শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

ছাড়ে কিনতে দুই ঘণ্টা আগে থেকে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৩, ০৪:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

ছাড়ে কিনতে দুই ঘণ্টা আগে থেকে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন
ছবি: ঢাকা মেইল

বাংলাদেশে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে গ্রামীণ ইউনিক্লো। আর এরপর থেকেই বিপুল ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। আর একটু কম মূল্যে ছাড়ের সেই পণ্য পেতে  প্রতিষ্ঠানটির শোরুম খোলার কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে থেকে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা। সকাল ১০টা থেকে শোরুম খোলার কথা থাকলেও ৮টা থেকেই লম্বা লাইন দেখা যায়।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সরেজমিনে বাড্ডা লিঙ্ক রোডে এই দৃশ্য দেখা যায়।


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, গত ১১ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায় গ্রামীণ ইউনিক্লোর ১০টি স্টোর আগামী ১৮ জুন থেকে বন্ধ ঘোষণা এবং ব্যবসা বন্ধের কথা জানায়। সেই সাথে বিভিন্ন পণ্যে ছাড় দেওয়া হয়। ৫০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বিভিন্ন পোশাকে ছাড় দেয়। এতে করে রোজার ঈদের সময় বিক্রি হওয়া একটি মেয়েদের পোশাক ৩৩ শত টাকা সেটি বিক্রি হয় ১৭৫০ টাকায়।  এছাড়াও ২৩০০ টাকার পণ্য নেমে আসে ১ হাজার বা ১২শ টাকায়। ১৮ শত থেকে ২ হাজার টাকার ছেলেদের প্যান্ট ৫৯০ টাকায় বিক্রি হয়। ক্রেতাদের চাপও বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

পণ্যের স্টক ফুরিয়ে যাওয়া এবং অতিরিক্ত ক্রেতার চাপ সামলাতে না পেরে গত ১৮ মে সাময়িক বন্ধও করা হয় সকল শোরুম। সেই সাথে আবার ফিরে আসবে সেটিও জানানো হয়। পরে গুদাম থেকে মালামাল এনে সেই সাময়িক বন্ধ থেকে আবার ক্রেতাদের জন্য ফিরেছে গ্রামীণ ইউনিক্লো। তবে মাত্র ৬টি শোরুম চালু করা হয়। এর মধ্যে ২৪ মে ঢাকায় দুটি এবং নারায়ণগঞ্জের একটিসহ মোট তিনটি শোরুম চালু করেন। বাকি তিনটি আজ (২৫ মে) চালু করা হয়। বর্তমানে ঢাকায় ৪টি এবং নরসিংদীতে একটিসহ ৫টি শোরুম চালু আছে। আর নারায়ণগঞ্জের শোরুম গতকালই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

dm

ঢাকার শোরুমগুলোর সামনে ক্রেতাদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। এরমধ্যে মিরপুর ১২, সায়েন্সল্যাব, বাড্ডা লিঙ্ক রোডের শোরুম ১০টায় খোলা হয় বিক্রি হয় ১টা পর্যন্ত। আর যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত শোরুম সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিক্রি হয়।


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে লিঙ্ক রোড আর যমুনায় ঘুরে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। অনেকেই অপেক্ষা করছিলেন প্রবেশ করতে। এখানে শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সিরিয়াল টোকেন দেওয়া হয়। একসাথে তিনশ মানুষের টোকেন দিয়ে দেন যারা প্রবেশ করতে অপেক্ষা করেন। শোরুমে ৪০-৫০ জনকে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয় এরপর থেকে ১০-১৫ জন বের হলে অপেক্ষায় থাকা সিরিয়াল থেকে ১০-১৫ জন করে প্রবেশ করানো হয়। প্রত্যেকেই কেনাকাটা করে শপিংব্যাগ ভরে বের হতে দেখা যায়।

লিঙ্ক রোডে কেনাকাটা করেন শফিকুর রহমান। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, স্ত্রীকে ঈদে ৩২শ টাকায় যে জামা কিনে দিয়েছি সেটি এখন ৭৯০ টাকা। সব পণ্যেই ৫০ শতাংশের বেশি ছাড় তাই এতো ভিড়।

কি কি কেনাকাটা করলেন জানতে চাইলে বলেন, আমার দুটি প্যান্ট, দুটি টি শার্ট আর স্ত্রী কয়েকটি জামা।

কেউ দুই ব্যাগ কেউ তিন বা আরও বেশি ব্যাগ হাতে শোরুম থেকে বের হতে দেখা যায়। একজন নারী ক্রেতা চারটে ব্যাগ হাতে বের হন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পরিবারের সবার জন্য দুটি বা তিনটি করে কিনেছি। ১৫ হাজার টাকার কেনাকাটা করেছি যা অন্য সময় করলে হয়তো ৩০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাগতো। যেহেতু কাপড় ঘরে রাখলে নষ্ট হবে না তাই কিনে রাখছি।

লিঙ্ক রোডে শোরুমে অপেক্ষায় থাকা জান্নাতুল বলেন, আমি খিলক্ষেত থেকে এসে সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়িয়ে সিরিয়াল ৪৪ নাম্বার। ১০টায় খুললেও আগে প্রবেশ করতে না পারলে অনেক কিছু পাওয়া যায় না বা জামার সাইজ মেলে না।

একই স্থানে রোদে অপেক্ষা করছিলেন শাহাদাত হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, সাড়ে ৯টা এসে দেখি লম্বা লাইন আমার সিরিয়াল ২৬৫। যাদের বিশের মধ্যে তারা অনেকেই নাকি ৮টারও আগে এসেছেন শুনলাম। লাইনে থাকা অনেকেই শঙ্কায় থাকেন নির্দিষ্ট সময়ে প্রবেশ করতে পারবেন কিনা বা প্রবেশাধিকার পেলেও পণ্য মিলবে কিনা সেটি নিয়েও। তবে আশায় তারা লাইনে আছেন।

dm

এদিকে, যমুনা ফিউচার পার্কে সকাল সাড়ে ১০টায় দেখা যায় দুইভাবে লাইন হয়েছে। ৩০০ টোকেন যারা পেয়েছেন তারা অপেক্ষা করছেন প্রবেশ করতে আর যারা পাননি তারা টোকেন নিতে অপেক্ষা করছেন। সাড়ে ১১টায় খোলা হয় শোরুম।

কেনাকাটা শেষ করে বের হওয়া একজন বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত একজন ক্রেতা জানান, ব্যাংকে বলেছি একটু দেরি হবে। অনেক আগে এসে এই সিরিয়ালে ছিলাম। ভালো পণ্য বেশ কমে পাওয়া যাচ্ছে। তবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের পোশাকের পরিমাণ কম বলে জানান তিনি।

পরিবারের ৪ সদস্য নিয়ে প্রবেশ করা শহিদুল ইসলাম বলেন, সবাই কিনতে পেরেছি তবে আমাদের ছেলেদের অনেক প্যান্টের নির্দিষ্ট কয়েকটি সাইজ। শার্টের ক্ষেত্রে ছোটই বেশি, মিডিয়াম বা লার্জ সাইজ কম।

মুন্নি আক্তার নামে একজন বলেন, আগের ছাড়ের সময় দুটি কিনেছিলাম। আজও ৮ হাজার টাকায় কয়েকটা ড্রেস কিনেছি। সময় নিয়ে পরতে পারব। আমার বোনকে কিছু দেব।

গ্রামীণ ইউনিক্লোর বিপণন বিভাগের প্রধান শরিফুল ইসলাম এর আগে জানিয়েছেন পণ্য শেষ হলে বিক্রয়কেন্দ্রগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া কথা। প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, পণ্য থাকা অবস্থায় চালু থাকবে শোরুম। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৮ জুনের পর গ্রামীণ ইউনিক্লোর বিক্রয়কেন্দ্রগুলো আর খোলা হবে না।

ডব্লিউএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর