রমজানের বাকি আর এক দুই দিন। ইতোমধ্যে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে বেড়েছে ফলের চাহিদা। অনেকে রমজানের জন্য আগাম কেনাকাটা সারছেন। এতে প্রভাব পড়েছে ফলের বাজারে। বেশিরভাগ ফলের দাম বেড়েছে। তবে পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে বিশাল তফাত।
দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ফলের বাজার রজধানীর পুরান ঢাকার বাদামতলী। এখানে ফল স্বাভাবিক দামে বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে বিক্রেতারা তাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। খুচরা বাজারের ক্রেতাদের দাবি, রমজান সামনে রেখে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ফলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
বাদামতলীর আড়তদাররা জানান, বাজারে দেশি ফলের চাহিদা বেশি না থাকলেও আমদানি করা ফলের কারণে কোনো ঘাটতি নেই। খুচরা বাজারে বিক্রেতারা প্রতিটি ফলেরই দাম কেজিতে ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের।
ফল ব্যবসায়ী সমিতি ও বাদামতলীর ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে, বাদামতলী ওয়াইজঘাটে প্রতিদিন প্রায় ১৮০ থেকে ২০০টি ট্রাক ও পিকআপভর্তি শুধু আমদানি করা ফল আসে। প্রতি ট্রাক ফল ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন আমদানি করা ফলই বিক্রি হয় তিন কোটি টাকার ওপরে। এছাড়া দেশি ফলের আড়তগুলোতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ফল বিক্রি হয় বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর বাদামতলী, ওয়াইজঘাট ও সদরঘাটের ফলের আড়ত ও পাইকারি দোকান ঘুরে দেখা যায়, সদরঘাট থেকে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার পাশে সারি সারি ফলের আড়ত। রাস্তার একপাশে কোথাও ট্রাক কিংবা পিকআপ থেকে ফলের কার্টন নামানো হচ্ছে। আবার কোথাও ট্রাক থেকেই ফল বিক্রি করা হচ্ছে ডাকে তোলে।
বিজ্ঞাপন
দেশি ফলের মধ্যে তরমুজ, পেয়ারা, পেঁপে, আনারস, আতা, কলাসহ নানা রকম মৌসুমি ফল বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা বিদেশি ফলের মধ্যে আপেল, কমলা, আঙুর, মালটা, নাশপাতি, আনার, খেজুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফল রয়েছে। তবে বাজারে দেশি আম না এলেও গত কয়েক দিনে থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে আমদানি করা আম পাইকারিসহ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তবে এ আমের প্রতি কেজির দাম ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। মাল্টা পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। এছাড়া পাইকারি বাজারে আপেল ১৩০, সবুজ আপেল ১৬০ টাকা, চায়না আপেল ১৪৫ টাকা, আঙ্গুর ১৭০ টাকা, লাল আঙ্গুর ৩০০ টাকা, নাশপাতি ১৫০ টাকা, বড় দানার আনার ২২০ টাকা কেজি, ছোট দানার আনার ১৪০ টাকায় ক্রয় করলেও খুচরা বিক্রেতারা প্রত্যেকটি ফলের কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করছেন।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আপেল ১৮০ টাকা, সবুজ আপেল ২০০ টাকা, সবুজ আঙ্গুর ২৬০ টাকা, ছোট দানার আনার ২৫০ টাকা, নাশপাতি ২৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
পুরান ঢাকার বাদামতলীর ওয়াইজঘাটের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ফলের দাম কম থাকলেও খুচরা বাজারে রমজান ও গরমের অজুহাত দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। আমদানি করা ফলের মধ্যে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুর।

দেশি ফলের মধ্যে পাইকারি বাজারে প্রতিটি আনারস ১৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে ৩০ থেকে ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে সেগুলো। পেয়ারা প্রতিকেজি ৩০ টাকায় কিনে ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বাজারে।
দেশি ফলের মধ্যে ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে তরমুজ। পাইকারি বাজারে প্রতি পিস (মাঝারি আকার) তরমুজ সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে এ তরমুজ কোথাও কোথাও ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, তরমুজ পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া তরমুজের সাইজ ছোট হওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া, ভেতরে সাদা থাকায় অনেক তরমুজ নষ্ট হওয়ার কারণে একটু বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। পিস হিসেবে কিনে কেজি হিসেবে বিক্রি করার কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন বাজারে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযান চালিয়ে তরমুজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও আদৌ কোনো সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
বাদামতলী ব্যবসায়ী সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ বিদেশি ফল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়। বাকি ৩০ শতাংশ আমদানি হয় বেনাপোল, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বুড়িমারী ও হিলির স্থলবন্দর দিয়ে। এসব স্থান দিয়ে ফল আমদানি করার সময় তিন ধাপে ফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তা বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেয় সরকার। আর ফলে মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিন বা ক্ষতিকর কোনো কিছু থাকলে বাজারজাতে অনুমতি দেওয়া হয় না।

বাদামতলির পাইকারি ফল বিক্রেতা মোস্তাক হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে প্রচুর ফল আমদানি করা হয়েছে। এমনকি বিক্রিও বেড়েছে। আমাদের থেকে কম দামে কিনলে খুচরা বাজারে কম দামে বিক্রি করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।’
মেসার্স ভাই ভাই ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘রমজানকে সামনে রেখে আমরা দেশি-বিদেশি ফলসহ সবধরনের ফল ভালো বিক্রি করতে পারি। বর্তমানে মাল্টা, কমলা, আনার, পেয়ারা, কুলের চাহিদা বেশি। এই মৌসুমে কমলার চাহিদা সবচেয়ে বেশি, তাই কমলার সর্বোচ্চ জোগান রয়েছে। কিছু কিছু ফলের ক্ষেত্রে কাস্টমাররা দেশি ফলের প্রতি বেশি চাহিদা দেখায়।’
এই আড়তদার বলেন, ‘আমাদের হিমাগার সংকটের কারণে মাঝে মাঝে অনেক ফল নষ্ট হয়ে যায়। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে ক্রেতারা কম দামে ভালো জিনিস পাবে।’
টিএ/জেবি

