শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: এখন সময় নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে চলার

মো. শাহিন রেজা
প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: এখন সময় নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে চলার

ষাটের দশকে খুলনা শিল্প নগরী হিসেবে দেশ বিদেশে পরিচিত ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই জৌলুস হারিয়েছে। তবে সমসাময়িক সময়ে এর সঙ্গে আরও একটি নাম যুক্ত হয়েছে। বলছি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে গেছে। 

গল্লামারী থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ধরে এগোলেই ময়ূর নদীর পাশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ১০৫ একর যায়গা নিয়ে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১৯৯১ সালের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে।


বিজ্ঞাপন


ku1

বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতেই প্রধান প্রবেশ দ্বারটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। রাস্তা ধরে সামনে এগুলো হাতের বাম দিকে পড়ে প্রশাসনিক ভবন। এখানে প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন একাডেমিক ও গবেষণা কেন্দ্র বিশিষ্টজনদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। প্রশাসনিক ভবনের পাশ দিয়ে রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকলে একটি চমৎকার লেক চোখে পড়বে। এর পাশেই শহীদ মিনার। এরপর রাস্তাটি শেষ হয়ে ডানে বামে চলে গেছে। 

রাস্তা দুটি ধরে এগোলে একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি, মসজিদ, হল, খেলার মাঠসহ বিভিন্ন স্থাপনা চোখে ধরা দিবে। স্থাপনাগুলো যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনই সবুজে ঘেরা। তবে এখানকার গোলপাতার তৈরি ক্যাফেটেরিয়া ছাত্র ছাত্রীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় স্থান।

ku2


বিজ্ঞাপন


সামগ্রিকভাবে বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ শিক্ষা ও গবেষণার জন্য উপযুক্ত। রাজনীতি মুক্ত পরিবেশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও শিক্ষা সংস্কৃতি চর্চা ও গবেষণায় বেশ মনোযোগী। ফলে দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যায়গা করে নিতে পরেছে খুবি। 

সম্প্রতি টাইমস হায়ার এডুকেশন ২০২৫ সালের নতুন র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে যেখানে টানা তৃতীয়বার স্থান পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গ্লোবাল র‍্যাঙ্কিংয়ে খুবির অবস্থান ১২০১-১৫০০ এর মধ্যে। ফলে বলা যায় এখানে একটি গবেষণার পরিবেশ বিরাজ করছে।

ku3

গত সপ্তাহে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য হিসেবে যথাক্রমে নিয়োগ পেয়েছেন নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের শিক্ষক অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম ও পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মো. হারুনর রশিদ খান। দুজনই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন দীর্ঘদিন ধরে। ফলে সবাই প্রত্যাশা করছেন এবার নতুন আঙ্গিকে সাজবে বিশ্ববিদ্যালয়। 

বিশেষ করে শিক্ষা ও গবেষণা কাজে বরাদ্দ বাড়ানো, নিয়মিত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজন এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে নিবন্ধ প্রকাশের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে গবেষণায় প্রথম দিকে থাকবে খুবি। এরই সাথে নতুন প্রশাসন আবাসন সংকটের সমাধান, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ধরে রাখা, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে নজর দিবে। 

ku4

খুলনা অঞ্চলে অনেকগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এখানকার শিল্প কলকারখানাগুলো ধ্বংসের মুখে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে খুলনার ইতিহাস ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে, দক্ষ গ্রাজুয়েট ও গবেষক তৈরিতে ভূমিকা রাখতে হবে। এরই মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেলের মাধ্যমে নতুন কিছু আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে। যেখানে প্রাধান্য পাবে পর্যটন শিল্প, ছোট বড় কলকারখানা ও ঐতিহাসিক স্থান। এর মাধ্যমে খুলনা অঞ্চলে বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ ঘটবে যা সামগ্রিক ভাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানত দুইটি কাজ। একটি শিক্ষাদান আর অন্যটি গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি। ফলে নতুন নতুন ভাবনা তৈরি করে সমসাময়িক পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও কয়েকটি অনুষদ চালু করা যায়। এর মধ্যে মেডিকেল সাইন্স অন্যতম। 

ku5

খুলনা অঞ্চল দুর্যোগের প্রাণকেন্দ্র। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয় চালু করতে পারে। হযরত খানজাহান আলী (রহ:) এ অঞ্চলে এসেছিলেন ধর্ম প্রচার করতে। তিনি মুসলিম ধর্ম প্রচারক, সুফি ও আউলিয়া ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের স্থাপনা এখানে রয়েছে। ফলে ধর্ম চর্চার উর্বর ভূমি হিসাবে এখানে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয় চালু করা সম্ভব। 

সময়ের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বৃদ্ধি পাবে। এজন্য পাশের জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশি শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধিতে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বহির্বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পাঠ্যসূচি, বিভাগ ও গবেষণায় ভিন্নতা আনতে হবে।

ku6

বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশিজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ফলে তারা জানেন কীভাবে এগোলে খুবি পৃথিবী সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশে নাম লেখাতে পারবে। এখন প্রয়োজন সবার সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সেই রোড ম্যাপ ধরে এগিয়ে চলা। 

লেখক: ফ্রিল্যান্স নাগরিক সাংবাদিক

এনএম 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর