চার ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীর নটরডেম কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার (১২ মে) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ভবন থেকে পড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এক শিক্ষার্থী। এছাড়া সন্ধ্যা ৭টার দিকে আরেক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দু’জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় কলেজে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দ্রুত মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামি ২৬ জুন শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে কলেজ থেকে প্রবেশপত্র নিতে এসেছিলেন ধ্রুবব্রত দাস (১৮)। সঙ্গে এসেছিলেন তারা বাবা বাণীব্রত দাস। কলেজের ভেতরে অভিভাবকদের প্রবেশে কড়াকড়ির কারণে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন বাবা। ভেতরে ছিলেন ছেলে ধ্রুব। কলেজের ফটকে ছেলের জন্য অপেক্ষারত বাণীব্রত দাস হঠাৎ দেখতে পান তার ছেলেকে সহপাঠীরা ধরাধরি করে রিকশায় তুলছেন। শরীর রক্তাক্ত। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ধ্রুবকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, ধ্রুবব্রত দাস কলেজের ‘ফাদার টিম’ ভবনের পঞ্চমতলার বারান্দা থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকেল ৪টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ধ্রুবব্রত দাসের বাবা বাণীব্রত দাস বলেন, ছেলের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি ছেলেটাকে ওর সহপাঠীরা রক্তাক্ত অবস্থায় রিকশায় তুলছে। ছেলে কীভাবে ভবন থেকে পড়ে গেলো তা জানতে পারিনি।
এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি নটরডেম কলেজ কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি করেছে। কীভাবে ধ্রুবব্রত দাসের মৃত্যু হয়েছে, তা খতিয়ে দেখবেন কমিটির সদস্যরা।
আরেক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
বিজ্ঞাপন
একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী মো. আরাফাত রহমানের (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর কমলাপুরে জসীমউদ্দীন রোডের একটি ফ্ল্যাট থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধ্রুবব্রত দাসের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরই আরাফাতের লাশ উদ্ধার হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আলম জানান, মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। এটি প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যাজনিত ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরাফাত রহমানের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল আল মামুন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত বলে জানা গেছে। আরাফাতের মৃত্যুর বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে জেনেছে।
দু’জন শিক্ষার্থীর এমন মৃত্যর ঘটনায় একজন অভিভাবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, নটরডেম কলেজ কর্তৃপক্ষকে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে হবে। কেন উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিলো? পর পর এমন দুইটি মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের প্রতি কলেজের আরও যত্নবান হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
এএসএল/এফএ

