সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫, ঢাকা

খাতা মূল্যায়নে অনীহা, নির্ধারিত সময়ে এসএসসির ফল প্রকাশ নিয়ে শঙ্কা

মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)
প্রকাশিত: ২০ মে ২০২৫, ১০:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

খাতা মূল্যায়নে অনীহা, নির্ধারিত সময়ে এসএসসির ফল প্রকাশ নিয়ে শঙ্কা

সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে অনীহা প্রকাশ করেছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অনেক পরীক্ষক। এতে নির্ধারিত সময়ে ফলাফল প্রকাশের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে পরীক্ষকদের এই অনীহা কেন? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর পেছনে রয়েছে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ ও আর্থিক অপর্যাপ্ত সম্মানি।

পরীক্ষকদের দাবি, অল্প সময়ে বেশি উত্তরপত্র মূল্যায়নের চাপ থাকে। কিন্তু সে তুলনায় আর্থিক সম্মাননা খুবই কম। তাই বাধ্য হয়েই অনেক পরীক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়ন থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন।


বিজ্ঞাপন


এদিকে বোর্ড বলছে, নানা কারণে আর্থিক সম্মাননা বেশি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে এটি বাড়ানোর একটা চিন্তা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১০ এপ্রিল শুরু হয়ে এসএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১৩ মে শেষ হয়েছে। ১৫ থেকে ২২ মে ব্যবহারিক পরীক্ষার সূচি রয়েছে। এবার ১৯ লাখ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করে। তবে ৩০ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী এক বা একাধিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল।

ssc1

জানা যায়, বোর্ডের পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকদের অনেকেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা দেখায় অনীহা প্রকাশ করায় এবার ফলাফল মূল্যায়নে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এসব পরীক্ষক বোর্ড থেকে মূল্যায়নের জন্য খাতা নিয়ে যাচ্ছেন না। এতে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অনেক খাতা এখনো বোর্ডে রয়ে গেছে।


বিজ্ঞাপন


এমন অবস্থায় গত ১২ মে ঢাকা বোর্ড এক চিঠিতে উল্লেখ করে, বোর্ড কর্তৃপক্ষ নিয়োগপ্রাপ্ত সব পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষককে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষার খাতা সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্কও করা হয়।

এ বিষয়ে মো. নুরুজ্জামান খান নামের একজন পরীক্ষক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘খাতা মূল্যায়নের জন্য ১৫-২০ দিন সময় দেওয়া হয়। এই অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ৩০০ খাতা মূল্যায়ন করতে হয়। এটি বেশ কষ্টসাধ্য কাজ হলেও সেভাবে সম্মানি থাকে না। অনেক শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র এত বেশি ঝামেলাপূর্ণ থাকে যে, এক ঘণ্টাও সময় লেগে যায়।’

ssc2

এই পরীক্ষক আরও বলেন, ‘খাতা নেওয়ার জন্য বোর্ডে যাওয়া-আসাসহ বেশ কিছু খরচও হয়। এসব বাদ দিলে উত্তরপত্র মূল্যায়নের সম্মানি সেভাবে আর থাকে না। আবার এই টাকা কবে পাবো সেটিরও নিশ্চয়তা নেই। গত বছরের টাকা দীর্ঘদিন পর পেয়েছিলাম। এসব সমস্যা দূর হলে শিক্ষকরা হয়তো খাতা মূল্যায়নে আগ্রহী হবেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের মাসিক বেতনের মতো উত্তরপত্র মূল্যায়নের সম্মানি পাওয়ার নির্দিষ্ট সময় থাকে না। এমনিতে একটি খাতা মূল্যায়নে মাত্র ৩৫ টাকা দেওয়া হয়, তারপরও সেটির নির্দিষ্ট সময় নেই। উত্তরপত্র মূল্যায়নের আর্থিক সম্মানি এবং সময় আরও বেশি করার দাবি জানাচ্ছি। এতে শিক্ষকরা আরও ভালোভাবে একটা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে পারবেন।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়, কিন্তু সম্মানি খুব বেশি দেওয়া সম্ভব হয় না। আসলে সম্মানির টাকা বোর্ড দিতে পারে না, এটা শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের একটা অংশ থেকে দেওয়া হয়। তবে আমরা সভায় আলোচনা করেছি যাতে শিক্ষকদের সম্মানি বাড়ানো যায়। আবার এটি করলে শিক্ষার্থীদের ওপর আর্থিক চাপ পড়বে। আমরা আছি উভয় সংকটে।’

এএসএল/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর