প্রেম জনিত ঘটনায় অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী ফিরোজ । এমনটাই বলছে কাজী ফিরোজ সবচেয়ে কাছের বন্ধু আতিউর রহমান অপু।
বন্ধুর মৃত্যুর শোকে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজের ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে এমনটি দাবি করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেইলকে আতাউর রহমান বলেন, কাজী ফিরোজ সঙ্গে এক মেয়ের সম্পর্ক ছিল। প্রায় দেড় বছরের সম্পর্কের মাঝে গোপনে তারা বিয়েও করেছিল। কয়েকদিন আগে আমামে নোটারি পাবলিক দলিলও দেখিয়েছিল।
এ বিষয়ে আতাউর তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। যার শিরোনাম ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে’।
তারপর নিচে তিনি লিখেন, বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে নিয়মিত খোঁজ খবর নেওয়ার অংশ হিসেবে গত শুক্রবার সকাল ১১ টায় ফোন দেই। জানতে পারি ওদের সম্পর্ক ঠিক করার জন্য ফিরোজের মা, বড় ভাই এবং ছোট ভাই ক্যাম্পাসে আসছে। মেয়েটা সবার নম্বর ব্লক লিস্টে রেখেছে। আমি ওদের কাছে যেয়ে আমার ফোন থেকে ফোন দেই। কথা না বলেই আমাকে ব্লক করে দিল! মা ও পরিবার সুদূর গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা এসেও ব্যার্থ হয়ে বাসায় চলে যায়।
আমি আর ফিরোজ ওনাদেরকে গাড়িতে তুলে দেই। রোববার ফিরোজ আবার ক্যাম্পাসে আসে। আমরা সারাদিন একসঙ্গে ছিলাম, রাত ২ টা পর্যন্ত মুহসীন হলের ছাদে আড্ডা দিয়েছি। অনেক আলাপ করেছি। অনেক বুঝিয়েছি।
ফিরোজের কষ্টের জায়গাটা হলো, বাসায় যেয়ে ফিরোজের মা ওই মেয়েকে ফোন দিয়েছিল অন্য নম্বর দিয়ে। রিসিভ করার পর ফিরোজের মায়ের পরিচয় জানার সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে ব্লক দেয়। অথচ অনেক আগের ভিডিওতে দেখেছি ওর মার সাথে কত মুহাব্বতের সাথে কথা বলেছে। ওর নানার খুঁজ খবর নেওয়ার পর ওর বাবার কথা জিজ্ঞেস করার সময় বলেছিল, ‘আর আমার বাবা কেমন আছে?’ সেই মেয়ে কিভাবে এত অপমান করতে পারলো?
বিজ্ঞাপন
ফিরোজ ওর মাকে কথা দিয়ে এসেছিল ওই মেয়ের জন্য নিজের ক্ষতি করবে না। সেই কথা রাখতে পারেনি। কতভাবে, কতজনের মাধ্যমে ওই মেয়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। একটু দেখা করার জন্য সারারাত বঙ্গমাতা হলের সামনে দাড়িয়ে থাকতো। ওই মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল, ওদের প্রেম ভালোবাসা দেখে বেস্ট কাপল মনে হতো। আহা! ওদের প্রেম, বিয়ে। ফিরোজের মা আমাকে ওদের বাড়ি যেতে বলতো, আজ যাচ্ছি। তবে ফিরোজের লাশ নিয়ে।’
তাছাড়া কাজী ফিরোজ নিজ টেবিলে খুঁজে পাওয়া তারই নামে একটি নোট প্যাডে লেখাতেও আত্মহত্যা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। প্যাডের ওপরে মঙ্গলবারের তারিখ (১৯/০৯/২০২৩) উল্লেখ করে লেখা ছিল, ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে যেহেতু আমার সম্মান নেই, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোন অধিকার নেই। আমার মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। স্যরি মা। বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ। ফিরোজ- রাত:১২টা ৩’
লেখার দ্বিতীয় অংশে ছিল, আমার ওয়ালেটের কার্ডে কিছু টাকা আছে। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইলো মায়ের হাতে দিতে। কার্ডের পাসওয়ার্ড ‘****'। আমার ফোনের লক খুলে দিয়ে গেলাম। আমার লাশের পোস্টমর্টেম না করে যেন বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনোরূপ আইনি ঝামেলা কাউকে যেন জড়ানো না হয়। সবাই বাঁচুক। শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না। ফিরোজ ; রাত:১১টা ৫’।
তবে ফিরোজের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে আসা তার বড় ভাই জানিয়েছেন, তার এবং ফিরোজের লেখা প্রায় একই। খাতায় থাকা এই লেখাটা ফিরোজের হাতের লেখা নয়। এরপর তারা ফিরোজের মরদেহের সুরতহাল করার সিদ্ধান্ত নেন।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল বলেন, তার পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। তবে রিপোর্ট পেতে আরো দুই-তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে। তাহলেই জানা যাবে এটা আত্মহত্যা নাকি দূর্ঘটনা। তার পরিবারের সাথে আমার কথা হয়েছে। তারা এই বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন আমাকে। পরবর্তী তার বড় ভাই শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য বুধবার রাত একটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল থেকে পড়ে মারা যায় এক শিক্ষার্থী। পরে জানা যায়, ওই শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে আবাসিক ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কালচার ডিপার্টমেন্টের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
প্রতিনিধি/একেবি

