শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ। বৃহস্পতিবার তার অবসরোত্তর ছুটি উপলক্ষে কলেজে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ও রাতে নগরীর একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে এই সংবর্ধনা দেন কলেজের শিক্ষকরা। এদিন কলেজে এক হৃদয়বিধারক পরিবেশে নানা আয়োজনে তাকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এদিন সকালে কলেজের প্রশাসনিক ভবনে গার্ড অব অনার দেন কলেজের বিএনসিসি প্লাটুন ও সালাম দেন রোভার স্কাউটস গ্রুপ। পরে বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এসে প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজকে শুভেচ্ছা জানান। পরে কলেজের অডিটোরিয়ামে শিক্ষার্থীদের আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশ নিন তিনি। সেখানে কলেজের সকল বিভাগ ও সংগঠনের নেতারা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পাশাপাশি বিভিন্ন উপহার ও নানা স্মারক তার হাতে তুলে দেন।
বিজ্ঞাপন
এমসি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আকমল হোসেনের সভাপতিত্বে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্য প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ বলেন, এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক ও অধ্যক্ষ হওয়া আমার জন্য ছিল অত্যন্ত গর্বের। আমি আমার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই এই ক্যাম্পাসে কাটিয়েছি। আর আমার শিক্ষকতা জীবনের প্রায় পুরোটাই এখানে কাটালাম। এই সময়ে আমি চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে তাদের যুগোপযোগী একটি সুন্দর ক্যাম্পাস ও পাঠদানের ব্যবস্থা করতে। জানি না কতটুকু পারছি। আশা করি আপনারা ভালোভাবে লেখাপড়া করে দেশের একজন সৎ ও দক্ষ নাগরিক হয়ে দেশের সেবা করবে।
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন—কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর মো. গিয়াস উদ্দিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. ফরিদ আহমেদ, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, ছাত্রদলের কলেজ শাখার আহ্বায়ক সেলিম আহমদ সাগর, ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইসমাঈল খান সৌরভ, ছাত্র মজলিশের সভাপতি আব্দুল বাছিত, ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক সুমিত কান্তি দাস, এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক লবীব আহমদ, যুব রেড ক্রিসেন্টের দলনেতা ডালিম আহমেদ, বিজ্ঞান ক্লাবের সভাপতি আবু সাঈদ জাবের, মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি তাহিন আহমেদ, কবিতা পরিষদের সভাপতি মইনুল হাসান আবির, বিএনসিসির ক্যাডেট কর্পোরাল মোহাম্মদ মনোয়ার হোসাইন, রোভার স্কাউটসের সহসভাপতি রুবেল ফারহিন, থিয়েটার মুরারিচাঁদের সাধারণ সম্পাদক সায়মা জাহান, ইংরেজি বিভাগের ইরিনা হক, রোভার স্কাউটসের সাবেক সভাপতি সেলিম মাহমুদ, ডিগ্রি ক্লাবের সভাপতি রিহান খান প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন
সেখানে এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মো. মুছলেহ উদ্দিন মুনাঈম ও কবিতা পরিষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অনুশুয়া অতসীর যৌথ সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বলেন, রিয়াজ স্যার মানেই এক আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার নাম। যিনি ১২৪ একরের এই ভূমিকে নিজে ধারণ করতেন, ধারণ করতেন এখানকার সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের। যার কারণে তার সুনিপুণ নেতৃত্বে কালের খেয়ায় হারিয়ে যাওয়ার পথে থাকা একটি ক্যাম্পাস আজ পূর্ণতা পেয়েছে। শিক্ষার্থী কলেজে না আসা ক্যাম্পাস আজ শিক্ষার্থীতে মুখর থাকে।
তারা আরও বলেন, একজন শিক্ষক আর শিক্ষার্থীর যেরকম সম্পর্ক থাকা দরকার, স্যার দেশের অন্যতম প্রাচীন, বড় ও ঐতিহ্যবাহী কলেজের অধ্যক্ষ হয়েও তার সাথে সকল শিক্ষার্থীর এরকমই সম্পর্ক। স্যারের অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি যেন সকল শিক্ষার্থীদের তার সান্নিধ্যে পাওয়ার সুযোগ করে দেয়। প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ স্যার অত্যান্ত সৎ, দক্ষ, নিরহংকারী ও আপোষহীন একজন ব্যক্তি। যার আপোষহীনতার কারণে কোনো সন্ত্রাসী কোনো অন্যায় আবদার কায়েম করতে পারে নি এই ক্যাম্পাসে। সবসময় ভালো থাকুন এই শিক্ষাগুরু। আপনাকে এই ক্যাম্পাস মিস করবে।
প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজের অবসরোত্তর ছুটিতে গমন উপলক্ষে এদিন কলেজে সাবেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয় ক্যাম্পাস।
চতুর্দশ বিসিএসের এই শিক্ষক কর্মকর্তা এমসি কলেজের ৫৩ তম অধ্যক্ষ হিসেবে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে ২০২৫ সালের ২৯ মে তিনি তার বর্ণাঢ্য চাকরিজীবন শেষে অবসরোত্তর ছুটিতে যান। এর আগে, তিনি একবছর সিলেট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এমসি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

