শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোটি শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৫, ০১:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোটি শিক্ষার্থী

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আজ সোমবার (২৬ মে) থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন। ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে এই আন্দোলন চলছে। এতে করে সারাদেশে প্রায় ১ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলনের ফলে শিক্ষার সবচেয়ে প্রাথমিক স্তরেই বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন অভিভাবকরা।


বিজ্ঞাপন


একজন অভিভাবক মনসুর আহমদ বলেন, আমি চেয়েছি সন্তান স্বাধীন চিন্তা করুক, তাই তাকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু এখন স্কুলে নিয়মিত ক্লাসই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমার সন্তান পিছিয়ে পড়ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে প্রাথমিক স্তরে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ১ কোটি ৯৭ লাখ। এর মধ্যে ১ কোটি ৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পড়ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যা দেশের মোট প্রাথমিক শিক্ষার্থীর প্রায় ৫৬ শতাংশ।

শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, আগামী ৩ জুন থেকে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার কথা। এর আগ পর্যন্ত মাত্র ছয় কার্যদিবস ক্লাস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে এসব দিনেও কার্যত পাঠদান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, তারা শুরুতে ধাপে ধাপে কর্মসূচি দিয়েছেন। প্রথমে ৫ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত দিনে ১ ঘণ্টা, তারপর ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দিনে ২ ঘণ্টা এবং ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে গেছেন।


বিজ্ঞাপন


তাদের তিন দফা মূল দাবি হলো— ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ – সহকারী শিক্ষক পদের জন্য পরামর্শক কমিটির সুপারিশ সংশোধন করে ১১তম গ্রেড নির্ধারণ করতে হবে, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা দূর – ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে, প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি – প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি এবং দ্রুত পদোন্নতির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

আন্দোলনের মুখপাত্র শাহীনুর আল আমিন বলেন, আমাদের ইচ্ছা নয় শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা। কিন্তু সরকার আমাদের কোনো কথায় কান দিচ্ছে না। আলোচনার চেষ্টাও করেনি। তাই বাধ্য হয়েই কঠোর কর্মসূচি নিতে হচ্ছে।

অভিভাবকদের আশঙ্কা, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা এমনিতেই পিছিয়ে পড়ছে, আর এই আন্দোলনে তারা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একজন অভিভাবক বলেন, প্রাইভেট স্কুলে ক্লাস নিয়মিত হয়, তাই আমাদের সন্তানরা পিছিয়ে পড়ে। সরকারি স্কুলের ছুটিও বেশি, এখন আবার আন্দোলন!

অন্যদিকে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

শিক্ষকরা স্পষ্ট করেছেন—তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। এতে শিক্ষা কার্যক্রমে দীর্ঘস্থায়ী বিঘ্ন ঘটার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে।

এএসএল/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর