শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চবির সমাবর্তনে গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত, পানির জন্য হাহাকার

রেদ্ওয়ান আহমদ, চবি
প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৫, ০৩:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

চবির সমাবর্তনে গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত, পানির জন্য হাহাকার
প্যান্ডেলে পানির জন্য হাহাকার। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তন ছিল হাজারো গ্র্যাজুয়েটের জীবনে এক গর্বের দিন। দীর্ঘ এক শিক্ষাযাত্রার সফল সমাপ্তি উদযাপন করতে হাজির হয়েছিলেন তারা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেই আনন্দঘন দিনটি অনেকের কাছেই রূপ নেয় এক দুঃসহ অভিজ্ঞতায়।

গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে যখন সূর্য যেন আগুন ছড়াচ্ছিল, তখন প্যান্ডেলের ভেতরে তাপ প্রশমনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। দুপুর ১২টার পর থেকে গ্র্যাজুয়েট, অতিথি ও ফ্যাকাল্টি সদস্যরা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন, তৃষ্ণায় কাতর হতে থাকেন, কিন্তু কোথাও ছিল না পানির ব্যবস্থা।


বিজ্ঞাপন


নিরাপত্তার কারণে সমাবর্তন প্যান্ডেলে ব্যক্তিগত পানির বোতল প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। অথচ প্যান্ডেলের ভেতরে যে স্বল্প পরিমাণ পানি সরবরাহ করা হয়েছিল, তা ২৬ হাজার অংশগ্রহণকারীর জন্য একেবারেই অপ্রতুল ছিল। পানির সঙ্গে ছিল না পর্যাপ্ত গ্লাস বা পাত্র। কেউ কেউ তাই হাতে পানি ঢেলে খাওয়ার চেষ্টা করেছেন, আবার কেউ ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছেন।

এছাড়া, পানির তৃষ্ণায় কাতর হয়ে বা ক্লান্ত হয়ে কেউ সমাবর্তন প্যান্ডেল ত্যাগ করতে চাইলেও প্যান্ডেলের বাহিরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছিলেন না নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, এই চিত্র শুধু একটি অব্যবস্থাপনার নয়, বরং একটি মানবিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। তীব্র গরমে যেখানে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে, সেখানে পানির মতো মৌলিক প্রয়োজন থেকে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।

নজরুল ইসলাম নামের এক গ্র্যাজুয়েট একটি ছবিতে দেখান, পানির গ্যালন থাকলেও পান করার মতো কোনো গ্লাস নেই। তিনি ফেসবুক গ্রুপ ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’-এ লিখেছেন, ‘সমাবর্তনের অনুষ্ঠানের ভিতরে ওয়াসার ২০ লিটারের পানির বোতল দিলেও পানি খাওয়ার কোন গ্লাস নেই।’


বিজ্ঞাপন


আতিক আরজু নামের আরেকজন লেখেন, ‘সমাবর্তন প্যান্ডেলে পানির বোতল নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি না থাকায় আমার ভাইদের শোচনীয় অবস্থার পরিণতি।’

CU

অহিদ খান ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ‘মানুষ গরমে মরার মতো অবস্থায় আছে, কিন্তু পানি খেতে পারছে না। যদি কারো কোনো সমস্যা হয় পানির অভাবে, তার দায়ভার কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা। অন্যথায় অনেকেই পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে।’

গ্র্যাজুয়েট আবিদ হাসান বলেন, ‘শিক্ষাজীবনের এক অবিস্মরণীয় দিন এমন কষ্টকর অভিজ্ঞতায় কলুষিত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল গরমের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পর্যাপ্ত পানি ও পানির পাত্র নিশ্চিত করা এবং নিরাপত্তার পাশাপাশি মানবিক দিকটিকেও গুরুত্ব দেওয়া।’

সমাবর্তন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান আইডিয়া কমিউনিকেশনের দেওয়া তথ্যমতে, প্রায় ১৩ কোটি টাকা বাজেটের এ আয়োজনে থাকবে ১২০টি এয়ারকুলার, ২০০ টন ধারণক্ষমতার এয়ারকন্ডিশন এবং ১,১০০টি সিলিং ফ্যান।

আইডিয়া কমিউনিকেশনের এক ইভেন্ট ম্যানেজার জানান, পুরো প্যান্ডেলে এয়ারকন্ডিশনিংয়ের পরিকল্পনা থাকলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ ও অতিরিক্ত খরচের কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কেবল এসির জন্য অতিরিক্ত খরচ দাঁড়াতো প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা শুধু ক্ষুব্ধই নয়, বরং তারা আশা করছেন—ভবিষ্যতের আয়োজনগুলো যেন হয় আরও সচেতন, সংগঠিত এবং সর্বোপরি মানবিক।

প্রতিনিধি/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর