বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৭ এএম

শেয়ার করুন:

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বিতর্ক

মেডিকেল ভর্তিতে কোটাধারী শিক্ষার্থীদের সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৪০ নম্বর পেয়ে কিছু শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ফলে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন এবং গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভও চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল রোববার প্রকাশিত হয়। ফল অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারী ১ লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ হাজার ৯৫ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন, যার পাসের হার ৪৫.৬২ শতাংশ। সরকারি মেডিকেল কলেজের ৫ হাজার ৩৭২টি আসনে এবং ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ৬ হাজার ২৯৩টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।


বিজ্ঞাপন


মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার পাস নম্বর ছিল ৪০। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে— ৪০ বা তার কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা কোটার মাধ্যমে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে গেছেন, যার ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী, যাদের নম্বর ৭০-এর বেশি, তারা ভর্তি হতে পারেননি।

ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেকেই বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাস্তবতা এখন আর বর্তমান প্রজন্মের জন্য প্রযোজ্য নয়, কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের সংখ্যা বর্তমানে সীমিত এবং তারা প্রায়ই কম নম্বর পেয়েও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এতে মেধার অবমূল্যায়ন হচ্ছে এবং এটি অযৌক্তিক।

রংপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘আমার ৭০.২৫ নম্বর, কিন্তু কোটাধারীরা ৪০ নম্বর পেয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটা কি বৈষম্য নয়?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কোটা যদি রাখতেই হয়, তাহলে ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা উচিৎ ছিল। ৪০ বা ৪১ নম্বর পেয়ে কীভাবে ভালো ডাক্তার তৈরি হবে?’’

এছাড়া, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন, যেখানে কোটা ব্যবস্থা বাতিল এবং মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল পুনঃপ্রকাশের দাবি জানানো হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করেন।


বিজ্ঞাপন


এই পরিস্থিতিতে, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর কোটায় ভর্তির জন্য নির্বাচিত ১৯৩ জন শিক্ষার্থীর ফল আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৯৩ জনের কোটার সনদ যাচাই করার জন্য আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সনদ যাচাইয়ের পর, যদি কোনো ভুল বা অসত্য তথ্য পাওয়া যায়, তবে তাদের ভর্তি বাতিল হবে এবং শূন্য আসন মেধা তালিকা থেকে পূর্ণ করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. রুবীনা ইয়াসমিন বলেছেন, ‘‘শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনার সন্তানরা কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন। মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি বাদ পড়বেন।’’ তিনি আরও জানান, কোটার অধীনে ২৬৯টি আসন সংরক্ষিত ছিল, কিন্তু শর্ত পূরণ না হওয়ায় মাত্র ১৯৩ জন পরীক্ষার্থী কোটায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৭৬টি আসন মেধা তালিকা থেকে পূর্ণ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এখন শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য হবে। মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি বা অন্যান্য আত্মীয়দের জন্য এটি প্রযোজ্য হবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, ‘‘এটি একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং কোটা বাতিলের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া রয়েছে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘যদি ১৯৩ জনের মধ্যে কোনো ত্রুটি ধরা পড়ে, তাহলে তাদের ভর্তি বাতিল হবে এবং মেধা তালিকা থেকে সেই শূন্য আসন পূর্ণ করা হবে।’’

এদিকে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এবং বিক্ষোভের মুখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টির সঠিক যাচাই-বাছাই করতে বাধ্য হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে, ২৭-২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলমান যাচাইয়ের পর সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের অধিকার আদায়ের দাবি জানিয়েছেন।

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর