শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

জাবির চারুকলা বিভাগের আয়োজনে আরবি ক্যালিগ্রাফি কর্মশালা

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

জাবির চারুকলা বিভাগের আয়োজনে আরবি ক্যালিগ্রাফি কর্মশালা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এবারের রমজানে আয়োজন করে ‘আরবি ক্যালিগ্রাফি কর্মশালা-২০২৫’। পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আত্মিক সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে আয়োজিত এই কর্মশালা তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় ১৭, ১৮ এবং ১৯ মার্চ। কর্মশালাটি ছিল সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত, যেখানে মোট ৫৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।

কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন ড. মো. মোজাম্মেল হক। তিনি তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের নান্দনিক ও আত্মিক জগতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আরবি ক্যালিগ্রাফির গুরুত্ব তুলে ধরেন। কেবল পেশাগত দক্ষতা অর্জনের দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং এই শিল্পচর্চার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সৌন্দর্যবোধকে বিকশিত করতে পারবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। একইসাথে ক্যালিগ্রাফিকে নান্দনিক শিল্পের বিচারে উত্তীর্ণ একটি শিল্প হিসেবে গ্রহণ করে চর্চা অব্যাহত রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- জাবির চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম এম ময়েজ উদ্দিন, চারুকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামীম রেজা ও সহকারী অধ্যাপক ধীমান সরকার প্রমুখ।

এই কর্মশালার প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট ক্যালিগ্রাফি শিল্পী এবং গবেষক মো. আবু বকর সিদ্দীক। যিনি আর্ট কার্নিভাল, ভাস্ট, ক্রাফট ও ব্যাম্বো চিকের মতো নান্দনিক শিল্পোদ্যোগের সাথে সংশ্লিষ্ট আছেন বিগত প্রায় এক দশক ধরে। তিনি তার দীর্ঘদিনের গবেষণা ও প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা দিয়ে অংশগ্রহণকারীদের ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্যময় জগতে পথপ্রদর্শন করেন।

ক্যালিগ্রাফিকে শিল্পের মর্যাদা প্রদানের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন- বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্যালিগ্রাফি চর্চার একটি দীর্ঘ কালো সময় গেছে ধর্ম ও সংস্কৃতির এক অপ্রত্যাশিত দ্বন্দ্বের ফলে। নির্দিষ্ট ট্যাগ লাগিয়ে এই শিল্পের চর্চাকে থামিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে কেউ কেউ তবে সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগের এমন আয়োজন দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে সাংস্কৃতিক বৈষম্য মোকাবেলা এবং বৈচিত্র্য গ্রহণের ক্ষেত্রে পথ দেখাবে।

তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনে সহ-প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ক্যালিগ্রাফি শিল্পী সুলতানা মিমি এবং জামিল আহমেদ। বিগত সরকারের সময়ে দেশের প্রথিতযশা ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের সহযোগে সাংস্কৃতিক বৈষম্যরোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে অগ্রগামী ভূমিকা পালনকারী সুলতানা মিমি এবং জামিল আহমেদের কথায় উঠে আসে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গ্রাফিতির মাধ্যমে তারুণ্যের বাঁধভাঙা জোয়ারের স্মৃতিচারণ। তিনজন প্রশিক্ষকের অভিজ্ঞতা ও পারদর্শিতায় কর্মশালাটি ছিল সুগঠিত ও ফলপ্রসূ।


বিজ্ঞাপন


JU1

কর্মশালাটি দুটি অংশে বিভক্ত ছিল—তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক। প্রথম অংশে শিক্ষার্থীদের আরবি ক্যালিগ্রাফির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, শিল্পের বিবর্তন এবং নান্দনিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় অংশে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্যালিগ্রাফির মূল কলাকৌশল শেখানো হয়। কীভাবে বিভিন্ন ধরনের ব্রাশ ও কলম ব্যবহার করে আরবি লিপি ফুটিয়ে তোলা যায়, কীভাবে রঙের ব্যবহারে একটি শিল্পকর্ম প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে—এসব বিষয় প্রশিক্ষণার্থীরা শিখেছেন দক্ষ প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে।

১৯ মার্চ সমাপ্তি দিনে কর্মশালার সমাপনীয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। তিনি তার বক্তব্যে- শিল্পচর্চায় সকল প্রকার বৈষম্যের নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চারুকলার গুরুত্ব তুলে ধরে এই আয়োজনের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. সোহেল আহমেদ এবং কোষাধ্যক্ষ ড. মোঃ আবদুর রব। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট প্রদান এবং অতিথিদের মূল্যবান বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মশালাটির সফল সমাপ্তি ঘটে।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর