জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী অঙ্কন বিশ্বাসের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ অসুস্থতার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল নাকি স্বামি শাকিলের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়েছিলেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর সহপাঠীদের বক্তব্য ও সামাজিক মাধ্যমে দেয়া বিভিন্ন পোস্ট থেকে এই প্রশ্ন সামনে এসেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন তাঁর সহপাঠীরা।
গত রোববার (৮মে) রাত ১১টায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় অঙ্কনের মৃত্যু হয়। তার আগে ২৪ এপ্রিল তাকে হঠাৎ করেই রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন বলা হয়েছিল তিনি ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন এবং তাঁর হৃদপিণ্ডের ধমনীতে ব্লকের সমস্যা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তবে অঙ্কনের বান্ধবী সুইটির দাবি, ‘অঙ্কন হঠাৎ অসুস্থ হয়নি। তাকে অসুস্থ বানানো হয়েছিলো।’ তিনি বলেন, আঙ্কন আমাকে নিজের কষ্টের কথা শেয়ার করতো। কিছুদিন আগে সে আমাকে জানিয়ে ছিলো, শাকিল (স্বামি) আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে।
বিষয়টি নিয়ে অঙ্কনের আরেক বন্ধু আবুল মুকিত সানি ফেইসবুক টাইমলাইনে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘অঙ্কন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করার পর বাধা দেয় শাকিল। এছাড়াও নানা সময়ে শাকিল তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকিও দিয়েছে।’
অঙ্কন আর শাকিল বিয়ে করেছিলেন পারিবারকে না জানিয়ে। তাদের একজন হিন্দু অন্যজন মুসলমান। এই বিষয়টি নিয়েও অঙ্কন মানসিকভাবে ভীত ছিল সবসময়। আর এই সুযোগ পূর্ণরূপে ব্যবহার করে করেছেন শাকিল। এমন অভিযোগ করে মুকিত সানি লিখেছেন, ‘অঙ্কনকে সে (শাকিল) হুমকি দিত যে তাদের সম্পর্কের কথা তার পরিবারকে জানিয়ে দেবে, কাপলছবি দেখাবে সবাইকে। এসব হুমকিতে অঙ্কন বেশ কিছুদিন ধরেই শারিরীক ও মানসিকভাবে ভেগে পড়েছিল।
মুকিত সানির পোস্টে উঠে আসে ঘটনার দিনের কথা। তিনি বলেন, অঙ্কনের সাথে আমাদের সর্বশেষ ২৩ এপ্রিল দেখা হয়েছিলো, বন্ধুরা সবাই ইফতার করেছিলাম একসাথে। অঙ্কন সেদিন রাতে আমাকে বলেছিল যে পরদিন দেখা করবে। পরদিন আমাকে আর কল দেয়নি। দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতাল থেকে শাকিলের বন্ধুর মাধ্যমে আমাকে কল করে অঙ্কনের বিষয়টা জানানো হয়। আমি তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে দৌড়ে গিয়ে অঙ্কনকে অচেতন অবস্থায় পাই আজগর আলী হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে। সেখানে শাকিলকেও একটি বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখি। শাকিল তখন বলছিলো যে অঙ্কন বাসা থেকেই কিছু খেয়ে এসেছে। আমি বাসায় আসা মাত্রই নিস্তেজ হয়ে যায়। তখন আমি তাকে লেবু শরবত খাওয়াই, মাথায় পানি দেই। তারপর অঙ্কন নিজেই বলেছে যে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। আমি চোখে কিছু দেখছি না।’
বিজ্ঞাপন
অঙ্কন ও শাকিলের বিয়ের প্রসঙ্গে তার আরও সহপাঠীরা বলেন, অঙ্কন এ বিয়ে করতে কোনো সম্মতি ছিলো না। বিয়ে করতে তাকে এক রকম জোর জবরদস্তি করা হয়। এছাড়াও এ বিয়েতে অঙ্কনের পক্ষে ছিলো না কোনো স্বাক্ষী। যারা স্বাক্ষী ছিলো তারা সকলেই ছিলো শাকিলের ঘনিষ্ঠ লোকজন।
শাকিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম ব্যাচের আইনবিভাগে মাস্টার্স করা ছাত্র এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি, যার সাথে অঙ্কনের একটা সময় সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেছিল। ঘটনার কয়েকদিন পর শাকিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট দিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে তার সহপাঠীরা ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানার ওসি মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, ‘এ ঘটনায় একটা পুলিশ ফাইল হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো অভিযোগ আসে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একেবি

