বাংলাদেশের শিক্ষা কারিকুলামের সংকট নিরসনে জিডিপির ৩.৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবিসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম। শনিবার (১৫ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক-কর্মচারী জোটের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব দাবি তুলে ধরেছেন জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক (অব.) মো. নাছির উদ্দিন খান।
দাবিগুলো হলো- ১.ইউনেস্কো কর্তৃক শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৫.৫ শতাংশ বরাদ্দের পরামর্শ থাকলেও আমাদের দাবি অন্তত জিডিপির ৩.৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে। এছাড়াও বাজেটের অর্থ শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে যথাযথ জবাবদিহিতার মাধ্যমে ব্যয় করতে হবে। ২. এনসিটিবি-কে (NCTB) ইসলামি শিক্ষাবিদ ও জেনারেল শিক্ষাবিদ উভয়ের সমন্বয়ে সমান সংখ্যক জনবল নিয়ে পুনর্গঠন করতে হবে। ৩. মাদ্রাসা শিক্ষা ও জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থা সমন্বয় করে এমন একটি একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা যাতে ভবিষ্যৎ বংশধরেরা আমাদের তাহযীব-তমদ্দুনকে ভিত্তি করে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। এর জন্য ইসলামি শিক্ষাবিদ ও গবেষক এবং জেনারেল শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের সমন্বয়ে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা জরুরি। ৪. নতুন পাঠ্যসূচীতে জুলাই বিপ্লবের ইতিহাসে আলিয়া ও কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের অবদানসহ সকল শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের সঠিক আত্মত্যাগের ইতিহাস সুষ্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৫. পাঠ্যবইসমূহ থেকে বিবর্তনবাদ অধ্যায়সহ সকল অপ্রাসঙ্গিক ছবি, যৌন শিক্ষার আপত্তিকর ভাষা, অনৈসলামিক বিষয় ও বিপজ্জনক দিক পরিহার করতে হবে। ৬. মেধাবীদের মেধা যথাযথ কাজে লাগানোর জন্য তারা বিদেশ পড়ি দিচ্ছে। তাদের মেধা আমাদের জাতীয় উন্নয়নের কাজে যাতে লাগাতে পারি সেই জন্যে মেধাবীদের উচ্চতর বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে শিক্ষা খাতে তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে অধ্যাপক (অব.) মো. নাছির উদ্দিন খান বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দোহাই দিয়ে নতুন কারিকুলাম চালু করা হয়েছে। আমরা যতদূর বুঝি তা হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মানে রিমোট কন্ট্রোল ভিত্তিক শিল্প বিপ্লব। যার ভিত্তি হল বিজ্ঞান কিন্তু NTCB’র সিলেবাসে বিজ্ঞান কোথায়? ঢোল, তবলা, হারমোনিয়াম, নাচ-গান, অভিনয় ও বিবর্তনবাদ মতবাদের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কি বিজ্ঞান শিখাবেন। আপনাদের সিলেবাসে আপনাদের সন্তানরাই লেখাপড়া করছে না।
তিনি আরও বলেন, আপনারা বাংলার কৃষকের সন্তানদেরকে কামলা দেওয়া শ্রমিক ও মন্ত্রী আমলাদের সেবাদানকারী ছাড়া আর কিছুই তৈরি করতে চান না। ফ্যাসিস্ট ভারতের তাঁবেদার সরকার পারে নাই পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট বসানোসহ আরও বহু প্রকল্প আমাদের বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারদেরকে দিয়ে ডিজাইন করাসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে। প্রকল্পের পরামর্শদাতা ও ডিজাইনসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৬০ শতাংশ ব্যয়ই করা হয়েছে বিদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের পেছনে। তাহলে আমাদের জনগণের টাকায় পরিচালিত বুয়েটে কি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর সাধারণ জনগণসহ মন্ত্রী-এমপিদের বিদেশে চিকিৎসা নিতে হয়। তাহলে আমাদের মেডিকেল কলেজগুলোতে কি ডাক্তার বানানো হচ্ছে?
আলোচনা সভায় আসন্ন ঈদে শতভাগ উৎসব ভাতার দাবিসহ শিক্ষায় বৈষম্য নিরসনে শতভাগ উৎসব ভাতা, সরকারি নিয়মে বাড়ি ভাড়া, সরকারি নিয়মে মেডিকেল ভাতা, সর্বজনীন বদলি জনিত সুবিধা, ইবতেদায়ির নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন করে ইবতেদায়ি শিক্ষা জাতীয়করণ, নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজসহ অবসরের ৬ মাসের মধ্যে অবসর ও কল্যাণের অর্থ প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে।
এএসএল/এফএ