শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

ডাকসুর গঠনতন্ত্র নিয়ে যত আপত্তি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ঢাবি
প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ডাকসুর গঠনতন্ত্র নিয়ে যত আপত্তি
ডাকসু ভবন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যম ডাকসু নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু ডাকসুর গঠনতন্ত্রে রয়ে গেছে বেশ কিছু সমস্যা। এ নিয়ে আছে তর্ক বিতর্ক।

ডাকসুর কাঠামোগত সংস্কারসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজছে ছাত্র সংগঠনগুলো। বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে ছাত্র সংগঠনগুলোকে এ নিয়ে বেশ সোচ্চার হতে দেখা গেছে।


বিজ্ঞাপন


বর্তমানে ডাকসুর গঠনতান্ত্রিক কাঠামো মোটেই গণতান্ত্রিক নয় বলে মনে করছেন বেশ কিছু সংগঠন। তাদের মতে বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে স্বৈরতান্ত্রিকতার অবকাশ রয়েছে।

গঠনতন্ত্রে যত সমস্যা

ডাকসু'র গঠনতন্ত্র ৫ (এ) ধারা অনুযায়ী পদাধিকার বলে উপাচার্য ছাত্র সংসদের সভাপতি হবেন। যদিও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে, শিক্ষকদের প্রতিনিধি শিক্ষকদের মধ্য থেকে, কর্মচারীদের প্রতিনিধি কর্মচারীদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হবে এটাই স্বাভাবিক।

গঠনতন্ত্রে আরও উল্লেখ আছে, সভাপতি অর্থাৎ উপাচার্য যেকোন সময় যেকোন সদস্যকে বরখাস্ত এমনকি পুরো নির্বাহী কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করতে পারেন। এটিকেও গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করছে অধিকাংশ অংশীজন। শিক্ষার্থীদের দ্বারা নির্বাচিত কোনো প্রতিনিধিকে এভাবে বরখাস্ত করার অধিকার সভাপতি অর্থাৎ উপাচার্যের হাতে থাকতে পারে না।


বিজ্ঞাপন


গঠনতন্ত্রের ৭ (এইচ) ধারা অনুযায়ী- ‘কোনো বৈঠকের বিষয় সভাপতি কর্তৃক অনুমোদিত না হলে তা আলোচনার জন্য উপযুক্ত হবে না।’ অধিকাংশ সংগঠনের আশংকা এই ধারা অনেক সময় ন্যায্য ও জরুরি দাবি উত্থাপনের সম্ভাবনাকে সীমিত করবে।

গঠনতন্ত্রের ৮ (এম) ধারা অনুযায়ী- ‘নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত ঘোষণায় সভাপতির আদেশই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে এবং দেশের কোনো আদালতে এ সংক্রান্ত অভিযোগ বা রায় কার্যকরী হবে না।’ অথচ বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১নং অনুচ্ছেদ এই ধারার সাথে সাংঘর্ষিক। এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যেকোন নাগরিক যেকোন পরিস্থিতিতে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার রাখেন।

গঠনতন্ত্রের ১৬ ধারা অনুযায়ী- গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিধান সিণ্ডিকেটের হাতে দেওয়া হয়েছে, যেখানে কোন ছাত্র প্রতিনিধি নেই। এই বিধান থাকা উচিত সিনেটের হাতে, যেখানে ছাত্র প্রতিনিধিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিরা রয়েছেন। উপরন্তু বর্তমান সিন্ডিকেট বডি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।

গঠনতন্ত্রের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে- এই সংবিধানে উল্লেখিত বিষয়সমূহের বাইরে যেকোন সিদ্ধান্ত সভাপতি কতৃর্ক গৃহীত হবে এবং সেই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। ঠিক একই রকম ধারা রয়েছে হল সংসদ গঠনের অংশেও; যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক বলে অভিযোগ ছাত্র সংগঠনগুলোর।


রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামত

বাংলাদেশ ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক বলেন, কত দ্রুত বা কত দেরিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে তা নির্ভর করবে প্রশাসনের এসব প্রয়োজনীয় সংস্কার উদ্যোগ কেমন গতিতে চলবে তার ওপর। ডাকসুর গঠনতান্ত্রিক সংস্কার সম্পন্ন করে অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করা হোক এটা আমরা চাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক হোসাইন আহমাদ জুবায়ের বলেন, ডাকসুর গঠনতান্ত্রিক কাঠামোতে প্রশাসনকে যে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সে সকল ক্ষমতা থাকা উচিত শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে। প্রশাসনের হাতে মূল কর্তৃত্ব থাকতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী আমলে ডাকসুর গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু মুজিববাদী উপাদান ঢুকানো হয়েছে সেগুলো সংস্কার আবশ্যক। আমরা মনে করি সেসব সংস্কার দ্রুতই করা সম্ভব, এতটুকু সংস্কারের প্রশ্নে ডাকসু নির্বাচন বিলম্বিত করা অযৌক্তিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গনেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারা বাংলাদেশই যেন ট্রমাটাইজড হয়ে আছে। দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদের প্রভাবে পুলিশ বাহিনীসহ প্রশাসনের সকল কাঠামো প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। ছাত্রলীগের রোষানলে পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী নতুন করে হলে উঠছে। ছাত্রদলসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র সংগঠনসমূহ অনেক বছর পরে মুক্তভাবে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান করতে পারছে। এই অবস্থায় খুব জরুরি ভিত্তিতে বা খুব দেরিতে ডাকসু নির্বাচনের মানে হতে পারে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করা।

তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত সকল স্টেকহোল্ডারদের মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে উপযুক্ত সংস্কারের মাধ্যমে ডাকসুর গঠনতন্ত্রকে আধুনিক ও কার্যকরী করে গড়ে তোলার পরে একটা সময় নির্ধারণ করা যাতে করে মোটাদাগে এসকল ভয়ঙ্কর ট্রমা কাটিয়ে ওঠার পরে শিক্ষার্থীরা সুন্দর মনমানসিকতা নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে একটি সত্যিকার অর্থেই কার্যকর ছাত্র সংসদ তথা ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে।

আরও পড়ুন:

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ-শিবিরকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ‘না’

সংস্কার প্রস্তাবনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডাকসুর গঠনতন্ত্র ও নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়ে আমরা আমাদের সুনির্দিষ্ট চিন্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অচিরেই জানাবো এবং তখন সাথে সাথে আপনাদেরকেও অবহিত করবো। তারপর আমরা এইসব সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের অবহিত ও সচেতন করতে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রমও গ্রহণ করবো।


আরএ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর