প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গবেষক ও গণিতবিদ অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম এর স্মরণে দেশে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আয়োজিত হয়েছে '১ম জামাল নজরুল ইসলাম জাতীয় তরুণ গবেষক সম্মেলন ২০২২'।
চবির জামাল নজরুল ইসলাম রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স এবং চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটির (সিইউআরএইচএস) উদ্যোগে এ গবেষক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
শনিবার (২১ মে) চবির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
'কল্পনা ও উদ্ভাবনের পথে আগামী প্রজন্ম' প্রতিপাদ্যে পদার্থবিজ্ঞান ও প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান, কৃষি ও উদ্ভিদ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিদ্যা, সমাজবিজ্ঞান, মানববিদ্যা এবং বাণিজ্য, এ ছয়টি শাখা থেকে সারা দেশের ৭৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৫২৪ জন তরুণ শিক্ষার্থী ও গবেষক এতে অংশ নেন। তার মধ্যে গবেষণার এই ছয় ক্যাটাগরিতে ১৮ জনকে এবং গবেষণা আইডিয়ায় ৭ ক্যাটাগরিতে আরো ২১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
চবি শিক্ষার্থী নুসরাত আফরিন ও ফারহানা ইয়াসমিনের সঞ্চালনায় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আদনান মান্নানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী।
সম্মেলনে প্রধান প্রবন্ধ উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বোর্ড মেম্বার গবেষক ড. সেঁজুতি সাহা। স্পটলাইট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের প্রাক্তন অধ্যাপক ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য ড. আইনুন নিশাত। জামাল নজরুল ইসলাম স্মারক বক্তৃতায় প্রধান আলোচনায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আরশাদ মোমেন। 'তরুণদের বিজ্ঞান গবেষণায় উদ্বুদ্ধকরণ' পর্বে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম এবং কবি ও সাংবাদিক ড. আবুল মোমেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. বেনু কুমার দে, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. নাসিম হাসান, সম্মেলনের সদস্য সচিব প্রফেসর ড. অলক পাল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগির এবং ড. জামাল নজরুল ইসলামের কন্যা সাদাফ সিদ্দিকি ও নারগিস ইসলাম। এছাড়াও সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হোন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার তার বক্তব্যে বলেন, "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের গবেষণা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। বাংলাদেশ সমুদ্রবিজ্ঞান খাতে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষকরা আমাদের স্বপ্ন দেখায়, আমরা ২০৫০ সালের মধ্যে গবেষণায় শীর্ষ ২০ এ থাকব ইনশাআল্লাহ। গবেষকরা এগিয়ে চলুক, বাংলাদেশ এগিয়ে চলুক সমৃদ্ধির পথে, এই কামনা।"
আয়োজনের বিভিন্ন পর্বে ছিল ভরুণদের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্ম উপস্থাপন, গবেষণা প্রদর্শনী, বাংলায় অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত থ্রি মিনিট থিসিস, জামাল নজরুল ইসলাম স্মারক বক্তৃতা, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, সম্মাননা ও পুরস্কার বিতরণ।
অস্ট্রেলিয়ার 'থ্রি মিনিট থিসিস' অংশে ১২০ জন প্রতিযোগী থেকে বাচাই করে ৮ জন তরুণ গবেষক বাংলা ভাষায় তাদের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। এই পর্বে উঠে আসা ধারণাগুলোর মধ্যে ছিলো 'সমুদ্র উপকূল রক্ষার উপায়, শিশুর জন্মের আগেই ত্রুটি নির্মূল, সাগরের প্রাণীদের বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার উপায়, মহামারী পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, কোভিড সার্স কোভ-২ এর এন্টিবডি পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা'। এ পর্বে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চবি শিক্ষক অসীম দাশ, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার আব কমার্সের এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি মুনাল মাহমুদ, ড. সেঁজুতি সাহা, আরসাদ মোমেন, মুনির হাসান।
দিনভর নানা আয়োজনে সারা দেশের এক দল গবেষকদের পদচারণায় বেশ প্রাণবন্তভাবে অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন। শিক্ষার্থী ও তরুণ গবেষকদের পাশাপাশি 'জামাল নজরুল ইসলাম জাতীয় গবেষক সম্মেলন ২০২২' শীর্ষক এই সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ গবেষক হিসেবে ১২০ জন অধ্যাপক ও শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, প্রখ্যাত গবেষক, গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন 'গাণিতিক ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র'। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাল নজরুল ইসলাম রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিক্যাল ও ফিজিক্যাল সায়েন্সের অধীনে ২৯ জন শিক্ষার্থী এমফিল ডিগ্রি এবং ১৯ জন পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। অন্যদিকে চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনগুলোতে গবেষণা কার্যক্রম প্রসারের লক্ষ্যে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষামূলক বিভিন্ন সেশন, সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করে থাকে সংগঠনটি।
বিজ্ঞাপন
প্রতিনিধি/এইচই
