শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ঢাকা

ঢাবির সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এবার বিইউপি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ঢাবি
প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

ঢাবির সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এবার বিইউপি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে এবার যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) সাবেক এক নারী শিক্ষার্থী।

এ ব্যাপারে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।


বিজ্ঞাপন


বিষয়টি ঢাকা মেইলকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের একজনের কাছ থেকে অধ্যাপক ড. নাদির জুনায়েদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে। ওই শিক্ষার্থী মূলত বিইউপির। সে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করছে।’

তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত অভিযোগগুলো মূলত উপাচার্য বরাবর দেওয়া হয়। প্রক্টরের কাছেও অনুলিপি পাঠানো হয়। আমি সেই অনুলিপিটা পেয়েছি।’

অভিযোগপত্রে ওই শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, ‘আমি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছি, সেখানে অধ্যাপক নাদির জুনাইদ একটি কোর্স পড়াতে গেস্ট ফ্যাকাল্টি হিসেবে আমাদের বিভাগে এসেছিলেন। আমি ক্লাসের সিআর হওয়ার সুবাদে আমাকে তার সঙ্গে এক ধরনের যোগাযোগ রাখতে হতো। প্রথমত উনি নিয়মিত আমাকে ফোন দিতেন। বাসায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিতেন। কিন্তু সমস্যা হলো, উনি ব্যক্তিগত অনেক তথ্য জিজ্ঞেস করতেন। আমাকে এমনও জিজ্ঞেস করেছেন, আমার বয়ফ্রেন্ড আছে কি না- এ রকম। ব্যাপারটা এমন দাঁড়াল, ওনার পড়াশোনার কাজের থেকে বেশি আগ্রহ ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। এসব নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে চাইতেন। সাধারণত উনি রাত ১০টা বা ১২টার দিকে ফোন দিতেন। উনি আমাকে যখন এইভাবে ফোন বা ভিডিও কল দিতেন, আমি খুবই বিব্রত হতাম। আমি প্রায় ওনার ফোন না ধরার চেষ্টা করতাম, কিন্তু সেটার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পরবর্তী ক্লাসে দেখা যেত। ফোন না ধরায় আমাকে ক্লাসে নানাভাবে হেনস্তা করতে চাইতেন। ক্লাসে এভাবে হেনস্তার শিকার হওয়ার পরও উনি আবারও আমার সাথে যোগাযোগ করতেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও উল্লেখ করেন, ক্লাসে এবং ক্লাসের বাইরে ওনার মুখ ও মুখোশ ছিল আলাদা। উনি ক্লাসে হেনস্তা করার পরে আবার দুঃখপ্রকাশ করে আমাকে মেসেজ দিতেন, ফোন দিতেন। পরে অনেকটা বাধ্য হয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে ওনার ফোন এবং ভিডিও কল রিসিভ করতাম। তখন ভিডিও কলে বলতেন, একটু তোমার চেহারাটা দেখি, তোমার চুলটা একটু দেখি, তোমার জুম পিক দেখি। আমার কয়েকবার মনে হইছে তখন উনি হস্তমৈথুন করেন। উনি সবসময় চাইতেন, তাকে সব আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখি। ‘উনি অনেক হ্যান্ডসাম’- এটা উনি বারবার শুনতে চাইতেন। উনি এত সুদর্শন, এত তরুণ, ওনাকে দেখে আমরা কেন আকর্ষিত বোধ কেন করছি না- এরকম বিষয় নিয়ে প্রায়ই খোঁচা দিতেন। প্রায়ই মেসেঞ্জারে/হোয়াটসঅ্যাপে ওনার ভিডিও বা ছবি পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করতেন, ‘আমি দেখতে কেমন’। পরে বুঝেছি, এর সবই ছিল ওনার ফাঁদপাতার কৌশল।’


বিজ্ঞাপন


অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে অশ্লীল কথোপকথন চালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগ তুলে এই শিক্ষার্থী বলেন, উনি আমাকে শারীরিক স্পর্শ বা সেরকম কিছু করেননি। কিন্তু বিয়ের কথা বলে আমার সঙ্গে দীর্ঘদিন কথোপকথন চালিয়ে গেছেন। উনি প্রায় অশ্লীল কথাবার্তা বলতেন। নানা রকম যৌন উত্তেজনামূলক কথা আমার সঙ্গে বলতে চাইতেন। সবসময় অন্তরঙ্গ কথা বলার প্রতি ওনার বিশেষ আগ্রহ থাকত। আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গা নিয়ে তিনি আমাকে প্রশ্ন করতেন। আমার পোশাক নিয়েও অযাচিত মন্তব্য করতেন। বলতেন, আমি কেন ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরি না। কেন বাংলাদেশের মেয়েদের পোশাক এত বাজে? নানারকম অশ্লীল কথাবার্তা তিনি গল্প আকারে বলতেন। যেমন কোন সিনেমায় নায়ক নায়িকা কীভাবে অন্তরঙ্গ হলো, নায়ক নায়িকার সঙ্গে কী কী করল, এসব উনি খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে শোনাতেন এবং নানাভাবে বোঝাতেন যে উনি এইসব করতে চান। আমাকে বলতেন, মনে করো আমরাও এমন করছি।

অধ্যাপক নাদির জুনাইদ অন্য নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন উল্লেখ করে অভিযোগকারী বলেন, আমার ক্লাসের আরেকটা মেয়ের সঙ্গেও এমন করেছেন উনি। ওই মেয়েকেও উনি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়েছেন। ছয় মাসের জন্য পড়াতে গিয়ে একই ক্লাসের দুজন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন, এটাকে স্বাভাবিক মনে করার কোনো কারণ নেই। আমাকে ‘গোয়েন্দা’র মতো ব্যবহার করে অন্য মেয়েদের খোঁজ নিতেন উনি। উনি প্রায়ই ফোন করে জিজ্ঞেস করতেন, ক্লাসের কোন মেয়ের কার সঙ্গে প্রেম চলতেছে। ক্লাসের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ওনার অস্বাভাবিক রকমের আগ্রহ ছিল।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি নম্বর কম দেওয়া নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ১২তম ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগের পর ১০ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে প্রক্টরের কাছে লিখিত দেন বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী। যদিও তিনি (নাদির জুনাইদ) এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

প্রতিনিধি/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর