সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ঈদের আগে বাড়তি দাম মসলার, বেড়েছে মাংসেরও

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

ঈদের আগে বাড়তি দাম মসলার, বেড়েছে মাংসেরও

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর আগামী ২২ বা ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। প্রিয়জনের সাথে ঈদ আনন্দ করতে লাখ লাখ মানুষ যাচ্ছে বাড়ি। ইতোমধ্যেই অনেকেই করছেন ঈদের কেনাকাটা। ঈদে বাসাবাড়িতে নতুন নতুন খাবার রান্না করা হয়। এজন্য বেশ চাহিদা থাকে মসলা পণ্যে। ইতোমধ্যেই ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বেড়ে গেছে বিভিন্ন মসলার দাম। ঈদের চাঁদ উঠার আগেই মাংসের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। গরুর মাংসের দাম কেজি প্রতি বাড়ানো হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির দামও বাড়িয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

মসলার বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদে চাহিদা থাকে বেশি এটা ঠিক তবে দাম বাড়ার কারণ তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আর ক্রেতাদের মতে, ঈদের আগে সব সময় মসলার দাম বিনা কারণে বেড়ে যায়।


বিজ্ঞাপন


গত দুই দিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাড়তি দামে মসলা বিক্রির দৃশ্য। ক্রেতারাও অনেকেই বাড়তি দামের কারণ জানতে চাইছেন ব্যবসায়ীদের কাছে। বাজারে দেখা যায় এলাচ, জিরা, রসুন, ধনিয়ার দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। কারওয়ান বাজারের পাইকারি ও খুচরো মসলার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বড় এলাচ প্রতি কেজি ১৬০০-২৬০০ টাকা, মাঝারি এলাচ ১৪০০-১৫০০ টাকা, ছোট এলাচ ১২০০-১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বুধ ও বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৩০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হয়েছে ৬৩০ থেকে ৬৫০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে কমপক্ষে ৭০ টাকা। দুই মাস আগেও জিরার দাম ছিল ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য মসলার মধ্যে লবঙ্গ ১৩৫০-১৫০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ৯০০-১০০০ টাকা, কালো গোলমরিচ ৬২০-৭২০ টাকা, দারুচিনি ৩৮০-৫৫০ টাকা, ধনিয়া ১২০-১৭০ টাকা, মেথি ৩৫০-৪০০ টাকা, তেজপাতা ১৫০-২০০ টাকা, মিষ্টি জিরা ৪০০-৫০০ টাকা, কালিজিরা ৫৫০-৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মসলা গড়ে ১০-১০০ টাকা বা কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি কেজি প্রতি বেড়েছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে।

কারওয়ান বাজারে মসলা কিনতে এসে অনেকটাই দাম শুনে ক্রেতা বার বার জানতে চান গত সপ্তাহের চেয় এতো দাম বেশি কেন? আজিজুল ইসলাম জিরা এবং এলাচ কেনা নিয়ে অনেকটাই তর্কই করলেন ব্যবসায়ীর সাথে। বিক্রেতার সাফ জবাব, ‘নিলে নেন নয়তো অন্য দোকান দেখেন।’

আজিজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে বলেন, এলাচ গত সপ্তাহে কম করে কিনেছি এখন কেজিতে ১০০ টাকার বেশি এটা ভাবা যায়! জিরা ৮০ টাকা বেশি কেজিতে। সব দোকানেই একইরকম দাম চাচ্ছে হয় ১০-১৫ এদিক সেদিক। এতো বেশি দাম সপ্তাহের ব্যবধানে মানাই যায় না।


বিজ্ঞাপন


রবিউল হাসান একজন ব্যাংকার। পঞ্চগড়ে বাড়ি কিন্তু ঈদে বাড়ি যাবেন না। ছোট বাচ্চা হওয়ার কারণে গরম আর যাত্রাপথের ভোগান্তিতে শিশুর সমস্যা হতে পারে এজন্য ঈদ ঢাকায় করবেন। ঈদের ছুটিতে বেশ ফাঁকা রাস্তায় আসেন বাজার করতে। বাজারের দাম শুনে সেও হতবাক।

রবিউল বলেন, গরুর মাংস ৭৮০ টাকা দিয়ে কিনেছি ৪০ টাকা কেজিতে বেশি নিয়েছে। মসলা কিনেছি সেখানেও বেশি দাম। না কিনেও উপায় নেই। হয়তো চলে গেলাম আবার এসে যদি বাড়তি দামেই কিনতে হয় তার চেয়ে কিনে বাসায় ফেরাই ভালো।

কারওয়ান বাজারের মসলা বিক্রেতা সুমন মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, আসলে অনেক বিক্রেতারা বাড়তি দাম কেন বার বার জানতে চায়। আমরাওতো বেশি দামেই কিনে আনতেছি। বাধ্য হয়ে একটু বেশি দামে বেচতে হচ্ছে। জিরার দাম নিয়ে বলেন, পাইকারি মহাজনরা কয় আমদানিতে খরচ বেশি তাই দাম বেশি।

পাইকারি একাধিক মসলা বিক্রেতারা জানান, জিরার দাম বেড়েছে এটা ঠিক। কারণ হিসেবে জিরা আমদানিতে ডিউটি ফি বাড়ানো হয়েছে জানান।

রাজধানীর হাতিরপুল বাজার, ফার্মগেট কাঁচাবাজারেও দেখা গেছে বাড়তি দামের দৃশ্য। ফার্মগেট কাঁচাবাজারে এসে এলাচের দাম শুনে অনেকটা বিরক্ত প্রকাশ করেন আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, মধ্য রোজায় যে এলাচ কিনেছি ১৮০০ টাকা কেজি সেই একই এলাচ দাম চায় ২১০০ টাকা। তিনশ টাকা বাড়তি। বাজারে বিভিন্ন আকারের এলাচ পাওয়া যায়। এরমধ্যে বড় এলাচ প্রতি কেজি ১৬০০-২৬০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি এলাচ আরেকটু কম অর্থাৎ ১৪০০-১৫০০ টাকা, ছোট এলাচ ১২০০-১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতাদের অবস্থা দাম শুনেই নাজেহাল। যারা এক সপ্তাহ আগে বাজার করেছেন তাদের সংসারের খরচে অনেকের হিসেব মেলে না।

এদিকে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ধনিয়া। দাম বেড়েছে পেঁয়াজেরও। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকা, আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ৭০-১০০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১২০-১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

ভ্যানে ঘুরে ঘুরে এলাকা মহল্লায় পেঁয়াজ বিক্রি করেন রব মিয়া। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে একেক পেঁয়াজ একেকরকম দাম। একটু শুকনা হলে একরম একটু ভেজা থাকলে দাম কম হয়। তবে দাম একটু বাড়ছে পেঁয়াজের বলেন তিনি।

হাতিরপুল কাঁচাবাজারের বাজার করতে গিয়ে এক ক্রেতা বলেন, আমাদের দেশে ঈদ একটা বড় উপলক্ষ্য। দাম বাড়তি হবে এর আর কি কারণ লাগবে বলেন? আমরা ক্রেতারা অনেকটাই ঠেকায় পরে কিনি। ঈদ আসছে কিনতে হবে, একটু ভালো-মন্দ রান্না হবে দাম যতই থাকুক আমাদের জোর করে হলেও কিনতে হয়। সবাই নানাভাবে ব্যবসা করছে মসলা ব্যবসায়ীরা বাদ যাবে কেন।
 
অবশ্য মসলার ব্যবসায়ীরা জানান ভিন্ন কথা। একাধিক বাজারের ব্যবসায়ীদের মতে, ঈদ আসলেই দাম বাড়ে এটা সব সময় হয় না। আবার ঈদের মতো এতো চাহিদাও সবসময় তৈরি হয় না। পাইকারি বাজার থেকে কেনার পর অল্প লাভেই বিক্রি করা হয় মত খুচরা ব্যবসায়ীদের।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি ঈদে মানুষ মাংস একটু বেশি খায়। যে কারণে মসলার চাহিদা অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি থাকে। চাহিদা বেশি মানেই দামও বাড়বে। অন্তত এ দেশে এটাই নিয়ম। অন্যকিছু নয়।

রাজধানীর মৌলভীবাজারের গরম মসলার পাইকারি ব্যবসায়ী রকিব উদ্দিন, মসলার সবচেয়ে চাহিদা থাকে কোরবানির সময়। এছাড়াও রোজার ঈদেও বেশ চাহিদা থাকে। এবার রোজায় দাম বাড়েনি। স্বাভাবিক ছিল। বর্তমানে কিছুটা বাড়লেও বাড়তে পারে জিরাতে। কারণ হিসেবে বলেন, ভারতের কিছু জিরা আছে তবে কম রফতানি করছে। ইরান, তুরস্ক ও চায়না জিরা এখন উৎপাদন নেই। ফলে দেশের পাইকারি বাজারে জিরার দাম বেড়েছে খুচরায়ও প্রভাব পড়েছে। অন্যান্য সকল মসলা তুলনামূলক স্বাভাবিক আছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, ইতোমধ্যেই বেড়ে গেছে গরুর মাংসের দাম। কোনো কোনো স্থানে মুরগির দামেও বাড়তি। মালিবাগ বাজারে একাধিক ক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহের সাড়ে ৭শ ধরে বিক্রি মাংস ৮শ করে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রাবাদ কাঁচাবাজার এলাকায়ও দেখা যায় ৭৫০ টাকা ধরে বিক্রি হওয়া মাংস কোনো দোকানে ৭৮০ কোনো দোকানে ৮০০ ধরে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবাদ, পশ্চিম রাজাবাজার এলাকাসহ রাজধানীর অনেক বাজারে ২৪০-২৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। অথচ মঙ্গলবার ও বুধবার বিক্রি হয়েছে ২০০-২২০ টাকা কেজিতে। ব্রয়লার মুরগির দেখাদেখি কেজি প্রতি লেয়ার মুরগির দামও বেড়েছে ৩০ টাকা। 

ডব্লিউএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর