মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

মাউশিতে লিখিত অভিযোগ

শিক্ষা কর্মকর্তার ‘ঘুষের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে’ শিক্ষকদের আকুতি

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৪, ০৮:৫৯ এএম

শেয়ার করুন:

শিক্ষা কর্মকর্তার ‘ঘুষের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে’ শিক্ষকদের আকুতি

* এক উপজেলাতেই কাটাচ্ছেন ৭ বছর 

* ঘুষের টাকা দিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত শিক্ষকরা


বিজ্ঞাপন


* অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা: মাউশির ডিজি

উত্তরের জেলা নীলফামারীর শিক্ষকরা একজন শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে যেন অসহায় হয়ে পড়েছেন। গত সাত বছর ধরে জলঢাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে থাকা চঞ্চল কুমার ভৌমিক টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। এই উপজেলার শিক্ষকদের অভিযোগ- নিয়োগ ও এমপিওসহ তার দপ্তরে থাকা যেকোনো কাজের জন্য গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা।

অভিযোগ আছে, দাবি করা টাকা না পেলে আটকে দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট ফাইল। ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। কিন্তু শেষ পর্যায়ে বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা টাকা দিয়ে কাজ আদায় করলেও নিজেরা হয়ে যান সর্বস্বান্ত।

এমন পরিস্থিতিতে এই কর্মকর্তার হাত থেকে রক্ষা পেতে জলঢাকার একাধিক কলেজ, স্কুল, মাদরাসার প্রধানরা দারস্থ হয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি)। মাউশির মহাপরিচালকের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে অবিলম্বে এই কর্মকর্তার বদলির দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা।


বিজ্ঞাপন


অবশ্য নিজের বিরুদ্ধে মাউশিতে অভিযোগ জমা পড়ার ঘটনা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা চঞ্চল কুমার ভৌমিক। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘আমার চেয়ে ভালো কর্মকর্তা এই বিভাগে আছে বলে মনে হয় না। ঢাকায় কোনো অনুষ্ঠান হলে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি নিশ্চয়ই দক্ষ-সৎ বলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এই প্রথম শুনলাম।’

দীর্ঘ সাত বছর ধরে একই উপজেলায় কর্মরত আছেন কীভাবে এমন প্রশ্ন করা হলে চঞ্চল কুমার বলেন, ‘মাঝে একবার বদলি করা হয়েছিল। সেটা থামিয়ে দিয়েছি। অলমোস্ট শিক্ষার সবাই আমাকে চেনেন। খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন একজন সৎ কর্মকর্তা হিসেবে বিভাগে আমার পরিচয় আছে।’ 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসা এমন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। সত্যতা পেলে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অসাধু কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী ঘুষ দিতে বাধ্য হন শিক্ষকরা। অপারগতা প্রকাশ করলে উল্টো হয়রানির মুখে পড়তে হয় শিক্ষকদের। খোদ মাউশির মহাপরিচালকও এক বক্তব্যে অসাধু কর্মকর্তাদের বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন।

মাউশি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাউশিতে জলঢাকা উপজেলার চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান মহাপরিচালক বরাবর এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগকারী শিক্ষকরা হলেন- গোলনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হোসাইন আহমাদ, উত্তর দেশীবাই ফয়জুল উলুম দাখিল মাদরাসার সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, রশিদপুর বালিকা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহিদুল ইসলাম ও বালাপাড়া দারুস সুন্নাত দাখিল মাদরাসার সুপার মো. সাইদুল ইসলাম।

শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগে যা আছে

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগপত্রে শিক্ষকরা বলেছেন, চঞ্চল কুমার ভৌমিক ২০১৭ সালের ২৫ মে জলঢাকা উপজেলায় যোগদান করেন। দীর্ঘদিন একই উপজেলায় কর্মরত থাকায় সর্বত্র তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের হুমকি, সামান্য কাজের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। বিশেষ করে নতুন শিক্ষকদের এমপিও ফাইল পাঠানোর জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মোটা অংকের টাকা দিতে বাধ্য করেন। সাধারণ শিক্ষকরা নিরুপায় হয়ে এই টাকা দিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, কর্মকর্তার অফিসে গেলে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন ও বিভিন্ন রকমের ধমক দেন। দীর্ঘ আট বছর একই কর্মস্থলে থাকার ফলে তার বেপরোয়া আচরণে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা ভুগছেন। তাই এই কর্মকর্তাকে অন্যত্র দ্রুত বদলির ব্যবস্থা করে জলঢাকা উপজেলার শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।

শিক্ষকরা বদলি চাইলেও চঞ্চল কুমার ভৌমিকের দাবি ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘এই স্টেশনে আরও কেউ কেউ আসার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেখানকার শিক্ষকরা ভুয়া, পেছনের তারিখে নিয়োগ দেখিয়ে এমপিও করার আবেদন নিয়ে আসেন সেগুলো নিয়মবহির্ভূত বলে না করায় তারা এসব অভিযোগ দিতে পারেন। কাজের বিনিময়ে টাকা নেওয়ার বিষয় আমার সঙ্গে নেই। এটা আমি বিশ্বাসও করি না।’

তবে নীলফামারীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগকে কেন্দ্র করে আর্থিক লেনদেন হয় বলে প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা।

বিইউ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর