজের ১৯ জন গবেষণায় উদ্যমী তরুণ অংশ নিলেন নেপালের কাঠমান্ডু এবং পোখারায় আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ রিসার্চ ক্যাম্পে। এক সপ্তাহে ৬টি ভিন্ন ভিন্ন ধারার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে নেপাল-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ইয়ুথ রিসার্চ ক্যাম্প-২০২৫।
যেখানে নেপালের তরুণ গবেষকদের সঙ্গে নিজেদের চিন্তা, আগামী দিনের করণীয় নিয়ে ভাবনার আদান-প্রদান করেছেন বাংলাদেশের এই তরুণরা।
বিজ্ঞাপন
গত ২২ মে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে যাত্রা শুরু করে সফল গবেষণা ভ্রমণ শেষে গত ২৮ মে দেশে ফেরেন এই উদ্যমী তরুণের দল।
উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সপ্তাহব্যাপী এই রিসার্চ ক্যাম্পের আয়োজনে ছিল বাংলাদেশ গবেষণা সংসদ। আর সহ-আয়োজক ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ। অন্যদিকে নেপালে হোস্ট হিসেবে ছিল International Development Institute (IDI)।

ক্যাম্পের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২২ মে ছিল ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ রিসার্চ ক্যাম্পের উদ্বোধনী দিন এবং প্লেনারি সেশন। পরদিন রিসার্চ ক্যাম্পের অধীনে প্রথম আনুষ্ঠানিক সেশন অনুষ্ঠিত হয় বিমান বাংলাদেশ কাঠমান্ডু অফিসে। সেখানে বিমানের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান হয়।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও নেপালের পর্যটন স্বর্গ পোখারা ভ্রমণ ছিল এই ক্যাম্পের আকর্ষণীয় বিষয়। সেখানে গবেষকদল এক রাত দুই দিন অতিবাহিত করেন। প্রথম দিন ছিল পোখারা সিটি ভ্রমণ। দ্বিতীয় দিন ভোরে পোখারার লেক পাড়ে অনুষ্ঠিত হয় নেপাল-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ রান। রিসার্চ ক্যাম্পের দ্বিতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় পোখারা রিসার্চ সেন্টারের সঙ্গে। এতে পোখারা রিসার্চ সেন্টার, তাদের পরিচিতি, কার্যক্রম, তরুণ গবেষকদের সঙ্গে তাদের সুযোগ-সুবিধা এবং বাংলাদেশ গবেষণা সংসদ এবং পোখারা রিসার্চ সেন্টার একত্রে কীভাবে দুই দেশের তরুণ গবেষকদের নিয়ে কাজ করতে পারে সেই বিষয়ের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় তরুণ গবেষকরা নিজেদের গবেষণা চিন্তা ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
পরদিন আবার কাঠমান্ডু ফিরে কাঠমান্ডু ইউনিভার্সিটি ভ্রমণ এবং গ্লোবাল এঙ্গেজমেন্ট ডিভিশনের সাথে ফিউচার কোলাবরেশন নিয়ে মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। রিসার্চ ক্যাম্পের ৫ম দিনে কাঠমান্ডু ইউনিভার্সিটির দারুণ আতিথেয়তা গ্রহণ করেন তরুণ গবেষকরা।
এতে গ্লোবাল এঙ্গেজমেন্ট ডিভিশনের ডিরেক্টর ডিনেশ কাফলে নেপাল ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি কাঠমান্ডু ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা, গবেষণা এবং এক্সেঞ্জ প্রোগ্রামের সুযোগগুলো গবেষকদের উদ্দেশে তুলে ধরেন।
নেপালে ৬ষ্ঠ দিনে ছিল ন্যাশনাল ইয়ুথ কাউন্সিল সেমিনার। যেখানে ১৯ জন তরুণ গবেষককে নেপালের ঐতিহ্যবাহী ‘খাদা’ দিয়ে সাদর সম্ভাষণ জানানোর পাশাপাশি আগামীতে দুই দেশের তরুণদের নিয়ে নতুন নতুন উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

একই দিনে দুপুরে রিসার্চ ক্যাম্প ছিল কাঠমান্ডুস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে। যেখানে একইসঙ্গে সদ্য এভারেস্ট জয়ী ইকরামুল হক শাকিলের অনবদ্য গল্প শোনা হয়। সেই সঙ্গে গবেষকরা নিজেদের গবেষণার ফাইন্ডিংসের প্রেজেন্টেশন দেন।
এসময় ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করা সকলকে সার্টিফিকেট তুলে দেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির।
৭ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ইয়ুথ রিসার্চ ক্যাম্প-২০২৫-এর চূড়ান্ত ও সমাপনী সেশনটি অনুষ্ঠিত হয় নেপালের কাঠমান্ডুতে অবস্থিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ACE Institute of Management এর হল রুমে। এই সেশনটি যৌথভাবে আয়োজন করে ACE Institute of Management এবং International Development Institute (IDI), Nepal।
সেশনের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন ACE Institute of Management-এর অধ্যক্ষ ড. আশীষ তিওয়ারি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন Impact Adventure-এর প্রতিষ্ঠাতা পঙ্কজ প্রধানাঙ্গা।
‘Destination Nepal: Tourism for All’ শীর্ষক উপস্থাপনায় তিনি ভ্রমণ ও পর্যটন বিষয়ক ব্যাপক ধারণা ও বিশদ দিকগুলো তুলে ধরেন। যা তরুণ গবেষকদের জন্য ছিল অত্যন্ত অনুপ্রেরণামূলক।
পরের ধাপে IDI Nepal-এর পরিচালক রোশন গিমিরে একটি বিশদ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। যেখানে ভবিষ্যতে IDI এবং বাংলাদেশ গবেষণা সংসদ কীভাবে যৌথভাবে আরও বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক প্রোগ্রাম আয়োজন করতে পারে, সে বিষয়ে পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গবেষণা সংসদের পরিচালক এবং ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ রিসার্চ ক্যাম্পের পরিচালক এস এম সাদেক।
সেশন শেষে গবেষণা ক্যাম্প সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিনিধি-গবেষকদের হাতে সনদপত্র তুলে দেয় International Development Institute (IDI), Nepal।
আয়োজকরা জানান, এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে তরুণদের গবেষণামুখী করা হয়। ভ্রমণেরর পাশাপাশি সেমিনার, নলেজ শেয়ারিং প্রোগ্রামসহ একত্রে নতুন জ্ঞান অর্জনের জন্য এই উদ্যোগ। আগামীতে বিভিন্ন দেশে এ ধরনের উদ্যোগ আরও বড় পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন আয়োজক কমিটির পরিচালক এবং বাংলাদেশ গবেষণা সংসদের পরিচালক এস এম সাদেক।
বিইউ/এফএ

