জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবিতে পুনরায় আমৃত্যু অনশন কর্মসূচি দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে পূর্বের ন্যায় কোটা বহালের দাবিতে আগামীকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। আর পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে অনশনে বসেন তারা। এর আগে সোমবার সকাল পৌনে ৬টার দিকে উপাচার্যের আশ্বাসে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে প্রায় ১৯ ঘণ্টা অনশনের পর কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন ১৪ জন শিক্ষার্থী।
বিজ্ঞাপন
অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ইমরান হোসেন রাহাত, অর্থনীতি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী নকিব আল মাহমুদ অর্ণব, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুয়িদ মুহম্মদ ফাহিম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান লিমন, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মালিহা নামলাহ, আইবিএ ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারহানা বিনতে জিগার ফারিনা, ইংরেজি বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী চিশতি এবং বাংলা বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুহাম্মাদ মাহাদী।
অনশনরত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী চিশতি বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা সকল প্রকার কোটা বৈষম্য বাদ দেওয়ার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। এর প্রেক্ষিতে গতকালকে আমরা গণঅনশনে বসি। প্রায় ১৯ ঘণ্টা অনশন পালন করার সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সাথে সারারাত অবস্থান করে। সারারাত অবস্থান করার পরে আমরা মানবিকভাবে তাদের কথায় আশ্বস্ত হই এবং তারা জানায় তারা নীতিগতভাবে আমাদের দাবির সাথে একমত। ফলে আমরা আমাদের অনশন কর্মসূচি স্থগিত করি এবং প্রশাসনকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় দেই তাদের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য। কিন্তু বিকেলে তারা যে সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য নিয়ে আসলেন; সেটা আমাদের এই অনশন কর্মসূচির সাথে প্রহসনমূলক।
তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে জাহাঙ্গীরনগরের মতো স্থানে পোষ্য কোটার কোনো জায়গা হবে না। অযৌক্তিক পোষ্য কোটাকে বাতিল করার জন্য আমরা আমাদের আমরণ অনশন কর্মসূচি পুনরায় চালু করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সামনে এই পোষ্য কোটাকে লিখিতভাবে বাতিল করা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই অনশন চলবে। এর কারণে আমাদের যদি মৃত্যুবরণও করতে হয়; তাহলে আমরা সেটার জন্যও প্রস্তুত আছি। প্রশাসন যদি পোষ্য কোটা বহাল রাখতে চায় তাহলে আমাদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে পোষ্য কোটা বহাল রাখতে হবে আর না হয় আমাদের সামনে পোষ্য কোটার কবর রচনা করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
পুনরায় অনশনে বসার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাবি শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ সিয়াম বলেন, প্রশাসন আজ সকালে আমাদের যে আশ্বাস দিয়ে আমাদের অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন; তার ভিত্তিতে আমরা ভেবেছিলাম আজকের বিকেলের মিটিংয়ে তারা আমাদের পক্ষে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে আসবেন। কিন্তু তারা সম্পূর্ণ গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছেন। এই প্রশাসন পুরো বিষয়ে কালক্ষেপণের জন্য আমাদের সামনে ’৭৩ এর অধ্যাদেশের একটি মূলা ঝুলিয়েছে; যেটা আসলে ’৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সঠিক না। প্রশাসন বলছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই ’৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি চাইলে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে তারা পোষ্য কোটা রাখবে কি রাখবে না।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের কাছে ১৫ কার্যদিবস সময় চেয়েছে; কিন্তু আমরা সেটা প্রত্যাখান করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের জন্য অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিল করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পূর্বঘোষিত অনশন কর্মসূচি চলবে। শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের জন্য পোষ্য সুবিধা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের পরে আমরা কর্মচারীদের জন্য কেমন পোষ্য সুবিধা থাকবে সেটা নিয়ে আলোচনা করবো। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য পোষ্য কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই অনশন কর্মসূচি চলবে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। আমরা সরাসরিভাবে এখানে কোনো কিছু ঘোষণা করতে পারি না।
প্রতিনিধি/ এফএ